শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন

দেশে চলাচল করে না এমন এয়ার টিকিটে অর্থপাচার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪

লাক্স এয়ার। লুক্সেমার্গের এই এয়ারলাইন্স বিশ্বের ৯৫টি দেশে চলাচল করে। কিন্তু বাংলাদেশে আসে না তাদের বিমান। এমনকি টিকিট বিক্রির কোনও বৈধ অফিসও নেই। অথচ এই এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি হচ্ছে দেশে। একইভাবে টিকিট  কাম এয়ারলাইন্স অর্থাৎ কাবুল এয়ার, এরাও বাংলাদেশে চলাচল করে না। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশে চলাচল করে না এমন অসংখ্য এয়ারলাইন্সের টিকিট মিলছে দেশে। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে ও কেন এসব টিকিট বিক্রি হচ্ছে দেশে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির সহায়তায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো অনুমোদনহীনভাবে এসব টিকিট বিক্রি করছে। টিকিটের টাকাও অবৈধপথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বা দেশে চলাচলকারী এয়ারলাইন্সের চেয়ে ভাড়া কম পাওয়ার জন্য এ ঘটনা বেশি ঘটছে।

যেভাবে ঘটছে কারসাজি

ধরা যাক, অস্ট্রেলিয়াগামী যাত্রী তার টিকিটের জন্য কোনও ট্রাভেল এজেন্সির শরণাপন্ন হন। এরপর তাকে এসব এয়ারলাইন্সে ভ্রমণের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। এতে কম খরচ হবে বলেও জানায় ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই যাত্রী টাকা বাঁচানোর স্বার্থে এসব এয়ারলাইন্সের টিকিট কেনেন।

যেহেতু ওই এয়ারগুলো বাংলাদেশে চলাচল করে না সেহেতু তাকে দুটি এয়ারলাইন্সের টিকিট দেওয়া হয়। প্রথমে দুবাই, এরপর সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াগামী এ ধরনের এয়ারলাইন্স। এখানে ট্রাভেল এজেন্সি অতি গোপনে বিদেশি যেসব এয়ারলাইন্স এই টিকিটগুলো বিক্রি করে তাদের বলে টিকিট ম্যানেজ করে দেয়।

এক্ষেত্রে দুবাইয়ের টিকিটের জন্য যে টাকা ব্যবহার করা হয় সেটিরই শুধু বৈধতা থাকে। আর ওইসব এয়ারলাইন্সের জন্য টাকা বৈধ পথে আর যায় না। ওইসব এয়ারলাইন্সের কাছে টাকা পৌঁছানোর জন্য বেছে নেওয়া হয় অবৈধ পথ। অর্থাৎ অর্থপাচারের মাধ্যমে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বর্তমানে এটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। একটি চক্র যাত্রীদের নানাভাবে বুঝিয়ে এই কাজ করাচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছে বিদেশি কিছু এয়ারলাইন্স। ওইসব এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশে অনুমোদিত কোনও অফিস না থাকলেও দেদার টিকিট বিক্রি করে যাচ্ছে। এসব টিকিট থেকে সরকার কোনও টাকা তো পায়ই না, উল্টো এভাবে টিকিট বিক্রির ফলে টাকাও পাচার হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অতি গোপনে একটি চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে বলেছি। শুধু বিমান মন্ত্রণালয়কে বলেছি এমনটা নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর, এমনকি দুদককেও বলেছি। তারা ব্যবস্থা নিতে না পারলে এটি বন্ধ হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে কিছু ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওঠে। মন্ত্রণালয় ওই সময় তাদের ডেকে কথা বললেই এর মূল হোতারা কারা সেটি বের হয়ে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিএনজি এয়ার, পালএয়ারলাইন্স, ইন্টার ক্যারিবিয়ান এসব এয়ারলাইন্সেরও টিকিট বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই। ট্রাভেল এজেন্সির বনানী, গুলশান কেন্দ্রিক চক্র এ কাজে জড়িত।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এয়ারলাইন্সগুলোর বিষয়ে আমরা মাঝে মধ্যেই বৈঠক করি। তাদের ওপর আরোপকৃত কর ঠিকমতো আসে কিনা সে ব্যাপারেও তদারকি হয়। এখন এ বিষয়ের ওপর অনেক কাজ করতে হবে। যেহেতু নির্দিষ্ট অফিস নাই সেহেতু কারা করছে, কীভাবে করছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করবো।

বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আটাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের সঙ্গে বসবো। তাদের কী কী সমস্যা, সমস্যা নিরসনে তাদের পরামর্শ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সেটি নিয়ে কাজ করবো। তারা আমাদের যে বিষয়গুলো জানিয়েছে তার মধ্যে এই বিষয়টিও আছে। আমরা বিষয়টি দেখবো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com