শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

ভবিষ্যতের ভাসমান শহর

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪

২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রসীমার উচ্চতা বেড়ে গিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ বসতি হারাবে। আশ্রয় হারানো মানুষের আবাসনের জন্য করা হচ্ছে ভাসমান শহরের পরিকল্পনা। লিখেছেন মুমিতুল মিম্মা

ভাসমান শহর ভেনিস

ভাসমান শহর বললেই মনে আসে ইতালির ভেনিস শহরের কথা। কীভাবে ভেনিসের জন্ম তা নিয়ে মজার একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। আনুমানিক ৪০২ খ্রিস্টাব্দে নতুন মানুষেরা এখানে বসতি স্থাপনের জন্য এসেছিল। নতুন বসতি নির্মাণের জন্য শক্তিশালী ভিত দরকার ছিল তাদের। বসতি বড় করার তাদের প্রয়োজন ছিল নতুন দ্বীপপুঞ্জের। সঙ্গে চেষ্টা ছিল কীভাবে এই বসতির নাজুকতা কমানো যায় তা নিয়ে। বসতি গড়ার জন্য খাল খনন করে খালের ধারগুলোতে কাঠের পাইলিং দিয়ে ভিত্তি স্থাপন করা হয়। মাটির ভেতর হাজার হাজার কাঠের পাইলিং গেঁথে স্থায়ীভাবে পাশাপাশি বসতি স্থাপন শুরু হয়। কাঠের পাইলগুলো যেহেতু পানির ভেতরে অবস্থান করে তাই কাঠ পচে যাওয়ার ভয় থাকে না।

অবাক হলেও সত্য এখনো এক হাজার বছরের পুরনো ভিতের ওপর ভেনিসের অনেক ভবন দাঁড়িয়ে আছে। ভেনিস এখন ভাসমান শহরের বদলে ডুবন্ত শহর বলেই বেশি পরিচিত। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ভেনিসের জন্মই নাকি হয়েছে ডুবে যাওয়ার জন্য। জন্মলগ্ন থেকেই শহরটি মাটির ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করেছে এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে। গত একশ বছরে শহরটি নয় ইঞ্চি ডুবে গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সাগরের পানির স্তর বৃদ্ধির ফলে এড্রিয়াটিক উপকূল ও ভেনিস প্লাবিত হয়ে ডুবে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। ভেনিস ছাড়াও চায়নার ওয়াহেন, জার্মানির লিন্ডাও, মায়ানমারের ইনল লেক, বেলজিয়ামের ব্রুজ, গুয়াতেমালার ফ্লোরেস, নেদারল্যান্ডসের গিঠন, মেক্সিকোর মেক্সিকাল্টিটান ভাসমান শহর হিসেবে জনপ্রিয়।

ওয়াহেন ওয়াটার টাউন, চায়না

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল খ্যাত সাংহাই, হানজোউ, সুঝৌ এই তিন বিখ্যাত সিটির কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াহেন প্রায় ১৩০০ বছরের পুরনো। ঐতিহ্যবাহী এই শহরে রয়েছে প্রাচীন ঘরবাড়ি, বার এবং মন্দির। এই শহরের আকৃতি নির্ধারিত হয়েছে মূলত খালের আকৃতি অনুযায়ী। যখন খালের পাশের বাতিগুলো জ্বালানো হয় তা এক মোহাচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রাচীন শহর হিসেবে ওয়াহেন ওয়াটার টাউন পর্যটক ও স্থানীয় চাইনিজদের কাছে ভীষণরকম শ্রদ্ধেয়। এই শহরটি চাইনিজ কৃষ্টিকে দুর্দান্তভাবে সংরক্ষিত রেখেছে। শহরটির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে এটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওয়াহেন তাই কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানই নয়, এটা চাইনিজদের নিজস্ব ইতিহাসকে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার মতো অতুলনীয়ও বটে।

লিন্ডাও, জার্মানি

জার্মানির ব্রেভারিয়ায় অবস্থিত এই দ্বীপটির চারধার জুড়ে আছে দারুণ এক বন্দর। খালের আঁকাবাঁকা পথে জড়াজড়ি করে থাকা এই শহরটি যে কাউকে স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দেবে। এখানে যে লাউটহাউজগুলো আছে সেটা প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এখানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ১৮৫৩ সালে নয়া লয়েস্ট্রাম লাইটহাউজ এবং ১৩শ শতকে স্থাপিত ম্যাংটার্ম লাইটহাউজ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পুরো শহরটাই পানির ওপরে ভাসছে। বন্দর পেরিয়ে আস্তে আস্তে যখন কেউ শহরে ঢুকবে সে দেখতে পাবে সুরম্য সব জার্মান দালান। লিন্ডাও শহরের কোবেলস্টোন স্ট্রিটে স্থানীয় বাজার বসে এবং সেখানে রাস্তার ধারে দামি দামি সব জার্মান খাবার পাওয়া যায়। দামি রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফের পাশাপাশি এখানে অদ্ভুত সব বাড়িঘরসহ প্রাচীন ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের দারুণ সব দৃশ্য চোখে পড়ে।

ইনল লেক, মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার ইনল লেক দেখলে যে কারও মনে হতে পারে পানির ওপরে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা একটি ভাসমান বাগান। এই শহরের ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে। স্থানীয় অধিবাসীরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নৌকা দিয়ে। স্থানীয় অধিবাসীরা ভাসমান স্থাপনাতেই চাষাবাদ করেন।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কোনো অমূলক আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা। গত পঞ্চাশ বছরে আগের সব ইতিহাস পেছনে ফেলে বিশ্বের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রিন হাউজ ইফেক্টে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে কার্বন নিঃসরণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রান্তীয় ঝড়গুলো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ফলে তৃতীয় মাত্রার ঝড়ের বদলে চতুর্থ মাত্রার ঝড়গুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন উত্তর আটলান্টিক হারিকেনগুলোর প্রকোপ ১৯৮০ সালের পর থেকে বেড়েই চলেছে। উষ্ণায়নের প্রভাব এতটাই স্পষ্ট যে, ২০০২ সাল থেকে এন্টার্কটিকা ১৩৪ বিলিয়ন মেট্রিক টন বরফ হারাচ্ছে প্রতি বছর। প্রাকৃতিক জ্বালানির অতি ব্যবহার আগামী ৫০ থেকে ১৫০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দেবে আশঙ্কাজনকভাবে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিণতি কেবল তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেই আটকে নেই। সামগ্রিকভাবে এটা দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তিআনতে যাচ্ছে মানুষের জন্য। ক্ষরাপ্রবণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানীয় জলের অভাবে পড়তে যাচ্ছি আমরা। সমুদ্রে পানির স্তর বৃদ্ধি প্লাবিত করবে উপকূলীয় সমস্ত অঞ্চলে; এর ফলে প্রচুর গাছপালা এবং পশুপাখির প্রজাতি পড়বে অস্তিত্বের সংকটে। নতুন নতুন পোকামাকড়ের আবির্ভাব ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেবে ভীষণভাবে। সামগ্রিক জলবায়ুর পরিবর্তন এবং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলা বায়ুদূষণ বাড়িয়ে দেবে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট এবং ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব, সঙ্গে সঙ্গে রোগজীবাণু এবং মশাবাহিত রোগের পরমাণও বাড়বে। উষ্ণায়নজনিত কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমাগতহারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সমুদ্রসীমার উচ্চতা। বিশেষজ্ঞদের হিসাবমতে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রসীমার উচ্চতা বেড়ে যাবে ০.৩ মিটার। এর ফলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা বসতি হারাবেন।

বাংলাদেশের ভোগান্তি

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলাফলের অনেকটাই আমাদের চোখে দৃশ্যমান হলেও, আরও বাজে পরিস্থিতি দেখার এখনো অনেকটাই বাকি। উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বব্যাংক প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ দেশের যে তালিকা করেছে তাদের অন্যতম হলো বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে জানা যায় বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি, পানীয় জলের সংকট তৈরি হবে, তীব্রভাবে সাইক্লোনের ঝুঁকি বাড়বে এবং ফসলের উৎপাদন কমে বাংলাদেশ পড়বে প্রচণ্ড সংকটের মুখে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা বেড়ে গেছে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিক ব্যাপ্তি থেকে বেড়ে ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণভাগ ইতিমধ্যে গত একশ বছরের ইতিহাস ছাড়িয়ে গেছে।

