শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের তরুণের বিশ্বজয়

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

কলোরাডোর ডেনভার শহরের রেড রকস এ্যাস্ফিথিয়েটারের সামনের বিশাল উন্মুক্ত প্রাঙ্গন ভক্ত আর শ্রোতায় ভরা। ৮ জুন বুধবার ২০২২। এই সন্ধ্যাটিকে বলা হচ্ছে ইলেকট্রিক নাইট। এই বিখ্যাত মঞ্চে এই সন্ধ্যায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত জাই উলফ আর তার সাথে নেদারল্যান্ডস থেকে আগত স্যান হোলো সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। তাদের সাথে আরো আছেন ম্যানিলা কিলা ও সু ন্যামি। অনুষ্ঠানের নাম ইনফিনিট নাইট। অর্থাৎ অসীম রাত।

হ্যাঁ বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত জাই উলফ যার আসল নাম সজীব সাহা এখন বেইজ আর্টিস্ট হিসাবে আমেরিকার ঘরে ঘরে উচ্চারিত প্রিয় নাম। তার নামেই রেড রকস এ্যাস্ফিথিয়েটারে টিকিট কেটে সমবেত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। দশ সহ¯্রাধিক তো হবেই। এই চার শিল্পী বেইজ আর্টিস্ট। তারা তখন আমেরিকা ট্যুর করছেন।

কলোরাডোর এই মিউজিক নাইটে জাই উলফ তার সতীর্থদের নিয়ে গাইলেন নানা জোনরার গান- ডিপ হাউজ থেকে সফট, মেলোডিক বেইজ মিউজিক হাজার হাজার দর্শক-তার হৃদয়ে যে এনার্জি ছড়িয়ে দিয়েছে তার সাথে হয়তো কোনো কিছুই তুলনীয় নয়- লিখেছে পার্টি গুরু। জাই উলফ এবং স্যান হোলো দর্শকদের আপ্লুত করে ভাসিয়ে দেন। মঞ্চ থেকে যতদূর দৃষ্টি যায়, কেবল মানুষ আর মানুষ। পার্টি গুরু বলছে এই অনুষ্ঠান অর্থাৎ ‘ইনফিনিট ট্যুর’ অবশ্যই রেড রকস এর ইতিহাসে এপিক সামার নাইট হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশী-মেরিকান ডিজে ৩০ বছর বয়সী জাই উলফ আমেরিকার মিউজিক কম্যুনিটিতে একটি হাউজ হোল্ড নাম। রেড রকসএ তিনি নবাগত নন। তবে এত বড় অর্থাৎ হেডলাইন হওয়ার মত মিউজিক শো রেড রকসএ এই প্রথম। জাই উলফকে বলা হয়েছে An incredible musician and performer. শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জাই উলফ প্রতিটি দর্শক শ্রোতাকে মোহমুগ্ধ করে রেখেছিলেন। ইনফিনিট নাইটে জাই উলফের গাওয়া শেষ গানটি ছিল তার সবচেয়ে হিট গান ‘ইন্ডিয়ান সামার’। গানটি শোনার পর প্রায় সব দর্শক বাকরুদ্ধ হয়ে হাঁ করে থাকেন। এই গানটি স্পটিফাই মিউজিকে স্ট্রিমিং হয়েছে ১০০ মিলিয়নের বেশি বার (গত জুন পর্যন্ত)।

সজীব সাহা ওরফে জাই উলফ যেখানেই গান করেন একবারও বলতে ভোলেন না তিনি বাংলাদেশের ছেলে। তার জন্ম ১৯৯১ সালের ১ নভেম্বর রাজশাহীতে। পরের বছরই সজীব মা-বাবার সাথে আমেরিকায় চলে আসেন। এখন তার বাবা-মা বাস করেন নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে। সেখানকার সিয়ারিংটাউন হ্যারিক হাইস্কুল থেকে সজীব সাহা গ্রাজুয়েশন করেন। ২০১১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ইলেকট্রিক গিটারে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। এর পরপরই ইউটিউবে তার মিউজিক বিপুল শ্রোতা পায়। ২০১৪ সালে সজীব জাই উলফ নাম গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার মিউজিক জগতে অবতীর্ণ হন। ২০১৫ সালে তার প্রথম সিঙ্গেল ইন্ডিয়ান সামার রিলিজ হয়। সাথে সাথে বিলবোর্ডেও হট ড্যান্স ইলেকট্রনিক সংসের তালিকায় ৩১তম স্থানে পৌঁছে। অস্ট্রেলিয়াতে তাদের নিজস্ব চার্টে প্রথম দিকে জায়গা দখল করে নেয়। এরপর স্টারলাইট, লাইক ইট’স ওভার, দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ আওয়ার্স, গ্রাভিটি, লস্ট কিট ইত্যাদি সিঙ্গেলস হিট হয়েছে।

সজীব সাহার বাবা ড. শিবাজি সাহা। তিনি আমেরিকার বোর্ড সার্টিফাইড মেডিকেল ফিজিসিস্ট। তিনি সাদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে আসেন। ড. শিবাজি সাপ্তাহিক বাঙালীকে জানান, তারা ইলিনয়ে থাকার সময় একটি ফার্মার্স মার্কেটে যেতেন প্রায়। সে সময় একজন ফারমারের মেয়ে সেখানে ভায়োলিন বাজাতো। সজীবের বয়স তখন ৪ বছর। সজীব সেই ভায়োলিন শুনে আকৃষ্ট হয় এবং ভায়োলিন বাজানো শিখতে চায়। আমরা তাকে আমাদেরই ইউনিভার্সিটির মিউজিকের শিক্ষকের কাছে ভায়োলিন বাজানো শিখতে পাঠাই। সেখানে ৩ বছর শেখার পর আমি পিটসবার্গে চলে আসি পোস্ট ডক করতে। সেখানে থাকাকালেও সজীব ভায়োলিন শিখেছে। পরে নিউইয়র্কে ফিরে এলে ও যখন সিয়ারিংটাউন হ্যারিক হাইস্কুলে তখন সে স্কুলে মেট্রো ইয়ুথ অর্কেস্ট্রাতে যোগ দিয়ে ভায়োলিনে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকেল মিউজিক শেখে। সজীব তার ভায়োলিন বাজানোয় এতটাই দক্ষতা অর্জন করে যে, তার ছবি এখনো স্কুলের দেয়ালে টাঙানো আছে।

ড. শিবাজি সাহা বলেন, এর পর সজীব স্বেচ্ছায় ভায়োলিন ছেড়ে গিটারে ও ইলেকট্রিক মিউজিকে চলে যায়। এবং আজকের অবস্থানে পৌঁছে। তিনি বলেন, আজ সজীবের যে সাফল্য তার পিছনে রয়েছে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকেল মিউজিকের শিক্ষা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com