বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩

আপন মাতৃভূমির পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-টরন্টো রুটের যাত্রী হবার সৌভাগ্য হয়েছিল গত ৩০ মে। ২২ বছর আগে যখন কানাডাতে অভিবাসী হয়েছিলাম তখন স্বপ্ন দেখতাম আহা এই জীবনে কি নিজ দেশের ফ্লাইটে কি কোনদিন বাংলাদেশে যেতে পারব? আমার সেই স্বপ্ন পুরন হলো গতমাসে যদিও এই রুটটি চালু হয়েছিল গতবছর জুলাই মাসের ১৫ তারিখ। প্রতি সপ্তাহে দুটি সাদা বলাকা তার বিশাল দেহের ভেতর তার দেশের মানুষদের ধারন করে নিয়মিত ঢাকা-টরন্টো সরাসরি আসা যাওয়া করে।

ফ্লাইট দুটি যেন প্রবাসীদের প্রেম ভালবাসা কষ্ট দুঃখের বার্তাবাহী হয়ে উড়ে যায় ঢাকাতে , আবার দেশের প্রিয়জনদের খবর নিয়ে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে উড়ে আসে সুদুর টরন্টো কানাডাতে। তারা যেন অচিন পাখি ( আমাদের ফিরে আসার ফ্লাইটের নাম অচিন পাখি)। এস ডি বর্মনৈর সেই বিখ্যাত গানটির কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দেয় তারা ….কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া । আমার ভাইয়েরে কইয়ো নায়োর নিতে যাইয়া….।

টরন্টোতে প্রবাসী বাঙালিদের অনেকেই আমাকে বলেছেন সার্ভিস কেমন? আমি বলেছি বেশ ভাল, কেবিন ক্রুদের মধ্যে যাত্রী সেবার ইচ্ছা প্রবল,এয়ারবাস ড্রিমলাইনার আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থা সমৃদ্ধ, প্রতিটি সিটের জন্য টিভি আছে, ইকোনোমি, প্রিমিয়ার ইকোনোমি ক্লাস মন্দ নয়। টিকিট মুল্য সাম্প্রতিক তেলের মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় খুব বেশি নয়। উড্ডয়নকাল ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টার ভেতর এবং অন টাইম ।

তবে বিমানের নিজস্ব কেটারিংয়ে খাবার আন্তর্জাতিক মানের নয়। ঘনঘন খাবার পরিবেশন করলেও সেখানে ভাতের আধিক্য বিরক্তিকর, যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিক রোগী আছেন সেটা মনে হয় বিমান কর্তৃপক্ষের মনে নেই। খাবারের ট্রে খুবই সংকুচিত ধরনের ফলে খেতে গেলে খাবার ফ্লোরে ছিটিয়ে পরে। মুরগি খাসি গরুর মাংসের অপশন থাকলেও সব্জির বালাই নাই, শুকনো ঝোলবিহীন মাংস ও ভাত খাওয়া যাত্রীদের জন্য কষ্টকর। অথচ ছোট ছোট প্যাকেটে সবজি সালাদ ফলমুল বেগুন ভাজা, ও বেক করা মাংসের টুকরা থাকলে খাবারটি আন্তর্জাতিক মানের হতে পারে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম জুসের কোন আলাদা অপশন নেই, অরেন্জ জুস নামেরচিনির সরবত ছাড়া পাইন এপল জুস বা ক্যানবেরি জুস বলে কিছুই নেই। কোক ফান্টা স্প্রাইট হল কোমল পানীয় যা কনসেন্ট্রেট সুগারের ডিপো অথচ সেটা যাত্রীদের হাতে দিয়ে বলা হচ্ছে ডায়াবেটিক থাকলে না খেয়ে ফেরত দেন , অন্য অপশন নেই। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ওয়াইন বিয়ারের মত এলকোহল ড্রিন্কস সরবরাহ রাখতে হয় যাত্রীদের

এন্টারটেইনমেন্টের জন্য অথচ মুসলিম দেশের ফ্লাইটের দোহাই দিয়ে এগুলোর কোন সরবরাহ নেই। অথচ টার্কিশ ও সৌদি এয়ারলাইন্সেও মদ সরবরাহ করা হয়। বিমান কর্তৃপক্ষ হয়ত ভেবেছে শুধুমাত্র বাঙালি যাত্রীদের নিয়েই সারাজীবন তাদের ফ্লাইট চলবে অন্য দেশের পর্যটক বা যাত্রীদের দরকার নেই, তাহলে কোন কথা নেই।

শঙ্কিত হই ঢাকা – টরন্টো ফ্লাইট কি শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্ক বা জাপানের রুটের মত বন্ধ না হয়ে যায়। গত বছর শুরুর দিকে বিমানের সিটের একশটা খালি থাকত। তাতে প্রতি ফ্লাইটে আমাদের এক লক্ষ বিশ হাজার ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এখন আর সেদিন নেই আমি ঢাকায় আসা যাওয়ার দিনে কোন সিট খালি দেখিনি। বাংলাদেশী প্রবাসীদের দেশপ্রেম ও নষ্টালজিক মনের দুর্বলতাকে পূঁজি করে হয়ত বিমানের টরন্টো ফ্লাইট আরও কিছুদিন ভাল ব্যবসা করবে তবে বিমানের সার্ভিসে গাফিলতির কারনে বাঙালিদের ভেতরে অবব্যবস্থাপনার অভিযোগ উত্থাপিত হবে তখন যাত্রী কমে যাবে। ফলে দীর্ঘদিন লস করে ফ্লাইট চালানো সম্ভব হবে না।

আমি মনে প্রাণে চাই বিমানের ঢাকা – টরন্টোর এই ফ্লাইট দুটি অব্যাহত থাকুক। এজন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রবাসী বাঙালিদের ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল ও ভুটানের যাত্রীদের আকর্ষিত করতে হবে। তাদের সাথে কানাডা আমেরিকার পর্যটকদেরকেও। এজন্যই বিমানের পরিষেবার মানে কোন কপ্প্রোমাইজ করলে চলবে না। কিভাবে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের ধরে রাখতে হবে সেই দিকটি দেখতে হবে। আমরা প্রবাসীরা টরন্টো এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে যখন উঠি তখন মনে হয় এক খণ্ড বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে গেলাম। আবার ফেরার সময় আত্মপরিজনের বিয়োগ ব্যথাও নিরসন করে একদম টরন্টোতে ঘরের দুয়ারে নামিয়ে দেয় এই অচিন পাখি দুর বলাকা। বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ বিমানের কানাডার ফ্লাইট।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com