গত বছর বিশ্বের ধনী মানুষেরা কিছুটা গরিব হয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্বের সামগ্রিক পারিবারিক সম্পদের পরিমাণ কমেছে, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর যা এই প্রথম। মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এমনকি ২০২২ সালে বিশ্বে মিলিয়নিয়ার বা ১০ লাখ ডলারের মালিকের সংখ্যা কমেছে। এটা অনেকের কাছেই খারাপ সংবাদ, কিন্তু বাস্তবতা হলো, পরিসংখ্যানে আশাবাদী হওয়ার মতো আরও খবর আছে।
গত বছর বিশ্বের ব্যক্তিমানুষের সম্পদ ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৪ ট্রিলিয়ন ডলার, ক্রেডিট সুইস ও ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই সম্পদহানির অন্যতম কারণ হচ্ছে স্টক ও বন্ড মার্কেটের পতন, যার কারণে ধনী মানুষেরা সামঞ্জস্যহীনভাবে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ২০২২ সালে বিশ্বের মেডিয়ান সম্পদ ৩ শতাংশ বেড়েছে। এই সূচক দিয়ে বোঝা যায়, গড়পড়তা একজন ব্যক্তি কেমন আয়রোজগার করছেন। সে কারণে সম্পদের পরিমাপ করার ক্ষেত্রে এই সূচক অন্যান্য সূচকের বেশি যথাযথ।
তবে সামগ্রিকভাবে এই সম্পদ হ্রাসের বিষয়টি ‘রিচসেশন’ নামে অভিহিত হচ্ছে। ফলে ২০২২ সালে বিশ্বে মিলিয়নিয়ার বা ১০ লাখ ডলারের মালিকের সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় ৩৫ লাখ কমেছে। তাতে এখন বিশ্বের মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি।
তবে সব দেশে যে একই হারে মিলিয়নিয়ার কমেছে, তা নয়, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই তা কমেছে ১৮ লাখ। সেই সঙ্গে অতিধনী বা আলট্রা হাই-নেট ইনডিভিজুয়ালের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি কমেছে—১৭ হাজার ২৬০ জন, যাদের সম্পদমূল্য কমেছে ৫ কোটি ডলার। তবে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের জগতের কেমন একটা অঙ্গহানি হয়নি, কারণ সে দেশে এখনো ১ লাখ ২০ হাজার অতিধনী মানুষ আছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন, সেই দেশে অতিধনীর সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম, মাত্র ৩২ হাজার ৯৯৯ জন।
তবে ভালো দিক হলো, সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ওপরের সারির মানুষের সম্পদ হ্রাস এবং সমাজের মেডিয়ান সম্পদ বৃদ্ধির অর্থ হলো, বৈষম্য কমেছে। বিশ্বের ১ শতাংশ শীর্ষ ধনীর হাতে এখনো বৈশ্বিক সম্পদের ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ পুঞ্জীভূত; ২০২১ সালে যা ছিল ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডোনাভান সিএনএনকে বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন আশ্চর্য রকমের পরিবর্তন হচ্ছে।’
আশার আরেকটি কারণ হলো, ক্রেডিট সুইসের পূর্বাভাস অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে বৈশ্বিক সম্পদ বাড়বে ৩৮ শতাংশ, ২০২৭ সালে যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬২৯ ট্রিলিয়ন। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সেই প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দেবে মধ্যম আয়ের দেশগুলো।
এখন বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড় সম্পদ ৮৪ হাজার ৭১৮ ডলার সমপরিমাণ; ২০২৭ সালের মধ্যে যা ১ লাখ ১০ হাজার ২৭০ ডলারে উন্নীত হবে।
২০২২ সালে বিশ্বে ‘বিলিয়নিয়ার’ বা ‘শতকোটিপতি’খ্যাত অতিধনীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই কিছুটা গরিব হয়েছেন, অর্থাৎ তাঁদের ধনসম্পদের নিট মূল্য কমবেশি কমেছে। তবু বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির তালিকায় তাঁরাই ঠাঁই পেয়েছেন।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, গত বছর এই ধনীদের সম্পদ কমেছে ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার, ২০০৮ সালের পর যা এই প্রথম। মূলত প্রযুক্তি কোম্পানির স্টকের দাম কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।