মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৮ অপরাহ্ন

বিলাসবহুল মরিশাস

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

বিকেল হলেই এক মায়াবী আলো ছড়িয়ে পড়ে সোনালি বালুর সৈকতে। সামনে নীল ভারত মহাসাগর। দূরে দূরে কালো পাহাড়। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষণ আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে রঙের আঁচড়। এমন বর্ণময় সুর্যাস্তের টানেই সারা বিশ্বের পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। এটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ হানিমুন স্পট। দ্বীপের নাম মরিশাস। আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে হাজার দুয়েক কিলোমিটার দূরে মাদাগাস্কার দীপের গা ছুঁয়ে ঝিনুকের মতো যে ছোট্ট দ্বীপ সেটাই মরিশাস। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ হওয়ায় ঋতুর আবর্তন আমাদের দেশের ঠিক উলটো। এখানে গ্রীষ্মকাল নভেম্বর থেকে মে. আর শীতকাল মে থেকে নভেম্বর। ভারতের সঙ্গে সময়ের ব্যবধান কিন্তু তেমন বেশি নয়। মরিশাস ভারতের চেয়ে মাত্র দেড় ঘণ্টা পিছিয়ে।

রাজধানী পোর্ট লুইয়ের স্যার সিউসাগর রামগুলাম বিমানবন্দরে নেমে প্রথমেই ঠিক করে নিন মাথা গোঁজার ঠাঁই। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর অন্যতম বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্র মরিশাস। এখানকার মূল পরিবহণ বাস। গাড়িও মেলে। তবে কোনও ট্রেন চলে না। ছোট দ্বীপ। লক্ষয় ৬০ কিমি চওড়ায় ৪৫ কিমি। গোটা দ্বীপটা বাসে চড়েই ঘুরে নেওয়া যায়। আখচাষ আর চিনি উৎপাদন আজ মরিশাসের মূল অর্থনৈতিক বুনিয়াদ হলেও এখন পর্যটনশিল্প ও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। এখানে রাষ্ট্রভাষা বলে আলাদা কিছু নেই। পালার্মেন্টের সরাসরি ভাষা ইংরেজি। তবে বেশির ভাগ মানুষ মরিশিয়ান ক্রেয়োলভাষায় কথা বলে। ফরাসি ভাষাও ভীষণ কমন।

হোটেলে ঢুকে নাওয়া খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়ুন টুরে। পোর্ট লুইয়ের ভিক্টোরিয়া বাস স্টেশন থেকেই পাওয়া যাবে বাস। যেতে যেতে আর পাঁচটা বিদেশি শহরের সঙ্গে তফাৎটা চোখে পড়বে। ছোট ছোট গাছে ঢাকা বসতি, বাজার। পথের ধারেই বিকোচ্ছে খাদ্য, পানীয়, সাজসজ্জা, গৃহস্থালি, বাসনপত্র। বাজার পেরিয়ে অর্ধগোলাকৃতি বন্দর। সারি সারি বাণিজ্যপোত। শহর ছাড়িয়ে চড়াই বেয়ে বাস উঠে আসবে না-সিটাডেল পাহাড়ের মাথায়। ওপর থেকে সমুদ্রের তীরে পোর্ট লুইকে ছবির মতো লাগে। ডানদিকে ওলন্দাজদের কালো পাথরের তৈরি প্রাচীন দুর্গ, প্রবেশদ্বার বন্ধ। এখন ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। সামনে বড় একটা ঝমান রাখা। ফেরার পথে আসতে হবে ঝাডন ওয়াটারফ্রন্ট লাগোয়া শপিং কমপ্লেক্সের। জামা কাপড় থেকে স্যুভেনির—সবই পাওয়া যায়। এক মরিশাস রুপি মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দুই টাকা। রাতে হোটেল ডিনারের আগে নিতে পারেন এখানকার স্থানীয় টিরাম’ -এর স্বাদ, মন্দ লাগবে না। আর হোটেল ম্যানেলরকে ম্যানেজ করে যদি সৈকতে আগুন জ্বালিয়ে ক্রেয়োল সেগা নাচের আসর বসানো যায় তো কথাই নেই। সে এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। সেগার উৎপত্তি আফ্রিকার থানা। দু’জন ছেলে রাভানে আর পারকামান ইন্সট্রুমেন্ট বাজায় আর রংবেরঙের পোশাক পরে মেয়েরা নাচে।

