১০টা-৫টার চাকরিতে মন বসত না তার। অন্য রকম পেশা চেয়েছিলেন। সেই চাওয়া পূরণও করেছেন। তবে সে জন্য কম খেসারত দিতে হয়নি তরুণীকে। তবু দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি আজ সুখী। কারণ শেষ পর্যন্ত তার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।
বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের সফল নীল ছবির তারকা লুসি ব্যাঙ্কসের কথা। বাঁধাধরা চাকরি, অন্যের অধীনে কাজ করা মোটেও পছন্দ নয় ৩২ বছর বয়সি লুসির। তাই নিশ্চিন্ত জীবিকা ছেড়ে হয়েছেন নীল ছবির তারকা।
ব্যাংকে চাকরি করে যা রোজগার করতেন লুসি, এখন তার থেকে চার গুণ রোজগার তার। ছেলেদের মানুষ করার জন্য কারও মুখাপেক্ষী নন। দুই সন্তানকে নিয়ে সুখের জীবন। যেমন জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন, তেমনই পেয়েছেন ওই অস্ট্রেলিয়ান তরুণী।
লুসি অস্ট্রেলিয়ার পার্থের বাসিন্দা। কর্পোরেটের চাকরি ছেড়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভিডিও তৈরি করেন তিনি এখন। আর এর কাজটা দারুণ উপভোগ করেন। লুসির দাবি, নতুন পেশায় আসার পর থেকে অনেক ভালো মা হয়েছেন তিনি।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্যাংকের চাকরি পেয়েছিলেন লুসি। সেই চাকরি হঠাৎ কিসের তাগিদে ছাড়লেন তিনি? নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ এক গল্প।
লুসির বাবা-মা থাকতেন ভিনদেশে। লুসি পার্থের থেকেই পড়াশোনা করতেন। নিজের খরচ নিজেকে চালাতে হত। বাবা-মায়ের থেকে কোনও সাহায্য পেতেন না। সারা সপ্তাহে স্কুলে পড়াশোনা করতেন লুসি। সপ্তাহান্তে কাজ করতেন। সেই টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া, পড়ার খরচ মেটাতেন। তাই ছোট থেকেই লুসি ছিলেন স্বাবলম্বী। একটি সাক্ষাৎকারে লুসি জানান, তখন তার ১৭ বছর বয়স। একটি বিজ্ঞাপনে দেখেছিলেন, ব্যাংকে কর্মী নিয়োগ করা হবে। যদিও ব্যাংকে কাজ করার কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না লুসির। তবু চাকরির দরকার ছিল। সে কারণেই ইন্টারভিউ দিতে যান তিনি।
লুসি আরও জানায়, অঙ্কে মোটেও ভালো ছিলেন না। হিসাবেও ছিলেন কাঁচা। তবু তার মতো এক কিশোরীকে চাকরিটা দিয়েছিলেন ব্যাংকে কর্তারা। কেন? লুসির ধারণা, তার আত্মবিশ্বাস দেখেই চাকরিটা দেয়া হয়েছিল।
লুসির কাছে ওই ব্যাংকে চাকরি ছিল স্বপ্নের মতো। যদিও সেই স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল। কয়েক বছর পরেই সেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। লুসি জানান, ব্যাঙ্কের কাজে অসম্ভব চাপ ছিল। বড়সড় লক্ষ্য স্থির করা থাকত। যার জেরে নাভিশ্বাস উঠত কর্মীদের।
লুসির কথায়, ‘টাকা ফেরত দিতে পারবেন না জেনেও কিছু লোককে ঋণ দেয়া হত। এই কাজে আমাদের মতো কর্মীদের বাধ্য করা হত।’
লুসি আরও জানায়, তিনি গ্রাহকদের ফোন করে গৃহঋণের জন্য অনুরোধ করতেন। গ্রাহকরা বন্ধক রেখে ঋণের আবেদন করতেন। সেই ঋণের আবেদন আবার অনুমোদন করতেন ম্যানেজার। এভাবে বার্ষিক লক্ষ্যপূরণ করত ব্যাংক।
লুসি জানান, এক বার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সে জন্য তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুঁশিয়ারি দেন কর্তারা। লুসির এ বে মানুষকে ঠকানোর কাজ ভালো লাগত না। ধীরে ধীরে মনে হতে থাকল, অন্য কিছু করা দরকার।
