মানুষ কিংবা প্রাণীর বিভিন্ন দ্বীপে বসবাস করার কথা শোনা গেলেও পুতুলে ভরা দ্বীপ- অবাক ব্যাপারই বটে! তাও আবার ভূতুড়ে পুতুল। কোনোটির চোখ নেই, হাত নেই, নাক নেই। হ্যাঁ মেক্সিকোতে দেখা মিলবে এমনই এক দ্বীপের, যেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা আছে এমন সব পুতুল।
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে একটু দূরে জোচিমিলকো খালে এই দ্বীপ অবস্থিত। দ্বীপটি বেশি বড় নয়, তবে আঁতকে ওঠার জন্য যথেষ্ট। সেখানে দেখবেন গাছের ডালে যেন ফাঁস পরানো হয়েছে পুতুলগুলোর।
স্থানীয়দের ভাষায় ইলসা ডে লাস মিউনিকাস বা পুতুলের দ্বীপ এটি। দ্বীপের চারপাশে জোচিমিলকো খাল। দ্বীপে প্রবেশ করতেই দেখবেন গাছের ডালে ডালে ঝুলছে অসংখ্য পুতুল। কোনোটি বহু বছরের পুরনো, কোনোটি আবার ক’দিন আগের। কোনো পুতুলের আবার হাত নেই, কোনোটির চোখ কিংবা মাথা নেই।
১৯৫০ সালের দিকে ডন জুলিয়ান সানতানা নামে এক ব্যক্তি তপস্যা করতে এই নির্জন জায়গাটি বেছে নেন। তিনি জানান, এই দ্বীপে আশ্রম গড়ে তোলার পর থেকে প্রতিদিন একটি শিশুর আত্নার সঙ্গে তার কথা হয়। সেই আত্না জুলিয়ানের কাছে পুতুল চাইতো। তবে নতুন পুতুল নয়, সে চাইতো বিদঘুটে সব পুতুল, যেগুলো দেখলেই মনে হবে সেটিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। অতৃপ্ত সেই আত্নার অনুরোধ রাখতে প্রতিদিনই জুলিয়ান পুতুল কিনে আনতেন। পুতুলগুলো তিনি ঝুলিয়ে রাখতেন গাছের ডালে। এ ভাবে এক সময় পুতুলের দ্বীপ বানিয়ে ফেলেন জুলিয়ান।
তারও আগে দ্বীপে মৃত মানুষের দেহ পাওয়া গিয়েছিল বলে জানান জুলিয়ান। লাশের সঙ্গে ছিল একটি পুতুল। এ ধরনের অনেক কথা আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে ধীরে ধীরে দ্বীপে মানুষ আসা কমে যায়। এক সময় দ্বীপ নির্জন হয়ে পড়ে। তখনই সেখানে আসেন জুলিয়ান। তিনি গণমাধ্যমে দাবি করেছেন, সেই মেয়ের আত্নার সঙ্গেই তার কথা হতো।
২০০১ সালে মারা যায় জুলিয়ান। সেই ঘটনাও রীতিমতো ভৌতিক। খালে মাছ ধরতে নেমেছিলেন জুলিয়ান এবং তার ভাইয়ের ছেলে। জুলিয়ান তাকে জানান, পানির ভেতর থেকে কেউ একজন তাকে ডাকছে। এরপর সে বছর ২১ এপ্রিল সেই খালে জুলিয়ানের মরদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়।
এই দ্বীপে মানুষের আনাগোনা খুব কম। পর্যটকরা গেলেও যান দল বেঁধে। চারপাশে এত বিভৎস পুতুল দেখে অনেকেই রীতিমতো ভয় পান। অনেকে বলেন সেখানে মৃত মানুষের চিৎকার তারা শুনতে পেয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না- মুখে মুখে এমন অনেক কথাই ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৯০ সালে স্থানটিকে মেক্সিকো সরকার জাতীয় হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে।