রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

প্রস্তুত থার্ড টার্মিনাল, ভেতর বাহিরে যা যা আছে

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩

উদ্বোধন হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। আগামী ৭ অক্টোবর ‘স্বল্প পরিসরে’ খুলবে বহুল প্রতীক্ষিত অত্যাধুনিক এই টার্মিনালটি।

টার্মিনাল ও রানওয়ে এক যোগে চালু হলে ৩৭ থেকে ৪২টিরও মতো এয়ারক্রাফট রানওয়েতে এক সাথে থাকতে পারবে। নতুন ভবনটি নির্মাণের পর কারুকাজ ও সাজানোর কাজ প্রায় শেষ। এখন প্রতি বছর এই শাহজালাল বিমানবন্দরের দুই টার্মিনালে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী সেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু নতুন থার্ড টার্মিনাল চালু হলে তা প্রায় আড়াই কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে।

সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাত দিন সমান তালে কাজ করছেন শ্রমিকরা। আগের তুলনায় শ্রমিক বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস দৃশ্যমান হচ্ছে। সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ। এখন চলছে পিচ ঢালাইয়ের জন্য বালু ফেলে সমান করা। পাশাপাশি অন্যগুলোতে আবার পিচ ঢালাইও চলছে। কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, তারা আগামী ৭ অক্টোরের আগেই কাজ শেষ করবেন। ইতোমধ্যে এই থার্ড টার্মিনালে প্লেন অবতরণ ও ওড়ার পরীক্ষা ও মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে। এখনো কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন।

যাত্রীরা যেভাবে প্রবেশ করবেন

শাহজালালের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে যাতায়াতে যে ভোগান্তি পোহাতে হয় তেমনি আর এখানে হবে না। এজন্য যাত্রীদের সুবিধার্থে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুইটি র‌্যাম্প যুক্ত করা হয়েছে। যা থার্ড টার্মিনালের আগমনী ও বহির্গমনে যুক্ত করা আছে। ফলে খুব অল্প সময়ে বিদেশগামী যাত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে টার্মিনালের গেটে পৌঁছবেন। একইভাবে ভোগান্তি ছাড়াই তারা খুব সহজেই বের যেতে পারবেন নিজ নিজ গন্তব্যে। এছাড়া সরাসরি থার্ড টার্মিনালে প্রবেশের জন্য নিচের সড়কও যুক্ত করা আছে।

একইভাবে এলিভেটেড এক্সপেসের সুবিধা শাহজালালের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের জন্যও মিলবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আরেক র‌্যাম্প নামানো হয়েছে বলাকা ভবনের পাশে। এই র‌্যাম্প ব্যবহার করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে যাওয়া যাচ্ছে। এখন দুই টার্মিনালের যাত্রীরা র‌্যাম্প দুটি ব্যবহারও করছেন। আবার এই দুই টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে কাওলা এলাকা থেকে আরেক র‌্যাম্পের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারছেন যাত্রীরা।

টার্মিনালে প্রবেশের পর যাত্রীকে যেখানে যেতে হবে

টার্মিনালের তৃতীয় তলার গেট হয়ে যাত্রী ভেতরে প্রবেশ করবেন। টার্মিনালে প্রবেশের পরই যাত্রীকে যেতে হবে বোর্ডিং ব্রিজে। সেখানে তাকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হবে। এরপর তিনি সোজা চলে যাবেন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। এজন্য সিকিউরিটির জন্য যেসব বিষয় মানা জরুরি তা একজন যাত্রীকে মানতে হবে। সে প্রসেস মানার জন্য হ্যান্ড লাগেজ ও বডি স্ক্যানারে অংশ নিতে হবে। এজন্য নতুনভাবে বসানো হয়েছে নতুন বডি স্ক্যানার মেশিন। এই মেশিনে যাত্রীর শরীরে কোথায় কি জিনিস রাখা হয়েছে তার দৃশ্য পাশে থাকা কম্পিউটারে ভেসে উঠবে।

এরপর যাত্রী তৃতীয় তলা থেকে সিঁড়ি বা লিফট দিয়ে নেমে সোজা চলে যাবেন দ্বিতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলাতেও বড় বড় এলইডি মনিটর রাখা হয়েছে শুধুমাত্র বিমান কখন ছাড়ছে এসব তথ্য জানানোর জন্য। তবে বাংলা ও ইংরেজী দুই মাধ্যমে বার্তাগুলো ভেসে উঠবে মনিটরে। সেখানে তাকে অপেক্ষা করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে স্টিলের বেঞ্চ ও চেয়ার। ডাক পড়লে যাত্রীকে এয়ারক্রাফটে ওঠার জন্য নিতে হবে বোর্ডিং পাস। এরপর তিনি সোজা প্লেনে গিয়ে উঠবেন।

অনদিকে যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা বোর্ডিং ব্রিজ হয়ে সোজা তৃতীয় তলায় যাবেন। সেখানে ইমিগ্রেশন শেষ করে তারা নিচতলায় যাবেন। সেখানে লাগেজ নিয়ে এরপর নিচ দিয়ে গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে তারা নিজ নিজ বাসা বা হোটেলে চলে যাবেন।

