নিক্সনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে।
নিক্সনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে।
দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশের ৯১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাজউক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে নথি তলব করা হয়েছে।
ফরিদপুর-৪ আসনের তিনবারের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী, যিনি নিক্সন চৌধুরী নামে পরিচিত, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া মৌজায় ৩৮ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করার মাধ্যমে তার সম্পদ গড়ার যাত্রা শুরু করেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, আড়িয়াল খাঁ এবং পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করে নিক্সন চৌধুরী হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন। এ ছাড়া আশপাশের জমির মালিকদের জোর করে জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে প্রায় ১,১০০ বিঘা জমি নিজের স্ত্রী, সন্তান এবং ভাইয়ের নামে দলিল করিয়েছেন।
দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড়
নিক্সন চৌধুরীর নামে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট থাকার অভিযোগ রয়েছে। নিজের গ্রামে কয়েক একর জায়গাজুড়ে একটি চিড়িয়াখানা এবং বাগানবাড়ি তৈরি করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৩ অক্টোবর আদালত নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে সূত্র অনুযায়ী, তিনি ইতোমধ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন।
সহযোগীদের সম্পদের অনুসন্ধান
নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেনের বিরুদ্ধেও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুদকের অনুসন্ধানে শাহাদাৎ হোসেন ও তার স্ত্রীর নামে প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে এক হাজার ৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার পল্লবীতে ১৩ কাঠার জমিসহ এই সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
সম্পদের বিবরণ ও হলফনামা
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, নিক্সন চৌধুরীর নামে ২,০৪২ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে। ২০১৪ সালের হলফনামায় তার কৃষিজমির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ। ফরিদপুরের ভাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় তার নামে প্রায় ২,০০০ শতাংশ জমি রয়েছে। ঢাকার সাভারে ৩.২৮ শতাংশ জমি এবং মাদারীপুরের শিবচরে ৫ কাঠার প্লটসহ আরও জমি রয়েছে।
বিলাসবহুল বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ
নিক্সন চৌধুরীর ঢাকার বনানীতে ৩,৭১৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশানে ৪,৮৯১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং বনানীর ৭৯ নম্বর রোডে একটি বাড়ি রয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দোতলা বাড়ি ও অফিস, ঢাকার পূর্বাচল রাজউকের ৭.৫ কাঠার প্লট এবং সাভারে বাড়ি থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। তার বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-২৬০০ নম্বর জিপ, যার দাম তিনি ৯১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন।
পেশা ও নগদ সম্পদ
হলফনামা অনুযায়ী, তিনি স্বাধীন বাংলা সার্ভিসিং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের অংশীদার, নীপা পরিবহনের পরিচালক, রীতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের পরিচালক এবং এন ডেইরি ফার্মের মালিক। তার নামে নগদ টাকা রয়েছে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকা। তার ও পরিবারের নামে রয়েছে ৮৫ তোলা স্বর্ণালংকার।
দুদকের অনুসন্ধান চলমান
দুদক জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।