বর্ণের ভিত্তিতে কখনো কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা চলতে পারে না। এমনই রায় দিয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বংশোদ্ভূতরা। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়কে নিজেদের জয় হিসেবে অভিহিত করেছেন তারা। তবে ধাক্কা খেয়েছে আফ্রিকান-আমেরিকানদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্ত করার নীতি। এই নীতির মাধ্যমে আফ্রিকার বংশোদ্ভূতরা আমেরিকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় সহজে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারতেন। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘কোর্ট যে রায় দিয়েছে, সেটার সাথে আমি একেবারেই একমত নই।’একইসুরে সুপ্রিম রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মার্কিন ইতিহাসের প্রথম অ্যাফ্রো-আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ওই নিয়ম যদি না থাকত, তাহলে তিনি নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেতেন না।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের ছয় বিচারপতিকে মনোনীত করেছিলেন রিপাবলিকানরা। তারা বর্ণের ভিত্তিতে আমেরিকার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির নীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটদের মনোনীত তিন বিচারপতিই ওই নীতি বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন। আদতে ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ভরতি প্রক্রিয়া নিয়ে দুটি পৃথক মামলার শুনছিল সুপ্রিম কোর্ট।
ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার সংগঠন ‘স্টুডেন্ট ফর ফেয়ার অ্যাডমিশনস’-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ, হিসপ্যানিক এবং আদি আমেরিকানদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার প্রদান করে শ্বেতাঙ্গ এবং এশিয়ান-আমেরিকানদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। আবার হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে ওই সংগঠনের তরফে দাবি করা হয় যে এশিয়ান-আমেরিকানদের বৈষম্যের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে শুনানি করা হয়, ওই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের যে বাড়তি সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তা আদতে ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন এবং সমানভাবে রক্ষার ধারার ১৪তম সংশোধনীর বিরোধী। পাল্টা দুটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়, ওই নীতির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে। শেষপর্যন্ত অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে বর্ণের ভিত্তিতে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ওই রায়ের তীব্র বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্পষ্টভাষায় তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সাথে একেবারেই একমত নন। বাইডেনের কথায়, ‘আজ আদালত যে রায় দিয়েছে, সেটা অনেক মানুষের কাছে হতাশাজনক। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে আমরা দেশের জন্য স্থায়ী ধাক্কা ভেবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। সুযোগের জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা রাখা উচিত। একটা জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে যে বৈচিত্র্যই হলো আমাদের মূল শক্তি।’
একই সুরে ওবামা বলেন, ‘সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির বাড়তি সুবিধা প্রদানের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, তা অন্যান্য নীতির মতোই একেবারে নিখুঁত নয়। কিন্তু মিচেল (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাবাক ওবামার স্ত্রী) এবং আমার মতো প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিক্ষার্থীকে ওই নীতি প্রমাণ করার সুযোগ দিয়েছিল যে আমরা এখানকার মানুষ। তরুণ প্রজন্ম যে সুযোগ পাওয়ার যোগ্য, সেটা প্রদানের দায়িত্ব এবার আমাদের উপর এলো। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে সর্বত্র সাহায্য পান, সেই দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।’
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস