মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সঙ্ঘাত : নবীজীর ভবিষ্যদ্বাণী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩

আজ আমি এমন এক সঙ্ঘাতের বিষয়ে লেখার জন্য হাতে কলম নিয়েছি, যা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সঙ্ঘাত। যেটা প্রায় এক শতাব্দীর সঙ্ঘাত, আকিদা ও বিশ্বাসকেন্দ্রিক সঙ্ঘাত। সবাই নিজ নিজ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে লড়াই করছে। যেখানে একদল জালিম, অন্য দল মজলুম।

নির্যাতিত ফিলিস্তিনবাসী
আমি ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের ইস্যু নিয়ে লিখছি। ১৯৪৮ সালে জায়নবাদরা ব্রিটেনের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনের কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করে নেয়। আজ পর্যন্ত তাদের এই অবৈধ সম্প্রসারণ বিদ্যমান। ইসরাইল বাহিনী মুসলমানদের বাড়িঘর জমিন ধসিয়ে দিচ্ছে, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটতরাজ করছে, মা-বোনদের সম্ভ্রম নষ্ট করছে, হাজার হাজার নারী ও শিশু হত্যা করছে, গাজার আকাশে বাতাসে তাদের আর্তনাদের আওয়াজ ভাসছে, মায়ের সামনে তার কলিজার টুকরা সন্তানকে হত্যা করছে, স্ত্রীকে বিধবা করছে, এক কথায় তাদের ওপর জুলুমের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। গাজার আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

গাজাবাসীর ওপর জুলুমের স্টিমরোলার চালানোর কারণ একটাই- তারা মুসলমান, তারা আল্লাহ ও তাঁর নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে, আসমানি কিতাবে বিশ্বাসী, আল্লাহর ঘর মসজিদুল আকসাকে ভালোবাসে। ইহুদিরা এমন এক নিকৃষ্ট জাতি, যারা শুধু মুসলমানদেরকে নয় বরং শত শত নবী-রাসূলগণকেও হত্যা করেছে এবং তারা ফিলিস্তিনের এই ভূমিতেই নবীদেরকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর (তাদেরকে লানত করেছিলাম) তাদের কর্তৃক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং আমাদের অন্তরের ওপর পর্দা লাগানো রয়েছে তাদের এই উক্তির কারণে। অথচ বাস্তবতা হলো তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে মহর মেরে দিয়েছেন। এ জন্যই তারা অল্প কিছু বিষয় ছাড়া (অধিকাংশ বিষয়েই) ঈমান আনে না (সূরা আন নিসা : ১৫৫)।

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের কিছু অপরাধের বর্ণনা দিয়েছেন। এক. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। দুই. আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা। তিন. নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা।

তারা ঈসা আ:কেও হত্যা করার ষড়যন্ত্র এঁটেছিল, যদিও তারা সফল হয়নি। আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরতে তাঁকে আসমানে তুলে নিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘এবং তাদের এই উক্তির কারণে যে, আমরা আল্লাহর রাসূল ঈসা ইবনে মারিয়ামকে হত্যা করেছি অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং শূলেও চড়াতে পারেনি বরং তাদের বিভ্রম হয়েছিল (সূরা আন নিসা : ১৫৭)।

নির্যাতনের কারণ
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যাদের নবীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তারাই আজ জায়নবাদকে বেশি সহায়তা করছে। তাই এর কারণ ও ফিলিস্তিনের ওপর জায়নবাদের অত্যাচার, জুলুম নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার কারণ সংক্ষেপে তুলে ধরছি :

