শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ফরিদপুরে বেড়েছে সূর্যমুখীর চাষ, ক্ষেতে ছবি তোলার হিড়িক

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩

ফরিদপুর শহরতলীর ডোমরাকান্দিতে প্রায় একযুগ আগে বীজ সংগ্রহ করতে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।

তিন একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত বিএডিসির নজরকাড়া সূর্যমুখীর হলুদ আঙ্গিনায় প্রত্যেকদিন সকাল থেকেই দেখা যায় মানুষের আনাগোনা। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত থাকে এই প্রাঙ্গণ। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ-বা ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

বাতাসে দোল খাওয়া সূর্যমুখী বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যেকেউ আন্দোলিত হবেন এটি স্বাভাবিক। কেননা এখানে প্রবেশ করলেই মনে হয়, হলুদের আভায় চারদিকে যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা।

ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রাজিউল হাসান নয়ন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য দেখতে এসেছেন। এসে তার খুবই ভালো লেগেছে। ছবি তুলেছেন, ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।

মাগুরা জেলার শ্রীপুর থেকে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে এসেছেন অলোক সেন নামের এক মোটরপার্টস ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “ফেসবুকে তিনি এ বাগানের ভিডিও দেখেছেন। একসঙ্গে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল তিনি কখনো দেখেননি। তাই এখানে ছুটে এসেছেন।”

শহরের পশ্চিম আলীপুর মহল্লার মাজেদ মিয়া তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাগানে এসেছেন। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে পেরে দারুণ খুশি তারা।

হারোকান্দির এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লা আল নোমান প্রতিদিনই এই হলুদের আঙিনায় আসেন। ফুলের পবিত্রতা আর সৌন্দর্যকে উপভোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, “ফুল আমার ভালো লাগে। বাড়িতেও আমি ফুলের বাগান করেছি। বাগানে সূর্যমুখী ফুলও রাখার চিন্তা করেছি।”

তবে বাগানে প্রচুর লোক সমাগমে বেকায়দায় পড়েছে বিএডিসি। পরিস্থিতি সামালাতে প্রতিষ্ঠানটির তত্বাবধানে থাকা লোকজন হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই বাগানে ঢুকে ফুল ও গাছ নষ্ট করেন বলে অভিযোগ তাদের। কেউ কেউ ফুলের ছবি তোলার জন্য তা ছিঁড়েও ফেলেন।

বিএডিসি ডাল ও তৈল বীজ খামারের উপসহকারী পরিচালক মো. রাশেদ খান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন,  “প্রায় এক যুগ ধরে বিএডিসির এ খামারে চাষ করা হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের। সূর্যমুখী চাষের আবাদ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে বিএডিসি। ক্যান্সার, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সূর্যমুখীর ভূমিকা রয়েছে। এতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। দিন দিন সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও বাড়ছে।”

বিএডিসি এই কর্মকর্তা জানান, এ বছর তিন একর জমিতে রোপণ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুল। এখান থেকে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মন সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদন হবে।

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুরেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলায় প্রায় শতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার হারুকান্দি এলাকার চাষি হুমায়ূন কবির বলেন, “অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম ও অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করছেন। আর ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীরাও ভবিষ্যতে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।”

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ফরিদপুর জেলায় ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জিয়াউল হক ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এই ফুলের চাষ নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয়। প্রতি একর জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com