সামুদ্রিক পানির স্তর বৃদ্ধির প্রভাবে ২১০০ সালের মধ্যে প্রায় ১৩ মিলিয়ন বাংলাদেশি বসতি হারাবে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ১.৬ ডিগ্রি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এন্টার্কটিকার বরফ এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ স্তর গলে যাওয়ার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। সমুদ্রের পানির স্তর আরও ৫ মিটারের বেশি বেড়ে গেলেই আগামী শতকে সমগ্র বাংলাদেশ অস্তিত্বের সংকটে পড়তে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বন্যা এবং ক্ষরা প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির সংকটে বেড়েছে উপকূলীয় মানুষের ভোগান্তি।

জাতিসংঘের প্রস্তাবনা

মানববসতি সংক্রান্ত জাতিসংঘ প্রকল্প ইউএন-হ্যাবিট্যাট-এর সাম্প্রতিক এক বিশেষ আয়োজনে, বহুমুখী দক্ষতাসম্পন্ন উদ্ভাবকদের একটি দল ১০,০০০ পর্যন্ত অধিবাসী ধারণে সক্ষম বিশ্বের প্রথম স্বনির্ভর ভাসমান শহরের একটি ধারণা দিয়েছেন।

এতে যদি কারও মানসচক্ষে ভেসে ওঠে ‘দি জেটসনস’ কার্টুন এবং ‘ওয়াটার ওয়ার্ল্ড’ সিনেমার মিলিত দৃশ্যকল্প, আপনি তাহলে অনেকটাই কাছাকাছি ভাবছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতটের উচ্চতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই উপকূলীয় মানুষদের দুর্দশা নিরূপণকল্পে এই সম্মেলনে একত্রিত হয়েছিলেন একদল উদ্ভাবক, অভিযাত্রী, সমুদ্র প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, নিজস্ব খাদ্য, শক্তি, পানীয় জল উৎপাদনকারী ও বর্জ্যমুক্ত স্বনির্ভর ভাসমান জনবসতিগুলো কীভাবে এই ক্রমবর্ধমান জলবায়ুজনিত উদ্বেগ ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বসতি হারানো মানুষের সমস্যায় ভূমিকা রাখতে পারে তাই ছিল তাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য।

জাতিসংঘের অধীনস্ত ইউএন-হ্যাবিট্যাট-এর নির্বাহী পরিচালক মাইমুনা মোহাম্মদ শরীফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা জাতিসংঘের সেই সংস্থা যাদের কাজ শহর নিয়ে কাজ করা, হোক সেই শহর মাটি বা পানির ওপরে। এই বর্ধিষ্ণু খাত (ভাসমান শহর) যেন সব মানুষের উপকারে আসে তা নিয়ে আমরা সংলাপে বসতে প্রস্তুত।’

কেমন হবে ভাসমান শহর

এই কল্পিত ভাসমান শহরের পরিকল্পনা মিলিতভাবে প্রস্তাব করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান বিগ, অলাভজনক সংস্থা ওশনিক্স এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সমুদ্র প্রকৌশল কেন্দ্র। শহরটি হবে পরস্পর সংযুক্ত নোঙরবাঁধা কিছু ভাসমান প্লাটফর্মের সমষ্টি। সেখানে একই সঙ্গে বসবাসের জন্যে আবাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে স্থাপনা  তৈরি করা হবে। পাশাপাশি থাকবে চাষাবাদের সুবিধা এবং পরস্পরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করার জন্য জমায়েতের ব্যবস্থা। এছাড়াও প্রস্তুতকারকরা বলছেন, কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকার সঙ্গে যাতায়াতের সুবিধার্থে নানারকম   বৈদ্যুতিক বাহনের ব্যবস্থা থাকবে।

