রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন

ভ্রমণের খরচ পুষিয়ে দিচ্ছে ইউটিউব

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

‘মজা কার লে মেরি জান, ফিরছে না হোগা জাওয়ান’, এটি হিন্দি গানের একটি লাইন। গীতিকার সমীরের লেখা গানের লাইনটির বাংলায় অর্থ দাঁড়ায়, ‘জীবন উপভোগ করে নাও, দ্বিতীয়বার যৌবন ফিরে আসবে না।’ ট্রাভেল টিউবার ও সাংবাদিক জিয়াউল হক এবং তাঁর স্ত্রী মেলিসা মিথিলা মারমা নিজেদের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিলেন সমীরের লাইনগুলো। চট্টগ্রামের ভ্রমণপিয়াসী এই দম্পতি জীবন উপভোগ করতে ঘুরছেন দেশে দেশে। ছোটবেলা থেকে বাউণ্ডুলে স্বভাবের এই দুজন আর কোথাও চাকরি করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে তাঁরা পুরোদস্তুর ভ্রমণ করবেন!

ভ্রমণসঙ্গী কন্যা
ইতিমধ্যে ২১টি দেশের পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন জিয়াউল-মিথিলা দম্পতি। এসব দেশে ১৫০ বার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের! এক দেশে তিনবার যাওয়ার উদাহরণও আছে। অসম্ভব বিনয়ী ও নিরহংকার এ দুজনের ভ্রমণসঙ্গী তাঁদের শিশুকন্যা মেলিনা।

আর চাকরি নয়
জিয়াউল-মিথিলা দম্পতি এখনো চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে চাকরি করছেন। ইউটিউব জগতে বিচরণ ও ভ্রমণক্ষুধা মেটাতে জিয়াউল চাকরি ছাড়ছেন, এই সিদ্ধান্ত একেবারে পাকাপোক্ত। বললেন, ‘এবার স্বাধীন ইউটিউবার হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য কাজ করব।’ মিথিলা যোগ করেন, ‘চাকরিতে অফিসে দশজনের দশ কথা শুনতে হয়। ইউটিউবার হিসেবে আমরা মুক্ত বিহঙ্গ।’

যেভাবে শুরু যাযাবর জীবন
মানুষ হিসেবে ছোটবেলা থেকেই বাউণ্ডুলে ছিলেন জিয়াউল। ছেলে রোজগারের টাকা সঞ্চয় না করে দেশ-বিদেশ ঘুরে টাকা নষ্ট করছে বলে মা-বাবার বিশেষ চিন্তা ছিল। শেষ বয়সে জিয়াউলের বাবা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁর বিষয়ে। জিয়াউলের বাউণ্ডুলে জীবন শুরু হয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে। সে বছর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে হঠাৎ ১৫ দিনের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই শুরু। তবে ১৯৯৫ সালে পড়ালেখার জন্য কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত পাগলামিটা সীমাবদ্ধ ছিল ভারতের মধ্যে। ২০০৪ সাল থেকে ভারত ছাড়িয়ে সে যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। প্রথমে থাইল্যান্ড, তারপর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ছাড়িয়ে লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, থাইল্যান্ড, হংকং ইত্যাদি শেষ করে সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র।

বাড়ির বড়রা একসময় ভাবতে শুরু করলেন, বিয়েশাদি করলে হয়তো জিয়াউলের ঘোরাফেরার এ অসুখ সেরে যাবে! কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। ২০১৪ সালের শেষ দিকে এসে তাঁর জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান মেলিসা মিথিলা মারমা। এরপর ভ্রমণের তালিকায় দেশের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১টি!

