যাঁরা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন অথবা ভ্রমণে গিয়ে আয়েশ করে ঘুমাতে চান, তাঁদের জন্য পর্যটন খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও এটা নিয়ে আরও মনোযোগী হয়ে উঠেছে। বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান পার্ক হায়াত।
নিউইয়র্কে পার্ক হায়াতের যে হোটেল আছে, এক বছর আগে সেখানে পর্যটকদের ঘুমানোর জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করে ব্রাইট রেস্টোরেটিভ স্লিপ স্যুট নামে নতুন একটি শাখা খোলা হয়। প্রায় ৯০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল এ স্যুটে আরাম করে ঘুমানোর জন্য উপযোগী সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে রোজউড হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্ট নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঘুমাতে চান—এমন পর্যটকদের জন্য অ্যালকেমি অব স্লিপ নামে নতুন বেশ কয়েকটি শাখা খুলেছে। মূলত যেসব পর্যটক শুধুই ঘুমাতে চান, তাঁদের কথা ভেবেই বিশেষ বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠানটির।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তো রীতিমতো ঘুমকে কেন্দ্র করে হোটেল তৈরি করা হয়েছে। জেডওয়েল নামের এ হোটেলে আরাম করে ঘুমানোর সব রকম বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। হোটেলটির কক্ষগুলো এমন করে তৈরি সেখানে বাইরের কোনো শব্দই প্রবেশ করতে পারবে না। ২০২০ সালের শুরুতে এ হোটেলের যাত্রা শুরু। এদিকে সুইডেনের প্রতিষ্ঠান হ্যাস্টেন্স পর্তুগালের কোইমবার শহরে বিশ্বের প্রথম স্লিপ স্পা হোটেল গড়ে তুলেছে। হ্যাস্টেন্সের বিশেষ এই হোটেলে মোট ১৫টি বুটিক কক্ষ আছে।
মহামারির প্রভাব
তবে হঠাৎ করে পর্যটকদের কাছে ঘুরতে গিয়ে শুধু ঘুমিয়ে সময় কাটানোর এ বিষয়টি পছন্দের হয়ে ওঠেনি। কেন পর্যটনের এই বিশেষ ধরনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠল, তা পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেও প্রধান অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে উঠেছে।
ডা. রেবেকে রোবিনস ঘুম নিয়ে গবেষণা করেন। মানুষের সাফল্যের নেপথ্যে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ‘স্লিপ ফর সাকসেস’ নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি। তাঁর মতে, নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই এর চর্চা চলছে। বিশেষ করে হোটেলগুলোয়।
রেবেকে রোবিনস সিএনএনকে বলেন, ‘নিদ্রাবিলাস নামের নতুন এ পর্যটনের ক্ষেত্রে লোকজন এখন এমন হোটেল বুক করছেন, যেখানে গিয়ে তাঁরা শান্তিতে কয়েক দিন ঘুমাতে পারবেন। তবে আগে অবশ্য এমনটা ছিল না। একসময় হোটেলগুলো এমন ব্যবস্থা করত, যাতে করে ঘুমের প্রতিই আপনার আগ্রহ কমবে।’
এই ঘুম বিশেষজ্ঞের মতে, ‘বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন ভ্রমণে সবার আগে ঘোরাঘুরি। খাওয়া আর ঘুম পরে। ঘুমাতে না পারলেও তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে এখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। লোকেরা এখন ঘোরাঘুরির চেয়ে সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে করোনাভাইরাস মহামারি। ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিন নামের চিকিৎসাবিষয়ক একটি সাময়িকীতে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। গবেষণায় আড়াই হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কাছে ঘুম নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরদাতাদের ৪০ শতাংশ বলেছেন, মহামারি শুরুর পর তাঁদের ভালোমতো ঘুম হয় না।
রেবেকে রোবিনস এ প্রসঙ্গে বলেন, কোভিড মহামারিকালে মানুষজন ঘুমের বিষয়টিতে আরও মনোযোগী হয়ে উঠেছে। কারণ, এই সময়ে ঘুম নিয়ে মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়েছে।
সিএনএন