শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বৈধ প্রক্রিয়ায় উত্তর সাইপ্রাসে যেমন আছেন বাংলাদেশিরা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

অভিবাসনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই পাড়ি জমান সাইপ্রাসে৷ তাদের অনেকেই প্রতারিত হন দালালদের হাতে৷ দক্ষিণ সাইপ্রাসে পুরনারা শরণার্থী ক্যাম্পে দেখা মিলল এমনই অনেক বাংলাদেশির৷

এদিকে তুরস্ক অধিকৃত উত্তর সাইপ্রাসেও রয়েছেন শত শত বাংলাদেশি৷ সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ডয়চে ভেলের সংবাদকর্মীদেরকে জানালেন কীভাবে বৈধ প্রক্রিয়ায় উত্তর সাইপ্রাসে আছেন তারা৷

বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান৷ ২০১৪ সালে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান উত্তর সাইপ্রাসে আর বর্তমানে তিনি সেখানকার গির্নে শহরে বাস করেন৷ উত্তর সাইপ্রাসের এই শহরটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আছেন বলে জানা গেছে৷ ভূমধ্যসাগর তীরের এই শহরটিতে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন৷

পড়াশোনার উদ্দেশ্যে সাইপ্রাসে পাড়ি দিলেও নানান জটিলতায় পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি হাসানুজ্জামান৷ গত ছয় বছর ধরে তিনি চাকরি করছেন আর বৈধভাবেই থাকছেন এখানে৷

হাসানুজ্জামান বলেন, ‘‘২০১৪ সাল থেকে উত্তর সাইপ্রাসে আছি৷ আসার দুই বছর পর ভিসা পরিবর্তন করে পরে আমি চাকরি শুরু করি৷ ছয় বছর চাকরি করার পর আমি এখন হোয়াইট (রেসিডেন্স পারমিট) পেপার পেয়েছি৷’’

হাসানুজ্জামানের সাথে কথা বলে জানা গেল, বৈধভাবে দেশটিতে চাকরি করে প্রতি মাসে বাংলাদেশি টাকায় মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব৷ তিনি জানান, পরিবার নিয়ে বর্তমানে উত্তর সাইপ্রাসে আছেন তিনি৷ নিজের উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশি এই অভিবাসী জানান, গড়ে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব তবে অনেকে আবার এর চেয়ে বেশিও আয় করছেন৷

তার আগে ডয়চে ভেলের দুই সাংবাদিক দক্ষিণ সাইপ্রাসের পুরনারা শরণার্থী ক্যাম্পে দেখা পায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির৷ শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা এই বাংলাদেশিরা জানান, লাখ লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ থেকে তারা উত্তর সাইপ্রাস হয়ে দক্ষিণ সাইপ্রাসে এসেছেন৷

তবে উত্তর সাইপ্রাসের বাংলাদেশি অভিবাসী হাসানুজ্জামেনর কাছে কেন বাংলাদেশিদের অনেকে দক্ষিণ সাইপ্রাসে যাওয়ার চেষ্টা করেন এই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বেশি টাকা রোজগারের লোভে পড়ে অনেকেই পাড়ি জমান দক্ষিণ সইপ্রাসে৷

এদিকে শুধু চাকরিজীবীই নন, উত্তর সাইপ্রাসে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এমন বাংলাদেশি অভিবাসীর সাথেও দেখা হয় ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের৷

১৩ বছর ধরে উত্তর সাইপ্রাসে আছেন বাংলাদেশি অভিবাসী সালেহ৷ এক যুগের বেশি সময় আগে পড়াশোনার উদ্দশ্যে উত্তর সাইপ্রাসে আসেন তিনি৷ তারপর সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ওবং মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে পিএইচডি করছেন তিনি৷ সালেহ জানান, খণ্ডকালীন চাকরি করে এখানে পড়াশোনার সময় নিজের খরচ চালানোর সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে৷

উত্তর সাইপ্রাসে বিদেশিদের পড়াশোনার বিষয়ে সালেহ জানান, সেখানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সুবিধাও রয়েছে৷ সালেহ জানান, তার স্ত্রীও এখানে বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ তার মতে এসকল সুযোগ-সুবিধার বিষগুলো খুঁজে বের করতে হবে৷

নতুনদের জন্য যে পরামর্শ 

ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের বেশ কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দালালদের হাতে প্রতারিত হয়ে অনেক বাংলাদেশি সাইপ্রাসে এসে অমনাবিক জীবন যাপন করছেন৷ তাদের দাবি, দালালরা সাইপ্রাস যে ধরনের সুযোগ বা সুবিধার কথা বলেছিল তার সবই মিথ্যা৷ লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয় নিয়েছে দালালচক্র৷

উত্তর সাইপ্রাসে থাকা বাংলাদেশিরা অবশ্য এ বিষয়ে সবাইকে প্রথম থেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন৷

সালেহ বলেন, নতুন কেউ আসতে চাইলে তাদেরকে পুরো ব্যাপারটি আগে থেকেই জেনে আসতে হবে৷ তাদেরকে বুঝতে হবে যে, উত্তর সাইপ্রাস তুরস্ক অধ্যুষিত একটি অঞ্চল এবং এখানকার মুদ্রার নাম লিরা৷

উত্তর সাইপ্রাসে পড়তে আসতে চাওয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তার পরমর্শ হলো, ভর্তির বিষয়ে যেকোনো ধরনের তথ্য যাচাইয়ের জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোাগাযোগ করা নিরাপদ৷

এদিকে শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, যারা উত্তর সাইপ্রাসে চাকরি নিয়ে আসতে চান তারা যেন দালালদের কাছে প্রতারিত না হন সেই পরামর্শও দিয়েছেন তারা৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশি অভিবাসী জাহিদ জানান, এখানে আসার পর কথা অনুযায়ী কাজ নেই এটা ঠিক নয়৷ কেউ যদি চাকরি নিয়ে এসে থাকেন এখানে আসার পর কোম্পানির মালিক তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা৷

চাকুরি নিয়ে আসা অভিবাসন-প্র্যত্যাশীদের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে আসার পরামর্শ দেন উত্তর সাইপ্রাসের বাংলাদেশিরা৷

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com