সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

মানবাধিকারকর্মীর দৃষ্টিতে কতটুকু আধুনিক হলো সৌদি আরব

  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪

ঢেলে সাজানো হচ্ছে সৌদি আরবকে। ২০১৬ সালে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনা সহ দেশটিকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশটির নারীরা ড্রাইভিং ও চাকরি করার অনুমতি পেয়েছেন, যা আগে নিষিদ্ধ ছিল। আর বৈশ্বিক পর্যটনকে আকৃষ্ট করার জন্য নিওম শহরের মতো গিগাপ্রজেক্টে বিনিয়োগ করছে দেশটি।

এত কিছুর পরও দেশটিতে অবস্থান করা নাগরিকেরা একটি ভিন্ন গল্প উপস্থাপন করে বলে দাবি করা হয়েছে দ্য গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে। বলা হয়েছে, উন্নয়নের বিপরীতে হাজার হাজার সৌদি নাগরিক রাষ্ট্র কর্তৃক নির্বিচার এবং অন্যায় নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে কথা বলাই তাঁদের অপরাধ।

নিবন্ধটির লেখক লিনা আল-হাথলুল সৌদি আরবে অবস্থান করা তাঁর বোনের প্রসঙ্গ টানেন। তাঁর বোন লুজাইন আল-হাথলুল হলেন একজন বিশিষ্ট সৌদি নারী অধিকারকর্মী। তিনি নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন এবং ‘পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা’ বিলুপ্ত করার অক্লান্তভাবে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

লুজাইনের সাহসী এবং স্পষ্টবাদী কর্মকাণ্ড সৌদি কর্তৃপক্ষের দ্বারা দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চে তাঁকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং জোর করে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে একটি অবৈধ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অধীনে রাখা হয় এবং দেশ ত্যাগে নিষেধ করা হয়। কয়েক মাস পর তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়। লুজাইনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোতে স্পষ্টভাবে তাঁর মানবাধিকার বিষয়ক কাজগুলোর কথা উল্লেখ ছিল। একটি বিশেষায়িত ফৌজদারি আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে তাঁর বিচার করা হয়েছিল। এই আইনটিকে নিয়মিতভাবে দেশটির সুশীল সমাজকে নিয়ন্ত্রণের একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

লুজাইনকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশ ত্যাগ না করা সহ কঠোর শর্তে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর তাঁর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে বলে দেওয়া হয়—তিনি কোনো মেয়াদের অধীন নন, স্থায়ী ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করতেও অস্বীকার করেছিল কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—লুজাইনের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ওপরও একই নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছিল।

নিবন্ধের লেখক লিনা আল-হাথলুল ব্রাসেলসে থাকেন। ৬ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যকে দেখেননি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে আছে কি-না সেই খোঁজ নিতে হয়। সৌদি আরবে যাওয়ারও উপায় নেই তাঁর। তিনি লিখেছেন, ‘আমি তাদের মিস করি আর ভাবি, যদি আমিও সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পেতাম। কিন্তু আমি জানি, সৌদি আরবে ফিরে গেলে আমিও সেখানে আটকে যাব।’

নিজের পরিবারের গল্পটিকে হাজারো গল্পের একটি হিসেবে উল্লেখ করেছেন লিনা। জানিয়েছেন মরিয়ম আল-ওতাইবি নামে আরেক সাহসী নারী অধিকার কর্মীও কারাবরণ ও নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৯ সালে তাঁকেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অধীনে আনা হয়। সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তাঁর চিকিৎসার নিন্দা করেছিলেন। পরে পুলিশ তাঁকে ডেকে পাঠায় এবং তাঁর এখতিয়ারের বাইরে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তাঁকে চার মাসের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ রিয়াল জরিমানা করা হয়।

সৌদি আরবে এ ধরনের পরিস্থিতিকে একটি পদ্ধতিগত সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন লিনা। বাহ্যিকভাবে দেশটি প্রগতিশীল হয়ে উঠছে এমন মনে হলেও এর ভেতরে গলদ রয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

লিনা মনে করেন, শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, নিজ দেশের জনগণের অধিকার নিয়ে ভাবারও সময় এসেছে এখন সৌদি আরবের।

নিবন্ধটির লেখক লিনা আল-হাথলুল একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং এবং অ্যাডভোকেসির প্রধান। ‘লুজাইন ড্রিমস অব সানফ্লাওয়ার্স’ নামে তিনি একটি বইও লিখেছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com