শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

বুশরা বিবির প্রেসক্রিপশনে দেশ চালাতেন ইমরান খান! ডায়েরি ফাঁস

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩

অক্সফোর্ড থেকে খেলার মাঠ, যৌবনের উত্তাল সে দিনগুলোতে হাজার রমণীর মনসওয়ার পাকিস্তানের বাইশ গজের জাদুকর ইমরান খান (৭০) জীবনের শেষবেলায় এসে ‘স্ত্রৈণ’ হয়ে পড়েছিলেন? সকাল থেকে সন্ধ্যা স্ত্রীর কথায়ই চলতেন। ঘুম থেকে উঠেই কী খাবেন, পরের ঘণ্টায় কী কাজ, এমনকি দেশ পরিচালনার প্রেসক্রিশনও আসত অন্দরমহল থেকেই। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া তার তৃতীয় পত্নী বুশরা বিবির (৪৮) এক ডায়েরিতে সে ইঙ্গিতই মিলেছে। জিইও নিউজ, ডন।

বৃহস্পতিবার দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর চেয়ারম্যান ইমরান খানকে অ্যাটক কারাগারে দেখতে যান বুশরা। পরদিন আচমকাই পাকিস্তানের আলোচনার মধ্যমণি হয়ে ওঠে বুশরা বিবির একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি। তাতে উঠে আসে খানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে বুশরার প্রভাব খাটানোর কথা। জীবনের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অনেক নির্দেশনাও দিতেন বুশরা। আর খান নাকি সেই দিকেই ছুটতেন। পা ফেলতেন বুশরার দেখানো পথেই। দেশও চালাতেন সেই ‘ঘরণী দর্শনেই’। ইমরান খানের বন্দিদশার মধ্যেই নতুন এ খবর পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপট আবারও মুখরোচক হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তানের প্রথম পর্দানশীন ফার্স্ট লেডি বুশরা বিবি। ছিলেন ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতার অধিকারী। আধ্যাত্মিকতার এক রহস্যময়ী রূপ। পাকিস্তানের অনেকেই বিশ্বাস করেন বুশরার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা রয়েছে। ইমরান খানও বুশরাকে তার আধ্যাত্মিক নেতা বলে থাকেন। খানের সঙ্গে বিয়ের আগেই সেই প্রমাণ দেন বুশরা। বলেন, খান যদি প্রধানমন্ত্রী হতে চান তাহলে তাকে বুশরা বিবির বংশের একজন নারীকে বিয়ে করতে হবে। স্বপ্নে দেখেন, খানকে অবশ্যই একজন বিবাহিত মহিলা ও পাঁচ সন্তানের জননীকে বিয়ে করতে হবে। আর তখন বুশরাও ছিলেন পাঁচ সন্তানের জননী। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পরেই ইমরান খান প্রধানমন্ত্রিত্বের রাজত্ব পেয়ে যান। বুশরা বিবির এই আধ্যাত্মিক শক্তিতে মুগ্ধ হয়েই তাকে বিয়ে করেন খান। সরকার পরিচালনার নেপথ্যের এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হতেই দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হতে পারে বুশরার আধ্যাত্মিক শক্তির কারণেই তার সব নির্দেশ মেনে নিতেন খান।

ডায়েরিতে লেখা উদ্ধৃতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরালও হয় নিমিষেই। কথিত ডায়েরির শুরুতেই বুশরার একটি ছবি দেখা যায়। এরপর থেকেই খানের বিভিন্ন রাজনৈতিকসহ ব্যক্তিগত জীবনের কথা তুলে ধরা হয়। খানকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর ওপর কখন চাপ দিতে হবে, সে পরামর্শ দিতেন বুশরা। এছাড়াও গভর্নরের শাসন জারি করা হলে কী করতে হবে তার কৌশলও লেখা ছিল ডায়েরিতে। প্রয়োজনে পুরো শহর বন্ধ করে দেওয়াসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানোর কথা লেখা রয়েছে। ডায়েরির লেখা থেকে বোঝা যায়, খানের মনে রাজনৈতিক বিপ্লবের ধারণা দেওয়ার জন্য বুশরার হাত ছিল অনেকটাই। আইনি কৌশল গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন বুশরা।

তবে ডায়েরির সত্যতা নিয়ে অস্বীকার করেছেন পিটিআই’র সদস্যরা। বলেন, খানের সুনাম নষ্ট ও পিটিআই’র বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করতেই এটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হতে পারে। এদিকে পাকিস্তানের সাংবাদিক জাভেদ চৌধুরী নিজেই ডায়েরিটি দেখেছেন বলে দাবি করেন। পাকিস্তানের এক্সপ্রেস নিউজের একজন উপস্থাপকের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় বিস্ময়কর বিবরণ শেয়ার করেন। বলেন, ডায়েরিতে খানের পার্টি পরিচালনার কৌশল থেকে শুরু করে দৈনন্দিন রুটিনের নির্দেশনাবলিও লেখা আছে। বলেন, খানের খাদ্যাভ্যাসের নিয়ন্ত্রণও করতেন বুশরা। খানের সকালে কী খাওয়া উচিত, কখন জল পান করা উচিত, দুপুরের খাবারের তালিকা, এমনকি রাতে দুধ পান করার মতো নির্দিষ্ট সময়গুলো লিপিবদ্ধ করা আছে সেখানে।

ডায়েরিতে বলা হয়, খান প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চা, ফলের রস ও মধু খেতেন। দুপুরের খাবার হিসাবে মাছ, মাংস বা কাবাব খেতেন। রাত ১২টায় দুধ পান করতেন। এছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে কিছু নফল নামাজ ও আরও কিছু নির্দিষ্ট নামাজ পড়ার বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে জাভেদ প্রকাশ করেন, পাঞ্জাবে গভর্নর শাসন জারি হলে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর নির্দেশনা ছিল ডায়েরিতে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com