মিথিলাও জিয়াউলের মতো বাউণ্ডুলে স্বভাবের! শাড়ি, বাড়ি, গাড়ির স্বপ্ন ঝেড়ে ফেলে ঘুরতে ভালোবাসেন তিনি। চার পায়ের নিচেই যখন সরষে, তখন আর ঠেকায় কে? তবে এখন তিনজনের পরিবার বলে ভ্রমণের খরচও বেড়েছে অনেক। এটা বিবেচনায় রেখে অনেক সময় পরিকল্পনা করে কাজ চালাতে হয়।

দুবাইয়ের মরুভূমিতে জিয়াউল-মিথিলা দম্পতি

দুবাইয়ের মরুভূমিতে জিয়াউল-মিথিলা দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত

বিডি ট্রাভেলার্স
বিডি ট্রাভেলার্স নামে জিয়াউল-মিথিলা দম্পতির একটি ভ্রমণবিষয়ক চ্যানেল আছে ইউটিউবে। তাঁদের ভ্রমণ ভ্লগগুলো পোস্ট করা হয় এই চ্যানেলে। ইউটিউব চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ লাখ। বাউণ্ডুলেপনা করে জিয়াউল-মিথিলার এ জীবনে যা খরচ হয়েছে, ইউটিউব সেটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁরা ভ্লগিং শুরু করেন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। শখের বশে আপলোড করা ভিডিওগুলো দিন দিন যে এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, সেটা কেউই কল্পনা করেননি। বাংলাদেশে অনেক ট্রাভেল ভ্লগার আছেন। তাঁদের বেশির ভাগই সলো ট্রাভেলার। সে হিসেবে জিয়াউল-মিথিলাই একমাত্র বাংলাদেশি ফ্যামিলি ট্রাভেল ভ্লগার, যাঁরা বাংলা ভাষায় ভ্লগ করেন। ইতিমধ্যে তাঁরা ইউটিউবের পক্ষ থেকে ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড হিসেবে সিলভার প্লে বাটন পেয়েছেন।

এই দম্পতির একসঙ্গে ভ্রমণ শুরু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে, সিঙ্গাপুরে। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিথিলা নিজেদের ভ্রমণস্মৃতি ধরে রাখতে গিয়ে প্রথমে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড দেন। দেশে ফিরে দেখেন, ৫ হাজারের মতো মানুষ দেখেছেন সেই ভিডিও। সে ভিডিওর নিচে মানুষ উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্য করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর নিয়মিত ভিডিও আপলোড দিতে থাকেন তিনি। তাতে থাকত শুধু যন্ত্রসংগীত। পরপর চার-পাঁচটি ভিডিও আপলোড করেন।

তবে গুছিয়ে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন চট্টগ্রাম-আগরতলা-কলকাতা ভ্রমণের। সে ভিডিও দেখেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। এখন ইউটিউবিংটা পেশা হিসেবে নিচ্ছেন বলে জানান মিথিলা। এর সঙ্গে জিয়াউল যোগ করেন, এভাবে ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের ভালো সুযোগ আছে এখন। একজন ভালো ইউটিউবার মাসে অনেক টাকা আয় করতে পারেন।

বিদেশমুখী পর্যটক
দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জিয়াউল-মিথিলা দম্পতিরও যে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে, সেটা বোঝা গেল দীর্ঘ আলাপে। সমাজের নেতিবাচক মানসিকতা, থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ ও নিরাপত্তার অভাব, আকাশচুম্বী ব্যয়, পর্যটকদের জন্য আলাদা জোন না থাকা—মোটামুটি এগুলোকেই দায়ী করলেন পর্যটকদের বিদেশমুখী হওয়ার ক্ষেত্রে।

এত সব হিসাবের কচকচানি থেকে বেরিয়ে জানতে চাইলাম, কোন দেশে থিতু হবেন? জিয়াউল-মিথিলা দুজনই যা বললেন তার মূল কথা হলো, যে দেশ ভ্রমণপিয়াসীদের ধারণ করবে, দায়িত্ব নেবে এবং ভ্রমণবান্ধব, সে দেশেই থিতু হবেন তাঁরা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com