জায়নবাদ; যাদেরকে ইহুদিবাদ বলে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এই জায়নবাদদের মতাদর্শ মূলত জেরুসালেমের নিকটবর্তী জায়ন পর্বত ঘিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের মতাদর্শের দাবি হলো, জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে ইহুদিদের একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। যে রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে এবং যার প্রতিশ্রুতি ইব্রাহিম আ: দিয়েছেন অর্থাৎ ইব্রাহিম আ: তাঁর বংশধরকে মিসরের নীল নদ থেকে ফোরাত নদ পর্যন্ত এই ভূমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই প্রতিশ্রুতিকে কেন্দ্র করে জায়নবাদরা ইহুদিদের একত্র করে। ইহুদিরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এবং যুগ যুগ ধরে তারা মার খাচ্ছিল। অবশেষে তারা ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের বাজেল শহরে ৩০টি সংগঠনের প্রায় তিন শতাধিক নেতা মিলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এই সেমিনারের প্রধান ছিলেন হার্জেল। তিনি তার দিনলিপিতে লিখেন যে, ‘ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে অর্থাৎ যখন সব ইহুদি তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন তা অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে। চাই তা পাঁচ বছর পরে হোক বা ৫০ বছর পরে হোক।’ ব্রিটেন ও আমেরিকা কর্তৃক ইসরাইলকে সহযোগিতা করার কারণ

খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে যে, ঈসা ইবনে মারিয়াম আ: কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে আগমন করে সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তার একটি সিংহাসন থাকবে, যেখানে বসে তিনি পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবেন এবং একটি যুদ্ধ সংঘটিত হবে যার প্রতিপক্ষ হচ্ছে এন্টিক্রায়িস্টরা। ক্যাথলিকরা এন্টিক্রায়িস্টদের ব্যাখ্যা করেছেন ইহুদি জাতি দ্বারা। ইহুদিরা চিন্তা করল যদি ক্যাথলিকদের এই ব্যাখ্যা বলবৎ থাকে, তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত ইহুদিদের মার খেয়ে যেতে হবে। তাই তারা এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে মুসলমানদেরকে প্রতিপক্ষ বানালো এবং নিজেদের খ্রিষ্টানদের মিত্র সাজাল। এটিই হচ্ছে, ইহুদিদেরকে খ্রিষ্টানদের সহযোগিতা করার মূল কারণ। এই ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রিটেনের সহযোগিতায় এবং ইহুদিদেরকে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহযোগিতা করেছে আমেরিকা। তারা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার ইসরাইলকে দিয়েছে এবং আরবদের কিছু দাসত্ব প্রতিষ্ঠাকারী প্রতিষ্ঠানও ইসরাইলের সহযোগী।

এই তথ্যের আলোকে স্পষ্ট হলো যে, ফিলিস্তিনিদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে তিন শ্রেণী : এক. ইহুদি, দুই. খ্রিষ্টান, তিন. মুসলমানদের কিছু দাসত্ব প্রতিষ্ঠাকারী প্রতিষ্ঠান। তাই ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করার অর্থ হলো, এই তিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করা।

মুক্তির সংবাদ
ফিলিস্তিনের মুসলমান একদিন বিজিত হবে, জুলুমের জিঞ্জির শেকল থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং ইহুদিদের হত্যা করবে। যার সুসংবাদ স্বয়ং রাসূল সা: দিয়েছেন। নবীজী সা: বলেছেন : ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সত্যের ওপর বিজিত থাকবে। বিরোধী দল তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত’ (মুসলিম : ১৯২০)।

ইহুদিদেরকে হত্যা করা সম্পর্কে রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন : ‘তোমরা ইহুদিদেরকে হত্যা করবে। অতঃপর তাদের ওপর বিজয়ী হবে (ইহুদিরা পাথরের পেছনে লুকাবে)। তখন পাথর বলবে, হে মুসলিম! আমার পেছনে এই ইহুদিদেরকে হত্যা করো’ (তিরমিজি: ২২৩৬)।

ফিলিস্তিনিদের বিজয় খুব সন্নিকটে। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা বিজয়ী হবে। কারণ, যেমনিভাবে সন্তান প্রসবের আগে মায়ের ব্যথা বেড়ে যায়, তেমনিভাবে ফিলিস্তিনবাসীর ওপর জুলুম নির্যাতনের সীমা বেড়ে গেছে। তাই আসুন আমরা সালাউদ্দিন আইয়ুবী র:-এর আদর্শ গ্রহণ করি, ইহুদিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

জাকারিয়া ফরিদী

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com