বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের শীতলতম শহরে জীবনযাপন

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

আমাদের দেশে শৈত্যপ্রবাহ হলেই জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়, নানা রকম দুর্ভোগ নেমে আসে। দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগ-বালাই।

কিন্তু যে দেশে সারা বছরই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের (যে তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ গলে তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয়) নিচে থাকে তাদের জীবনযাত্রা কীভাবে চলে?, তারাও কি আমাদের মতো শীতে কাবু হয়ে পড়ে?

বিশ্বের শীতলতম শহর বলঅ হয় পূর্ব সাইবেরিয়ার ইয়াকুৎস্ককে, যা রাশিয়ার অধীন। বছরের বেশির ভাগ সময়েই সেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে।সম্প্রতি ইয়াকুৎস্ক শহরে প্রবল ঠান্ডা পড়েছে। তাপমাত্রা পৌঁছেছে হিমাঙ্কের ৫০ ডিগ্রি নিচে। শেষ কবে এমন ‌ঠান্ডা পড়েছে, মনে করতে পারছেন না সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই।সুমেরুবৃত্তের চেয়ে সাইবেরিয়ার এই শহরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে ইয়াকুৎস্ক। শহরের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।তবে পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত ইয়াকুৎস্ক শহরের তাপমাত্রার পারদ সবচেয়ে বেশি নেমে গিয়েছিল হিমাঙ্কের ৬৪ ডিগ্রি নিচে। এ বারেও সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় বাসিন্দারা।

হিমাঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রাতেই কীভাবে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিতে হয়, শীত কীভাবে সহ্য করতে হয়, জানেন ইয়াকুৎস্কের মানুষ। শীতকালে সেখানে প্রায়ই পারদ নেমে যায় হিমাঙ্কের ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি নিচে।

তবে এ বছরের শীতের তাপমাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। প্রবল শীতে জমে গিয়েছে গোটা শহর। নানা কৌশল অবলম্বনের পরেও হাড়কাঁপানো ঠান্ডাকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না।

তাপমাত্রা নিয়ে অবশ্য কোনও অভিযোগ, অনুযোগ বা হতাশা নেই ইয়াকুৎস্কের মানুষজনের। ঠান্ডায় তারা অভ্যস্ত। কী ভাবে দিন কাটান এই তাপমাত্রায়? জানিয়েছেন নিজেরাই।

রাশিয়ার একেবারে পূর্বে রাজধানী মস্কো থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইয়াকুৎস্ক। পৃথিবীর চিরহিমায়িত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে এই শহর।

২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ইয়াকুৎস্ক শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার। বাসিন্দাদের অধিকাংশ খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রাশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ইয়াকুৎস্ক।

ইয়াকুৎস্কের বাসিন্দা অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, ‘‘এই ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। হয় সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরতে হবে, নয়তো ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবে।’’

অন্তত দুটি মোটা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিলেন অ্যানাস্তেশিয়া। হাতে পরেছিলেন দুটি দস্তানা। সঙ্গে একাধিক টুপি ও সোয়েটারও ছিল তার পরনে।

কীভাবে ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা জোগান? অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, ‘‘এখানে ঠান্ডার অনুভূতিই হয় না অথবা, আমাদের মস্তিষ্কই ঠান্ডা সহ্য করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে।’’

ইয়াকুৎস্কের রাস্তাঘাটে হামেশাই বরফ জমে থাকে। তার ওপর দিয়েই চলাফেরা করেন সবাই। শহর ঠান্ডায় জমে গেলেও জীবনপ্রবাহ সচল।

বরফে ঢাকা রাস্তার ওপর বরফে জমে যাওয়া মাছ বিক্রি করতে বসেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মাছ তাজা রাখতে রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন হয় না। শীতলতম শহরে দিব্যি চলে শীতের বিকিকিনি।

গুচ্ছ গুচ্ছ গরম পোশাক পরাই ইয়াকুৎস্ক শহরে জীবন অতিবাহিত করার প্রধান এবং একমাত্র চাবিকাঠি, জানান স্থানীয়রা। তারা সবাইই ‘বাঁধাকপির মতো পোশাক’ পরেন।

বাঁধাকপিতে থাকে পাতার অজস্র স্তর। একটি একটি করে সেই স্তর খুলে ফেলা যায়। অনেক পাতা একত্রে জমাট বেঁধে বাঁধাকপি তৈরি হয়।

ইয়াকুৎস্ক শহরের বাসিন্দারাও রোজ এই বাঁধাকপির মতো পোশাকেই আরাম খুঁজে নেন। পুরু আস্তরণযুক্ত গরম উলের তৈরি একাধিক পোশাক গায়ে চাপান তারা। বরফের মধ্যে সে ভাবেই কাটিয়ে দেন দিন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com