আজকের দিনে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০০ কোটিতে।
যদিও এ বছরের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসেই বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল জাতিসংঘ। পাশাপাশি ২১০০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের জনসংখ্যা কত হবে তারও একটি ধারণা পাওয়া গেছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
বিশেষ এ মুহূর্তটির ক্ষণগণনা শুরু করেছে জাতিসংঘ। দিনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডে অব এইট বিলিয়ন’।
এ মাইলফলকের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এ বছরের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস একটি মাইলফলক বছরে পড়েছে। এটি আমাদের বৈচিত্র্য উদযাপন করার, মানবতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং স্বাস্থ্যে চমৎকার অগ্রগতি উদযাপনের উপলক্ষ; যা গড় আয়ু বাড়িয়েছে, মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও ওষুধের উন্নতির কারণে মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়ায় জনসংখ্যা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশের জন্মহারে উচ্চহারের কারণেও জনসংখ্যা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ বছর সময় লেগেছে ৭০০ কোটি থেকে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছাতে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালেই ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। ৮০০ কোটির মাইলফলকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে ভারত। ১৫ নভেম্বর এই মাইলফলকে (৭০০ কোটির পর) ভারত যোগ করবে ১৭ কোটি ৭০ লাখ । যেখানে চীনের অবদান ৭ কোটি ৩০ লাখ। তবে সামনে এত দ্রুত জনসংখ্যা বাড়বে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়, বিশ্বের জনসংখ্যা ৯০০ কোটির মাইলফলকে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৭ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৯০০ কোটি। পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে এখনো মূলত ভূমিকা রাখছে এশিয়া এবং আফ্রিকা। ২০৩৭ সালেও মূল ভূমিকা রাখবে এই দুই মহাদেশ। তবে ইউরোপের অবদান থাকবে ঋণাত্মক। কারণ এ মহাদেশে জনসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমবে।
তবে জনসংখ্যা ৮৫০ কোটির ঘরে পৌঁছাবে ২০৩০ সালে। ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯৭০ কোটি এবং ১ হাজার কোটি হবে ২০৫৮ সালে। আর ২০৮০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০৪০ কোটিতে পৌঁছে যাবে এবং এ স্তর বজায় থাকবে ২১০০ সাল পর্যন্ত।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যমতে, বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করে ১৮০৪ সালে। এর পর ২০০ কোটির মাইলফলকে পৌঁছায় ১৯৩০ সালে। এর পর দ্রুতই বাড়তে থাকে জনসংখ্যা। ১৯৬০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হয় ৩০০ কোটি। এর মাত্র ১৪ বছর পর ১৯৭৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হয় ৪০০ কোটি। ৫০০ কোটি জনসংখ্যার মাইলফলক স্পর্শ করে বিশ্ব ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৮ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হয় ৬০০ কোটি। এর ১২ বছর পর ২০১০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৭০০ কোটিতে। বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি হতে এবারও সময় লাগছে ১২ বছর।
এবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের মাইলফলকের তুলনায় কম। যেখানে ১৯৬৩ সালে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিকের কাছাকাছি, ২০২২ সালে এসে এ হার দাঁড়িয়েছে দশমিক ৮ শতাংশে। বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিভিন্ন। কিছু দেশে বৈশ্বিক হারের চেয়ে বেশি, আবার কোথাও কম, এমনকি কোথাও জনসংখ্যা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।
জনসংখ্যায় শিশুর সংখ্যা তুলনামূলক কম, সেই সঙ্গে মানুষের আয়ু বাড়ছে। মূলত এ কারণেই শিশুর তুলনায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি থাকছে। পাশাপাশি এখন নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে গড়ে ১০০ কন্যাশিশুর জন্মের বিপরীতে পুরুষ শিশুর জন্ম হয় ১০৬। যদিও প্রত্যাশিত আয়ু আবার নারীর বেশি।
জন্মহার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন। তবে সব দেশেই এ হার কমছে। কোথাও ঋণাত্মক হয়ে গেছে। ১৯৫০ সালে বিশ্বে প্রতিজন নারীর বিপরীতে জন্ম হতো ৫ শিশুর। সেখানে ২০২২ সালে এটি ২ দশমিক ৩। ২০৫০-এ আরও কমে ২ দশমিক ১-এ নামবে। সেই সঙ্গে একদিকে কম শিশুর জন্ম হচ্ছে, আবার মানুষের আয়ু বাড়ছে। ফলে জনসংখ্যায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে জনসংখ্যায় শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর হিস্যা ক্রমেই কমছে।