সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন

ভারতের টুরিস্ট ভিসা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪

গন্তব্য যখন ভারত সেখানে ভ্রমণপিপাসুদের দ্বিতীয়বার চিন্তা করার কোনো অবকাশ থাকে না। এলাকার দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম অবস্থানে থাকা এই দেশটি প্রাকৃতিক নিদর্শনের সবটুকুই যেন বক্ষে ধারণ করে আছে। করোনা মহামারিতে মুষরে পড়লেও পরের বছরেই পর্যটনখাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে তাজমহলের এই দেশ। বিশ্বের ২৫তম সর্বাধিক পরিদর্শনকারী দেশ হওয়ায় ভারতের টুরিস্ট ভিসা অনেক পরিব্রাজকদের অতি আকাঙ্ক্ষিত বস্তু।

২০২১ সালে বিশ্বের এই দ্বিতীয় জনবহুল দেশটির জিডিপি’র (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) পাঁচ দশমিক আট শতাংশ ছিল পর্যটনখাতের অবদান। গত এক বছর ধরে আবারো সরব হয়ে উঠেছে হাজারো ঐতিহাসিক স্থাপনার ধারক দেশটি। আজকের নিবন্ধের মাধ্যমে ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা লাভের সামগ্রিক দিক সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

ভারতের টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদনের নিয়ম

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

→ ভিসার আবেদনপত্রের সাদাকালো অথবা রঙ্গিন প্রিন্ট কপি

→ সর্বনিম্ন ছয় মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্টের ফটোকপি; সঙ্গে মূলকপিও নিতে হবে। পুরনো পাসপোর্ট থাকলে সেটাও লাগবে। অনেক সময় পুরনো পাসপোর্টের নাম্বার নতুন পাসপোর্টে থাকে না। সেক্ষেত্রে থানায় জিডি (জেনারেল ডায়রি) করে তার কপি জমা দিতে হবে। নতুবা ভিসার আবেদন জমা নেয়া হয় না।

→ ইঞ্চি পরিমাপে দুই বাই দুই সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে দুই কপি ছবি লাগবে। ছবির সাইজ সাধারণ পাসপোর্ট সাইজ থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়। (স্টুডিওতে ভারতীয় ভিসা সাইজ বললে ওরা প্রস্তুত করে দেবে)

→ অনলাইনে নিবন্ধনকৃত জন্মসনদ বা এনআইডি (ন্যাশনাল আইডি) কার্ড; যেটা দিয়ে পাসপোর্ট করা হয়েছিল সেটার ফটোকপি দিতে হবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে ভিসা বাতিল হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে।

→ ঠিকানা প্রমাণপত্র হিসেবে বর্তমান ঠিকানার সর্বোচ্চ ৩ মাস পুরনো গ্যাস/পানি/বিদ্যুৎ/টেলিফোন বিলের ফটোকপি। প্রিপেইড মিটার গ্রাহকগণ মিটার কার্ডের উভয় পাশের ফটোকপি দিয়ে কাজ চালাতে পারবেন।

→ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি আর চাকরিজীবী হলে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) লাগবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে পাসপোর্টে যদি স্টুডেন্ট হিসেবে করা হয়ে থাকে তবে আইডি কার্ড দিতে হবে। আর যদি প্রাইভেট সার্ভিস হিসেবে করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এনওসি দেয়াই উত্তম। ভিজিটিং কার্ড থাকলে সেটাও সংযুক্তি হিসেবে দেয়া যেতে পারে। এটা অতিরিক্ত নথি নয়; বরং ভিসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়াবে।

→ সর্বনিম্ন ১৫০ ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করতে হবে। এই এন্ডোর্সমেন্ট করতে হবে অবশ্যই ব্যাংক থেকে; কোনো মানি এক্সচেঞ্জার থেকে নয়। এন্ডোর্সমেন্ট করার পর ব্যাংক থেকে সরবরাহকৃত গ্রাহক কপিটির ফটোকপি দিতে হবে। এছাড়া প্রার্থীর নিজের বা বাবারব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে বিগত ছয়মাস ধরে অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থাকতে হবে।

→ ৮০০ টাকা ভিসা ফি দেয়ার রশিদের ফটোকপি|

অনলাইনে ভারতের টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন

টুরিস্ট ভিসার আবেদনের জন্য প্রথমে যেতে হবে ভারত সরকারের ইন্ডিয়ান ভিসা অনলাইন সাইটে। এখানে অনলাইন ভিসা অ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করে প্রতিটি ঘর পাসপোর্ট অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে। অধিকাংশ ভিসার আবেদন প্রত্যাখানের পেছনে এই আবেদনপত্র ভুলভাবে পূরণ করাই দায়ী।

অনলাইনে ভারতের টুরিস্ট ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আবেদনপত্র পূরণ করার সময় কিছু কাগজপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে।

এগুলো হলো- কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদি পাসপোর্ট, প্রার্থীর ভারতীয় ভিসা সাইজের ছবির সফট বা স্ক্যান কপি এবং ভারতে যাওয়ার পর যে হোটেলে ওঠা হবে তার ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার।

হাতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে বসতে হবে। সঠিকভাবে পূরণ করতে সর্বসাকূল্যে প্রায় এক ঘণ্টা সময় নিতে পারে।

আবেদন ফর্মের ইন্টার্ফেসটি আসার পর আবেদনকারীর পুরো নাম, বাবা-মায়ের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি সব নির্ভুলভাবে দিতে হবে। এরপর ভারতে কোনো পোর্ট দিয়ে যাওয়া হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। বেনাপোল দিয়ে গেলে নির্বাচন করতে হবে হরিদাশপুর পোর্ট। তামাবিল দিয়ে বের হলে বাছাই করতে হবে ডাউকি। চেংড়াবান্দাতে টিক দিতে হবে যদি বুড়িমারী রুট ব্যবহার করা হয়। দর্শনা পোর্টটি রেলপথের যাত্রীদের জন্য। আর ফুলবাড়ী পোর্টটি বাংলাবান্দা অতিক্রমকারী যাত্রীদের জন্য।

অনলাইন আবেদনপত্র পূরণে রেফারেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে এমন কারো নাম ও ফোন নাম্বার উল্লেখ করতে হবে, যার আবেদনকারীর সঙ্গে ভারত যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতে ভারতে কোনো সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশে আবেদনকারীর বাসায় যোগাযোগের নিশ্চয়তা থাকবে। আর ভারতের রেফারেন্স হিসেবে তো হোটেলের নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার তো থাকছেই। একদম শেষের দিকে হোটেলটি ভারতের কোন এলাকায় সেটিও উল্লেখ করতে হয়।

এবার আবেদনপত্রটি সফলভাবে সাবমিট হয়ে গেলে সেটার প্রিন্ট নিতে হবে। আবেদনপত্রের মোট দুই স্থানে স্বাক্ষর করতে হয়। একটি ছবির নিচে; আরেকটি একেবারে শেষ পৃষ্ঠায়। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যে স্বাক্ষরটি যেন পাসপোর্টে দেয়া আবেদনকারীর স্বাক্ষরের অনুরূপ হয়। প্রিন্ট করা আবেদনপত্রে একটি দুই বাই দুই ইঞ্চি ছবি আঠা দিয়ে লাগাতে হবে।

ভিসা প্রসেসিং ফি কীভাবে জমা দিবেন

এবার ভিসার প্রসেসিং ফি জমা দেয়ার পালা। আগে ভিসা ফি আইভ্যাকে (ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার) জমা দেয়া লাগতো, কিন্তু এখন সেটা অনলাইনেই দেয়া যায়। ৮০০ টাকা ভিসা প্রসেসিং ফির সঙ্গে ব্যাংক বা বিকাশ চার্জ দিতে হয়। অফলাইনে ফি দিতে হলে যে কোনো আইভ্যাকে বা তার আশেপাশে এই ফি জমা দেয়া যাবে।

ভিসার আবেদন কোথায় জমা দিতে হয়

এবার আবেদনপত্রটির সঙ্গে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে চলে যেতে হবে। ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ভিড় খুব একটা নতুন ব্যাপার নয়। তাই তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার জন্য সকাল সকাল যাওয়াটাই উত্তম। আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা যে বিভাগে তাকে সেই বিভাগের ভারতীয় আবেদন সেন্টারে ভিসা আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

ভিসার আবেদনের জন্য এখন দেশের কোথাও আর ই-টোকেন লাগে না। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত যে কোনো দিনে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে যেকোনো সময় আবেদন জমা দেয়া যায়।

বাংলাদেশের ভারতীয় সেন্টারগুলো হচ্ছে- ঢাকা (যমুনা ফিউচার পার্ক), চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর, ও নোয়াখালী।

ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা পেতে কত দিন সময় লাগে

রাজধানীতে ভিসা ডেলিভারি পেতে প্রায় তিন থেকে সাত দিন সময় লাগে। ঢাকার বাইরে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই ভিসা হাতে পাওয়া যায়। আবেদনের পর ইন্ডিয়ান ভিসা অনলাইন সাইট থেকেই ভিসা আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে। ভারতীয় অ্যাম্বেসিতে কাগজপত্র জমা দেয়ার পর একটা টোকেন দেয়া হবে।

পরবর্তীতে এই টোকেনটি দেখিয়ে পাসপোর্ট ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসা নেয়ার জন্য আবেদনকারীকেই সশরীরে যেতে হবে। যদি কোনো কারণে তিনি না যেতে পারেন তবে তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ যেতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তার হাতে আবেদনকারীর স্বাক্ষর দেয়া একটি মনোনয়নপত্র দিতে হবে, যেখানে আবেদনকারীর উপস্থিত হতে না পারার কারণসহ উক্ত ব্যক্তিকে ভিসা সংগ্রহের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়ার কথা উল্লেখ থাকবে।

পরিশেষে 

সবশেষে, ভারতের টুরিস্ট ভিসা আবেদন জমা দেয়ার মুহূর্তে ভারতীয় অ্যাম্বেসীর ভেতরে কোনো ব্যাগ নিতে দেয়া হয় না। তাই শুধু কাগজপত্রগুলো একটা স্বচ্ছ ফাইলে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। ভারতীয় টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ সাধারণত ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর থাকে। একাধিক ভিসার এই সময়ের মধ্যে ভিসাধারী যতবার ইচ্ছা ততবার ভারতে যেতে আসতে পারবেন।

ভারতে প্রবেশের সময় ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর দিতে হয়। এটা প্রয়োজনে আগে থেকেই সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া যেতে পারে। এতে করে ভারত প্রবেশের সময় আর সমস্যা হবে না। ভারতে প্রবেশের মুহূর্তে ইমিগ্রেশন পুলিশ পর্যটকের কাছে অতিরিক্ত ডলার আছে কিনা তা চেক করতে পারে। পাসপোর্টে অ্যান্ডর্সকৃত ডলার অপেক্ষা বেশি ডলার পাওয়া গেলে ইমিগ্রেশনে ঝামেলা হয়। তাই বিশেষ করে মানিব্যাগে অতিরিক্ত ডলার না রাখাই শ্রেয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com