চারদিক থেকে তাকে ঘিরে রেখেছে প্রশান্ত মহাসাগর। সাগরের মাঝে ছোট্ট জায়গা করে নিয়েছে সে। এই ভাবেই মহাসাগরের বুকে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ পিটকেয়ার্ন। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে আগ্নেয় শিলা দিয়ে তৈরি চারটি দ্বীপ রয়েছে। এই দ্বীপগুলি হল পিটকেয়ার্ন, হেন্ডারসন, ডুসি এবং ওয়েনো। এর মধ্যে একমাত্র পিটকেয়ার্নেই মানুষের বাস রয়েছে।
পিটকেয়ার্ন দ্বীপের মধ্যে একটি গ্রাম হল অ্যাডামসটাউন। এটি পিটকেয়ার্নের রাজধানী। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী অ্যাডামসটাউনে স্থায়ী ভাবে ৪৭ জন মানুষের বাস। জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজধানী এটি।
দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অ্যাডামসটাউনের দূরত্ব সাড়ে পাঁচ হাজার কিমি। অ্যাডামসটাউনের কাছে রয়েছে তাহিতি দ্বীপ। দূরত্ব প্রায় ২১৫০ কিমি। অ্যাডামসটাউনে কোনও বিমানবন্দর নেই। একমাত্র নৌকা করেই যাওয়া যাবে পেটকিয়ার্ন দ্বীপে। প্রতি তিন মাস অন্তর ওই দ্বীপে একটি জাহাজ আসে। ওই জাহাজে করে খাবার-সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হয়। যা দ্বীপের বাসিন্দাদের সরবরাহ করা হয়।
২০০৪ সালে এই দ্বীপে বাধ্য হয়ে কারাগার তৈরি করা হয়েছিল। কারণ, দ্বীপে অপরাধের ঘটনা বাড়ছিল। তবে অপরাধীরা আগাম মুক্তি পাওয়ায় কারাগারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। বর্তমানে কারাগারটিকে হস্টেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পিটকিয়ার্ন দ্বীপটি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে রয়েছে। দ্বীপে নিজেদের সাধ্যমতো চাষবাস করেন বাসিন্দারা। এই দ্বীপে টেলিভিশন, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং টেলিফোন পরিষেবা রয়েছে। তবে যোগাযোগের জন্য মূল মাধ্যম হল হ্যাম রেডিয়ো।
পিটকেয়ার্ন দ্বীপের ইতিহাসও উল্লেখযোগ্য। শোনা যায়, ১৭৮৯ সালে ব্রিটিশ নৌসেনার একটি দল বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। ব্রিটিশ নৌসেনার তাহিতিগামী জাহাজের দখল নিয়েছিলেন বিদ্রোহীরা। ওই বিদ্রোহী নৌসেনারা তাহিতি চলে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে বেশি দিন থাকেননি। ব্রিটিশ প্রশাসনের শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা পিটকেয়ার্নে চলে যান। সেই সময় থেকেই নাকি ওই দ্বীপে মানুষের বাস শুরু। প্রকৃতির মাঝে পিটকেয়ার্ন দ্বীপের সৌন্দর্য অসীম। চারদিকে জল আর মাঝে ছোট্ট সবুজ। যাকে বলে মনোরম পরিবেশ।
আনন্দবাজার