শক্তিশালী ঝড় ও ভারি বৃষ্টিপাতে আকস্মিক বন্যার কারণে নিউ ইয়র্ক সিটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় শহরের অনেক পাতাল রেল, রাস্তা এবং মহাসড়ক প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া লগার্ডিয়া বিমানবন্দরের অন্তত একটি টার্মিনাল শুক্রবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শহরের কিছু অংশে ৮ ইঞ্চি (২০ সেমি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং শুক্রবারের পরেও আরো বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছেন।
গভর্নর ক্যাথি হচুল বলেছেন, ‘ঝড়টি খুব বিপজ্জনক ছিল। পুরো অঞ্চল জুড়ে যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে, আমি নিউ ইয়র্ক সিটি, লং আইল্যান্ড এবং হাডসন উপত্যকা জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি।’
তিনি জনগণকে নিরাপদে থাকতে বলেছেন এবং প্লাবিত রাস্তায় ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যু বা গুরুতর আহতের খবর পাওয়া যায়নি।
নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে হাডসন নদীর ওপারে নিউ জার্সির শহর হোবোকেনেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, জরুরি অবস্থা জারি করার সময় এটি। তিনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমাদের কিছু সাবওয়ে প্লাবিত হয়েছে এবং শহরের চারপাশে চলাফেরা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।’ দেশটির মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন এজেন্সি অনুসারে, বন্যা নিউ ইয়র্কের পাতাল রেল ব্যবস্থা এবং মেট্রো উত্তর কমিউটার রেল পরিষেবায় বড় ধরনের ব্যাঘাত হেনেছে।
কিছু পাতাল রেল চলাচল সম্পূর্ণরূপে স্থগিত রাখা হয়েছে এবং অনেক স্টেশন বন্ধ ছিল।
শহরের উত্তরে অবস্থিত ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টি উপশহর মামারনেকে জরুরি কর্মকর্তারা বন্যার কারণে ভবনে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করেছেন।
বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হাঁটু পর্যন্ত পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মানুষ। রাস্তা এবং পাতাল রেল ভারি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাবওয়ে স্টেশনের ছাদ ও দেয়াল থেকে এবং প্ল্যাটফরমে পানি ঢুকে পড়ছে।
এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা রোহিত আগারওয়াল জানান, শহরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ঘণ্টায় ১.৭৫ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টি সামাল দিতে পারে না। ব্রুকলিন নেভি ইয়ার্ড থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার এক ঘণ্টায়ই ২.৫ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
তিনি মন্তব্য করেন, ‘ব্রুকলিনের কিছু অংশ যে এই বৃষ্টিতে ভুগবে, তা স্বাভাবিক।’ ব্রুকলিনের সাউথ উইলিয়ামসবার্গ অঞ্চলেও হাঁটুপানিতে ড্রেন পরিষ্কার করার ভিডিও দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
গোয়োনুস এলাকার কেলি হেইস বিবিসিকে বলেন, এই বৃষ্টির কারণে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছে। লা গার্ডিয়া বিমানবন্দরের টার্মিনালে পুরোপুরি পানি উঠে যাওয়ার আগেই সেটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সব যাত্রীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা যেন ভ্রমণ করার আগে তাদের এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেয়।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে যে উদ্ধারকাজে সহায়তা করতে ন্যাশনাল গার্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ মাসে নিউ ইয়র্ক শহরে আনুমানিক ১৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৮৮২ সালের পর থেকে এই প্রথমবার সেপ্টেম্বর মাসে এই পরিমাণ বৃষ্টি হলো বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অধিদপ্তর, ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস।
সূত্র : বিবিসি