চাকরি নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে, তখনই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় লুসির। দুই সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্বও তার উপর এসে চাপে। লুসি ভাবতে থাকেন, কীভাবে এই ব্যাকেংর চাকরি ছাড়বেন অথচ রোজগার বজায় থাকবে।
সে সময় লুসির এক বন্ধু এগিয়ে আসেন। তিনি একটি সোশ্যাল প্লাটফর্মে নীল ছবির ভিডিও পোস্ট করে রোজগার করতেন। বন্ধুর থেকে তা শুনে লুসির সামনে নতুন দরজা খুলে যায়।
প্রথমে যদিও লুসি বুঝতে পারেননি এই ওয়েবসাইট ঠিক কীভাবে কাজ করে। কী করতে হয় সেখানে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন। তখন আর পিছিয়ে আসেননি লুসি। কারণ দুই সন্তানের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। ওই ওয়েবসাইটে নিজের নীল ছবির ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেন লুসি।
এই কাজটাও প্রথমে সহজ ছিল না। লুসি একটি সাক্ষাৎকারে জানার, মাত্র ২২ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার। কখনও স্ট্রিপ ক্লাবে যাননি তিনি। কী ভাবে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হয়, তা-ও জানতেন না।
কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি এসব ছলাকলা শিখে নেন। তারপর এই জগৎটাকে ভাল লাগতে শুরু করে তাঁর। গত চার বছর ধরে এই নীল ছবির ভিডিও পোস্ট করার কাজই করছেন লুসি। নিজের কাজের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন।
এই কাজে করে সংসার, সন্তানদের সামলাতেও কোনও সমস্যা হয় না লুসির। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেদের স্কুলে পাঠিয়ে নীল ছবি শুট করেন। তারপর আবার ছেলেদের স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। তাদের যথেষ্ট সময়ও দিতে পারেন তিনি।
নতুন এই পেশায় প্রবেশের পর থেকে আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়েছে লুসির। সে কথা জানিয়েছেন নিজেই। এখন নিজেকে এবং নিজের শরীরকে আরও বেশি ভালবাসেন তিনি। কীভাবে সুন্দর দেখাতে হয়, সে সব বুঝে ফেলেছেন।
ছেলেদের খরচ চালাতেও এখন কোনও সমস্যা হয় না। মাসে প্রচুর টাকা রোজগার করেন। শুধু ওই নীল ছবির ওয়েবসাইট নয়, আরও বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা থেকেও অনেক প্রস্তাব পেয়েছেন লুসি। তবে তিনি রাজি হননি।
কেন নীল ছবি করতে রাজি হননি লুসি? তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকার প্রযোজনা সংস্থা থেকেও প্রস্তাব এসেছিল তার কাছে। কিন্তু তিনি যাননি। কারণ তা হলে ছেলেদের লালন-পালনে সমস্যা হত। এখন তিনি ঘরে থেকেই নীল ছবির ভিডিও শুট করেন।
লুসি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ছেলেদের স্কুলে পাঠিয়ে নিজের বিছানাতেই নীল ছবির শুটিং করেন। আর এটাই চালিয়ে যেতে চান। স্টুডিও গিয়ে কাজ করতে চান না।
লুসির কথায়, কাজের চাপের জন্য ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ছিলেন। তখনই ঠিক করেছিলেন, অন্য কারও অধীনে কাজ করবেন না। তাই নতুন করে আর সেই বাঁধাধরা চাকরিতে ফিরতে চান না। কারণ, প্রযোজনা সংস্থার হয়ে নীল ছবির কাজ করা চাকরির মতোই।
এখন লুসি নিজের ইচ্ছায় কাজ করেন। ইচ্ছা না করলে কাজ করেন না। সপ্তাহান্তে নিশ্চিন্তে ছুটি কাটান। দরকারে কাজ কামাই করে ছেলেদের স্কুলেও যান। নিজের ইচ্ছার মালিক তিনি নিজেই। আর এভাবেই দুই ছেলেকে নিয়ে বাকি জীবন হেসেখেলে কাটাতে চান লুসি।