নতুন এই টার্মিনালে বিদেশগামী যাত্রীরা পাবেন ডিউটি ফি শপের সুবিধা। তা থাকছে দ্বিতীয় তলায়। এছাড়াও থাকবে মানি এক্সচেঞ্জ ও ফুড কর্নার। একইভাবে নিচেও থাকবে মানি এক্সচেঞ্জ। তবে এগুলো এখনো প্রস্তুত হয়নি।

যাত্রীদের সঙ্গে আগতদের যেখানে রাখা হবে

যাত্রীর সাথে আত্মীয়-স্বজনরা আসেন। এই দৃশ্যটি শুধু এশিয়ার দেশগুলোতেই চোখে পড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশে। এসব বাড়তি লোকজনের ঝামেলা এড়াতে তাদের বসার জন্য ব্যবস্থা থাকছে এই টার্মিনালে। এজন্য তারা যাত্রীর সাথে টার্মিনালে প্রবেশ করবেন। কিন্তু এসময় সময় তাদেরকে আলাদা করে রাখা হবে। সেখানে রেস্টুরেন্ট থাকবে। তারা সেখান থেকে বসে স্বজনরা কিভাবে বিদেশ যাওয়ার প্রসেসগুলো সম্পন্ন করছে তা দেখতে পাবেন। তবে তাদেরকে কোন জায়গায় বসতে দেওয়া হবে তা এখনো ঠিক করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।

এক সাথে ১২০০ এর অধিক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা!

থার্ড টাার্মিনালে এক হাজার ২৩০টি গাড়ি একই সাথে পার্কিং করা যাবে। এজন্য টার্মিনালের বাহিরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা বিশিষ্ট কার পার্কিং জোন তৈরি করা হয়েছে। এটি কাজ শেষ হয়েছে। এখন ছোটখাট কাজগুলো করছেন শ্রমিকরা। নিচ থেকে প্রতিটি তলায় যেতে ইউলুপের মতো রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে আর কোনো যাত্রীকে তার গাড়ি রাখা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। এসব গাড়ি যাতে বেহাত না হয় সেজন্য সিকিউরিটি ব্যবস্থাও থাকছে।

সোমবার গিয়ে দেখা গেল, বোর্ডিং ব্রিজ, ইমিগ্রেশন কাউন্টারের কাজ চলছে। বোর্ডিং ব্রিজে যাত্রীর বিভিন্ন তথ্য যাচাই ও তাকে তথ্য দেওয়ার জন্য কাউন্টারে যাত্রীর মাথার ওপর বরাবর লাগানো হয়েছে বড় বড় স্কিনের এলইডি মনিটর। যেখানে একজন যাত্রী কোন রুটে যাবেন, কখন প্লেন ছাড়বে এবং কে কোন রুটের যাত্রী তা সহজে দেখে নিতে পারবেন। এজন্য এসব মনিটর এখন সচল রেখে পরীক্ষামূলক কাজ চলছে।

বোর্ডিং ব্রিজ হয়ে দক্ষিণে এগুতেই কাঁচে ঘিরে নিয়ে সাদা রঙে লেখা ইমিগ্রেশন। মূলত এই পথ হয়ে যাত্রীরা যাবেন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে, আপাতত ১২টি বোর্ডিং বসবে। তবে এরপর পযায়ক্রমে তা ২৬-এ পৌঁছাবে। এসব বোর্ডিং ব্রিজের সক্ষমতা হবে প্রায় ১২ মিলিয়ন। সাথে আরও দুটি পিআর বৃদ্ধি পাবে। ২৪ মিলিয়ন যাত্রী সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এত যাত্রীর চাপ সামলানো কঠিন। ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র জাপানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজটি দিতে চায় বাংলাদেশ সরকার। তারাও আগ্রহী হয়েছে। তারা কিভাবে কাজ করবে এবং কি পরিমাণ রাজস্ব বাংলাদেশ সরকারকে তারা দেবে এসব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এজন্য পিপিপি অথোরিটি কাজ করছে। তারপর সব কিছু যাচাই বাছাই করে বেবিচক সেই জাপানের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের।

এদিকে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, সফট লঞ্চিং (উদ্বোধনের পর) এখন হলেও অপারেশন হতে আরও সময় লাগবে। কারণ বড় বড় ইকুপমেন্টগুলো বসানো হয়েছে। সেগুলোর ইন্টিগ্রেশন করা হবে। যারা কাজ করবেন তাদেরও প্রশিক্ষণের দরকার আছে। যন্ত্রগুলো পরীক্ষামূলক চালু ও টেস্ট করতে বছরখানেক সময় লেগে যাবে।

অনেকগুলো লাউঞ্জ থাকবে। কানেকটিভিটি থাকবে যাতে সহজে একজন যাত্রী হোটেলে যেতে পারে। এজন্য বেবিচকের সাথে যৌথ মালিকানায় বিমানবন্দরের নিকটে হোটেলও করার প্রস্তুতি চলছে। সবমিলে অপারেশন থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় ঢেলে সাজানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, সফট ওপেনিংয়ের আগে আমাদের টার্মিনালের কাজ শেষ হয়েছে। লিফট, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং, বোর্ডিং ব্রিজ বসে গেছে। এগুলো সফট ওপনিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো। বাকী ১০ শতাংশ কাজ সফট ওপেনিংয়ের পর শুরু হবে। আপাতত আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নেব। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরে আমরা বিমানবন্দরটি সবার জন্য উম্মুক্ত করতে পারব বলে মনে করেন তিনি। সূত্র : ঢাকা মেইল

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com