ওশানিক্স-এর বক্তব্যানুসারে, ধীরে ধীরে এই শহর  জৈবিকভাবে রূপান্তরিত হতে ও খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগবে। বসতিতে কতজন সদস্য রয়েছে সে অনুযায়ী প্রয়োজনমতো ৩০০ জন থেকে ১০০০০ মানুষের শহরে বিকশিত হতে পারবে। ৫ একর আয়তনের ৩৬টি ভাসমান বসতি ও অসংখ্য উৎপাদনশীল বসতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বৃদ্ধি পাওয়া বা সংকুচিত হওয়া সম্ভব। তারা আরও জানাচ্ছেন, এই শহরগুলো নিচের সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের সঙ্গে সমন্বয় করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, প্ল্যাটফর্মগুলোর ভিত্তি হিসেবে একপ্রকার ভাসমান প্রবাল বা জৈবপাথর ব্যবহার করা হবে। এই জৈবপাথরে সামুদ্রিক আগাছা, শামুক, ঝিনুক, গুগলি সংযুক্ত থাকবে, যাদের কাজ হবে আশপাশের পানিকে পরিষ্কার রাখা এবং বাস্তুসংসস্থান পুনর্গঠনকে ত্বরান্বিত করা।

ওশানিক্স-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক কলিন্স চেন জানিয়েছেন, “এটা কোনোভাবেই ‘আমাদের’ বা ‘ওদের’ জাতীয় কোনো বিষয় নয়। এই প্রযুক্তির একমাত্র উদ্দেশ্য সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানকে ব্যাহত না করে যেন আমরা পানির ওপরে বসবাস করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য এটা নিশ্চিত করা যে, এই স্বনির্ভর ভাসমান শহরগুলো যেন উপকূলীয় এলাকার প্রয়োজনের সময় সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী হয়। এগুলো কিছুতেই শুধুমাত্র ধনিক শ্রেণির সুবিধার্থে ব্যবহার্য হতে পারে না।”

ওশানিক্স সিটি প্লাবনরোধী ও সময়মতো সতর্কতা সাপেক্ষে বিশাল ঝড়কে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আবহাওয়ায় কোনো বড় রকমের পরিবর্তন লক্ষ করলে নোঙর তুলে গোটা শহরকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।

বিশ্বের প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে ২ জন বাস করে উপকূলের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এবং প্রতি ১০ জনে ১ জনের বাস উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রসীমার ১০ মিটার বা তার কাছাকাছি উচ্চতায়। এমনকি সমুদ্রসীমার উচ্চতা বৃদ্ধির সব থেকে রক্ষণশীল হিসাব মতেও ২০৪৫ সালের মধ্যে সমুদ্রসীমা ০.৩ মিটার বেড়ে যাবে, যাতে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ১৪০০০০ ঘরবাড়ি প্লাবিত হবে।

চ্যালেঞ্জ

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভাসমান এই বসতি কি সামুদ্রিক ঝড় মোকাবিলায় সক্ষম? এমআইটির সমুদ্র প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক নিকোলাস ম্যাক্রিস একটি গবেষণাধীন একটি কাঠামোর কথা তুলে ধরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু সেটা খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো কতগুলো মানুষের জন্য এই প্রকল্পটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে সে ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এই প্রযুক্তি ও প্রস্তাবনার পরবর্তী ধাপ এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। কাল্পনিক এই সামুদ্রিক প্রস্তাবনার ওপরে ভবিষ্যতের অনেকগুলো মানুষের ভাগ্য নির্ভর করছে। সমুদ্রের বুকে অবকাশ যাপনের মতো বিলাসবহুল হওয়ার পরিবর্তে অবশ্য প্রয়োজনীতার তালিকায় উঠে এসেছে। এই কমিউনিটিগুলোকে তাই স্বাধীন শহর হিসেবে দেখা হবে, নাকি কোনো দেশের অন্তর্ভুক্ত শহরের মতো করে দেখা হবে তা নিয়ে এখনো কেউ নিশ্চিত নয়। ভবিষ্যৎই বলে দেবে মানবজাতির টিকে থাকার লড়াইয়ে এই প্রযুক্তি কী সুফল বয়ে আনছে। কিন্তু হাজার বছরের মতো অস্তিত্বের লড়াইয়ে বরাবরের মতোই মানুষ এবারেও টিকে যাবে বলে সবার দৃঢ় বিশ্বাস।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com