প্রতিবেশি দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। মারকুইস স্ট্রিট, কিডস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিটসহ এর আশপাশের এলাকা যেখানে গম গম করত পর্যটকের পদচারণায় কিন্তু হঠাৎ সেসব জায়গা এখন পর্যটক শূন্য। বেশ কিছু জটিলতার কারণে সেখানে দিন দিন কমতে শুরুর করেছে এপার বাংলার পর্যটকের সংখ্যা। আর এতেই মাথায় হাত সেখানকার ব্যবসায়ীদের।
সম্প্রতি বাংলাদেশী পর্যটকরা নিউ মার্কেট এলাকায় ছিনতাই, বহিরাগতের উপস্থিতিসহ কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পর্যটন মৌসুমে হোটেল না পাওয়া কিংবা অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া নেয়ারও অভিযোগও ওঠে। এমনও দেখা গেছে যে হোটেল ঘর না পেয়ে রাস্তাতেই রাত কাটাতে হয়েছে পর্যটকদের। বিশেষ করে ঈদের আগে, বড়দিন, বছরের শেষ দিনে এরকম ঘটনা সামনে আসে। এর ওপর রয়েছে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা সমস্যা!
আর মূলত এসব নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিউমার্কেট এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা। খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের জন্য জরুরি বৈঠক করেছেন এই এলাকার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সেখানে বাংলাদেশি পর্যটকদের ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের তথা জানিয়েছে তারা।
এর মধ্যে প্রথমেই থাকছে বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা ভেবে খুব দ্রুতই পুরো নিউমার্কেট চত্বরে বসানো হচ্ছে বসানো হবে সিসিটিভি। মারকুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ফ্রিস্কুল স্ট্রিটসহ গোটা নিউমার্কেট চত্ত্বর সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে ফেলার জন্য মোট ৪০টির বেশি ক্যামেরা লাগানো হবে।
এর পাশাপাশি মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের তরফে দুটি হেল্পডেস্ক করা হচ্ছে সে অঞ্চলে। যদি কোন বিপদে পড়েন ফোন করলেই মুশকিল সমস্যার সমাধান হবে।
বৈঠকে পর্যটকদের হোটেল সমস্যা সমাধানে মালিক পক্ষ জানায়, কিছু কিছু অভিযোগ পর্যটকরা করছে সেই অভিযোগের মধ্যেও সত্যতা আছে। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে সমস্যা সমাধানেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো হোটেল মালিক যেনো পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে।
পর্যটকদের আরও একটি মূল সমস্যা হলো বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা পেতে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে দৈনিক ৭-৮ হাজার বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে আসত। এদের মধ্যে অন্তত ৫ হাজার পর্যটকের ঠিকানা হতো নিউমার্কেট। এখন সেখানে ৫ শতাধিক পর্যটকও আসছেন না।
এই নিয়ে ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন। সরকার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং বাংলাদেশিরা কিভাবে আরও তাড়াতাড়ি ভিসা পেতে পারে তা নিয়ে তারা (ব্যবসায়ীরা) তাদের সরকারকে অনুরোধ করেছে, এ বিষয়ে তাদেরকে চিঠিও দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিষয়টা দেখছে। কলকাতায় যাতে তারা নিরাপদে অবস্থান করতে পারেন তা নিয়েও সরকারের সাথে কথা বলেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। সবাই এ বিষয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এছাড়াও রাতে হকারদের নিয়ে যে সমস্যা ছিল কলকাতা প্রশাসনের সাহায্যে সেই সমস্যাও অনেকটাই মেটানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন সংগঠনের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে তারা বলেন, বিদেশি পর্যটকদের সুরক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন মার্কুইস স্ট্রিট ও ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
মূলত কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতির প্রচুর মিল। তাই মার্কুইস স্ট্রিট, কিডস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিটসহ এর আশপাশের এলাকা মিলিয়ে এক টুকরো বাংলাদেশ বললে খুব একটা ভুল হবে না। তবে, সম্প্রতি বাংলাদেশি পর্যটকরা নিউ মার্কেট এলাকায় রাতের দিকে ছিনতাই, বহিরাগতের উপস্থিতিসহ কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার কারণে দিন দিন পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে কলকাতা শহর।