বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

পেন্টাগনকে টেক্কা, বিশ্বের বড় অফিস ভবন এখন ভারতে

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

বিশ্বের হীরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহর বিখ্যাত। এই শহরটিকে বিশ্বের হীরা ব্যবসার কেন্দ্র বলা হয়। বেশিরভাগ মূল্যবান পাথর রাশিয়া বা আফ্রিকা থেকে খনন করা হয়। সেগুলো বিক্রি করা হয় অ্যান্টওয়ার্প শহরে। কিন্তু মুম্বাই থেকে প্রায় ১৫০ মাইল উত্তরে সুরাটকে ‘রত্ন রাজধানী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে ভারত। একইসঙ্গে সুরাটের ডায়মন্ড বোর্সকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অফিস ভবন। এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফিস ভবন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের পরিচিতি ছিল।

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ছোট শহর সুরাট। এখানে বিশাল শিল্প ও ব্যবসাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পেন্টাগনের রেকর্ডটি আর থাকলো না। ভারতীয় স্থাপত্য সংস্থা মরফোজেনেসিনের পরিকল্পনায় তৈরি করা হয়েছে এই ভবন। ভবনটি নকশার আগেই হীরাসংশ্লিষ্টদের কাজের ধরন জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্থাপত্য সংস্থাটিকে। বর্তমানে এই সুরাট ডায়মন্ড বোর্স ভবনকে ডায়মন্ড কাটা, পলিশ এবং ব্যবসায়ীসহ ৬৫ হাজারেরও বেশি পেশাদার হীরা ব্যবসায়ীর জন্য ‘ওয়ান-স্টপ গন্তব্য’ বা একমাত্র গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

একটি কেন্দ্রীয় মূল ভবন থেকে বেরিয়ে আসা নয়টি আয়তক্ষেত্রাকার কাঠামোর ভবনটি ধারাবাহিকভাবে যুক্ত। ভবনটি ১৫ তলাবিশিষ্ট এবং ৩৫ একরেরও বেশি জমিজুড়ে অবস্থিত।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্বেল মেঝের আলো ঝলমলে ওই স্থাপনাটি, যেখানে চার হাজারের অধিক অফিস রয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় ৩২ বিলিয়ন রুপি অর্থাৎ ৩৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে তৈরি ভবনে লিফট রয়েছে ১৩১টি। সেইসঙ্গে কর্মীদের জন্য ডাইনিং, জিম এবং কনফারেন্স সুবিধা রয়েছে। আকাশছোঁয়া ‘সুরাট ডায়মন্ড বোর্স’ তৈরি হতে সময় লেগেছে ৪ বছর।

সিএনএনের বরাতে ভবনটির স্থপতিরা বলেন, এটি ৭.১ মিলিয়ন বর্গফুট ফ্লোর স্পেস নিয়ে গঠিত, যার অর্থ এটি বিশ্বের বৃহত্তম অফিস বিল্ডিং হিসাবে পেন্টাগনকে ছাড়িয়ে গেছে। আগামী নভেম্বরে ভবন উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে- ভবনটিতে মার্বেল মেঝে এবং ৪,৭০০টিরও বেশি অফিস আছে। অফিসগুলো প্রাকৃতিক আলোতে ভরপুর। যা হীরা কাটা এবং পালিশ করার জন্য ছোট ওয়ার্কশপের জন্য ভালো। প্রকল্পের সিইও মহেশ গাধাভি বলেন, এরই মধ্যে হীরা কোম্পানিগুলো সব অফিস কিনে নিয়েছে। এই ভবনে হাজার হাজার লোককে ব্যবসা করার জন্য ট্রেনে মুম্বাই থেকে প্রতিদিন নিয়ে আসতে হবে না। মুম্বাইসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের জন্য আসা কর্মীদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভবনে রয়েছে। এতে তাদের সময় বাঁচবে বলে দাবি তার।

সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মহেশ গাধাবি বলেন, একটি আন্তর্জাতিক নকশা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভারতীয় স্থাপত্য সংস্থা মরফোজেনেসিসকে কাজের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। পেন্টাগনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি সহজ ছিল না এবং আমাদের সেরকম কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু প্রকল্পের আকার ব্যবসায়ীদের চাহিদার উপর নির্ভর ছিল। ভবন নির্মাণের আগেই অফিসগুরো হীরা কোম্পানিগুলো কিনে নিয়েছিল।

মরফোজেনেসিস বলেছে, ভবনের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ছোট এবং বড় উভয় ব্যবসায়ীরাই একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ পাবেন। একটি লম্বা কেন্দ্রীয় করিডোর দ্বারা সব অফিস সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে সেখানে বসবাসকারীরা একইভাবে সব সুবিধা পাবেন। মূল করিডোর থেকে যে কোনো অফিসে যেতে ৭ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না।

সুরাট ডায়মন্ড বোর্স ভবন ঘিরে ৭ মিলিয়ন লোকের শহর, ‘স্বপ্নের শহর’ নামে একটি বড় পুনঃউন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তাবায়িত হবে। এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং প্রশংসা করছেন এবং দক্ষিণ সুরাটের প্রায় ৭০০ হেক্টরজুড়ে একটি ‘স্মার্ট শহর’ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com