পরদিন সকালবেলায় চলুন বেলে মারে তে। এখানে নানারকম জলক্রীড়ার আয়োজন আছে। ডিপ সি ওয়াকিং বা স্কুবা ডাইভিং, উইন্ড সারফিং, ওয়াটার স্কিয়িং, ইয়টিং। নিজের পকেট আর সাহস অনুযায়ী ঠিক করতে হবে কোনটা আপনার জুতসই হবে। আছে সাবমেরিন রাইড-ও। তবে মূল্য বেশি। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় হাজার দশেক টাকা। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের জলবিহার—তবে লাইফটাইম এক্সপিরিয়েন্স। জলক্রীড়া সেরে সাগরবেলায় এসে গাছের ছায়ায় বসলে ঝিরঝিরে হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে যাবে, চোখ জুড়িয়ে যাবে ভারত মহাসারের অনন্ত জলরাশির দিকে চেয়ে। সাগরজনে যৌবনের ঝড় তুলে নবদম্পতিরা মধুচন্দ্রিমার মা। সাগরবেলার রেস্তরাঁয় মধ্যাহ্নভোজ সেরে চড়ে বসতে পারেন স্পিডবোটে। ভারত মহাসাগরের নীল জল ফুঁড়ে ঢেউদের নাচের তালে ভীষণ গতিতে ছুটে চলবে স্পিডবোট। উত্তাল হাওয়ায় লাগবে উড়িয়ে দেওয়ার নেশা। ঘোর কাটতেই এসে যাবে শার্প আইল্যান্ড। ঠিক যেন পিকচার পোস্টকার্ড। মাঝ সমুদ্রে প্যারাসেলিং-এর রঙিন ছাতা। এই দ্বীপেও আছে জলক্রীড়ার হরেক আয়োজন। দ্বীপটায় সাগরের জল ঢুকে তৈরি হয়েছে। ব্যাকওয়াটার। সেখানে হচ্ছে হলে কিছুটা সময় সাঁতার কেটে নেওয়া যায়।

পরের দিন সকালেই সাউথটুরে চলুন। প্রথমে জাহাজ তৈরির কারখানায়। মরিশাসের কাঠের তৈরি জাহাজের শো-পিসের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। শো-রুমে ছোট থেকে বড় নানান আকারের শো-পিস বিক্রি হয়। এবার বাসে চড়ে পিচ বাঁধানো পাহাড়ি পথ ধরে উঠে আসতে হবে রেলিং ঘেরা এক গোল পাহাড়ের মাথায়। অনেক নীচে ভলকানিক ক্র্যাটার, ছোট জলাশয়ের মতো, চারদিক গাছপালায় ঘেরা। এটিই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। এটি দেখে এবার চলুন হিন্দু মন্দিরের পথে, রাস্তায় আছে বিশাল এক পাথরের শিবমূর্তি। বাঘছাল পরা, হাতে ত্রিশুল, মাথায় অর্ধচন্দ্র, গলায় সাপ। হিন্দু মন্দিরটি বেশ বড় এলাকা জুড়ে। ভিতরে শিব, পার্বতী, গনেশ, লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, কুবের কে নেই? আসলে এখানকার ৫২ শতাংশ মানুষই হিন্দু। তাই বেশ কয়েকটা হিন্দু দেবদেবীর মন্দির আছে।

পৃথিবীর সাতরঙা মাটি দেখতে যেতে হবে চ্যামারেল শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে এক টিলার মাথায়। অনেকটা জায়গা ব্যারিকেড দেওয়া। সৃষ্টিকালে লাভার স্রোতে যে সাতরঙা মাটি তৈরি হয়েছিল তা সুন্দরভাবে সংরক্ষিত। লাল, বাদামি, কালো, তামাটে, সাদাটে, কালচে লাল, হলদেটে বাদামি— সাতরঙা মাটি দেখবার মতো এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ফিরে এসে জ্যোৎস্নাঢালা সন্ধ্যায় আবার সাগরকূলে। তারপর আনন্দ, স্নিগ্ধতাকে পেছনে ফেলে বাড়ি ফেরা।

কীভাবে যাবেন

দমদম বিমান বন্দর থেকে মরিশাসের সরাসরি কোনও বিমান নেই, তাই প্রথমে যেতে হবে মুম্বই। সেখান থেকে বিমানে মরিশাস যেতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা।

কখন যাবেন

সারা বছরই মরিশাসে পর্যটকদের ভীড় লেগে আছে। তাই যে কোনও সময় ওই দেসে ঘুরে আসতে পারেন। তবে হানিমুনের জন্য মরিশাস আদর্শ।

মনে রাখুন

মরিশাসের ঋতুর আবর্তন আমাদের ঠিক উলটো। এখানে গ্রীষ্মকাল নভেম্বর থেকে মে আর শীতকাল মে থেকে নভেম্বর। সেই বুঝে পোশাক নিতে হবে। এখখানকার লোকেরা ভীষণ অতিথিবৎসল, বেশির ভাগ মানুষই ইংরেজি বোঝে। এখানে প্রচুর ভারতীয় বাস করে, তাদের অধিকাংশই হিন্দু। অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন পাসপোর্ট, ভিসা, নিজের ফটো, আই ডি কার্ড ও দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ফটো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com