বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

মাউইয়ের পর্যটনখাত ঘিরে ক্ষোভ বাড়ছে

  • আপডেট সময় সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপের কিছু সৈকতে পর্যটকদের সাঁতার কাটতে এবং অলস সময় পার করতে দেখা গেছে, যা ‘অসঙ্গত’ ও ‘দৃষ্টিকটু’ বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। 

কেননা গত মঙ্গলবার এ দ্বীপে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ে; গত ১০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দাবানল এটি। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাউইর উপকূলীয় শহর লাহাইনা। বেঁচে যাওয়া বাসিন্দাদের অভিযোগ, দাবানল নিয়ে তাদের সতর্ক করেনি কর্তৃপক্ষ।

বাসিন্দারা সামাজিক মাধ্যমে পর্যটকদের আনন্দে সময় কাটানোর ভিডিও পোস্ট করেছেন। পর্যটকরা স্নোরকেলিং করছেন, অথচ এখানেই দাবানলে অন্তত ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং  মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। শহরের সাগরের তীরবর্তী ক্ষুদ্র অংশেই এ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৩০০ বাসিন্দা এখনও নিখোঁজ। তাদের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ বাসিন্দাদের অনেকে অন্যত্র গেছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। উনিশ শতকে হাওয়াইয়ের রাজধানী ছিল লাহাইনা। শহরটিতে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বসবাস করতেন। দাবানলের আগে শহরটির দোকানপাট ও রেস্তোরাঁগুলো ছিল পর্যটকে পূর্ণ।

মাউই দ্বীপে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা। উদ্ধার অভিযানের সময় আরও অনেক মরদেহ যে উদ্ধার হবে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত।

পর্যটকদের ভ্রমণ বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে হাওয়াইয়ের অভিনেতা জ্যাসন মোমোয়া বলেন, ‘আমাদের দরকার নিরাময়, শোক এবং সহ্য করার ক্ষমতা।’

কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীরা অবশ্য পর্যটকদের স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে। তবে তারা অতিরিক্ত পর্যটক আগমনের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন।

মাউইয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোর্ডের মতে, পর্যটন শিল্প এ দ্বীপের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এখানের মোট আয়ের ৮০ শতাংশ আসে এ খাত থেকে।

দাবানলের ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে বাসিন্দাদের। দ্বীপের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে কীভাবে বাসিন্দাদের তাৎক্ষণিক আবাসনের চাহিদা এবং সম্পত্তি রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তিত।

গভর্নর জশ গ্রিন সংবাদ সম্মেলনে কভিড-১৯ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, মহাকারীর কারণে দ্বীপের অর্থনীতি একই ধরনের ক্ষতিতে পড়েছিল। কারণ তখন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে দ্বীপে পর্যটকদের নিষিদ্ধ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে বাঁচতে হবে। চাকরি ছাড়া আপনি বাঁচতে পারবেন না, সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন না। এ অঞ্চলে পর্যটনে বিধিনিষেধ দেয়া হলে স্থানীয় অধিবাসীরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

হাওয়াইয়ের বিজনেস, ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টুরিজম বিভাগের মতে, দাবানলের পর উড়োজাহাজে যাত্রী সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮১ শতাংশ কমেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরো জানায়, ২০২২ সালে ২৯ লাখ পর্যটন মাউই ভ্রমণ করেন। তারা ৫ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন বা ৫৬৯ কোটি ডলার ব্যয় করেন।

হাওয়াই ট্যুরিজম অথরিটি এখন পর্যটকদের পশ্চিম মাউইয়ে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। দ্বীপের এ অংশ আগুনে সবচেয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে হোটেলগুলো আপাতত সব ধরনের বুকিং বাতিল করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কাহুলুই, ওয়েইলুকু, কিহেই, ওয়েইলিয়া ও মাকেনা হোটেল।

মাউইয়ের কাউন্টি মেয়র রিচার্ড বিসেন বলেন, মাউই বন্ধ হয়ে যায়নি। আমাদের অনেক অধিবাসী পর্যটনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

দক্ষিণ মাউয়ের ওয়েইলিয়া সৈকতের ফোর সিজন্স রিসোর্টের কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানের সব হোটেল স্বাভাবিকভাবে চলছে। তবে পুরো দ্বীপের সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আপাতত পর্যটকদের ভ্রমণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com