সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

টাকা দিয়ে থাকা যায় যেসব দেশে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩

টাকা থাকলে আপনি পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্য থেকেও ঘুরে আসতে পারবেন। বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলো সম্প্রতি মহাশূন্যে পর্যটনের নিত্যনতুন অফার নিয়ে এসেছে। টাকা খরচ করলে পুরো পৃথিবীটাই চষে বেড়ানো সম্ভব। কিন্তু টাকা থাকলেই সব দেশে বসবাসের অনুমতি পাবেন না আপনি? এমনটি হলে গরিব দেশগুলোয় ধনী ব্যক্তিরা আর বসবাস করতেন না। তবে, কিছু কিছু উন্নত দেশ আছে যারা টাকার বিনিময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে বসবাস করার অনুমতি দেয়। পরাগ মাঝির লেখায় জেনে নেওয়া যাক এমন ২৩ দেশ সম্পর্কে।

মাত্রাতিরিক্ত বড়লোকরা এখন শুধু প্রাইভেট জেট, ইয়ট কিংবা হোটেল কিনেই অর্থ ব্যয় করছেন না। তাদের অনেকেই এখন সেকেন্ড হোম বা পাসপোর্টের পেছনেও বিপুল অর্থ ব্যয় করছেন। সাম্প্রতিক জরিপগুলোয় দেখা যাচ্ছে, অন্য দেশের নাগরিকত্ব কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

থাইল্যান্ড : বিদেশিদের জন্য দেশটির সরকার ‘এলিট’ রেসিডেন্সি অফার করেছে। এ অফার অনুযায়ী, আপনি যদি ওই দেশে বসবাস করতে চান, তবে প্রতিবছর আপনাকে তিন হাজার ডলার খরচ করতে হবে। এ ছাড়া সেখানে বসবাসের জন্য সাতটি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্যাকেজটি হলো ২০ বছরের জন্য বসবাসের অনুমতি। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ৬০ হাজার ডলার খরচ করতে হবে। এই প্যাকেজ নিয়ে থাকলে আপনি সরকারি প্রহরী সেবাও নিতে পারবেন এবং এয়ারপোর্টে ভিআইপি মর্যাদা পাবেন। পাঁচ বছর বসবাসের অনুমতির জন্য ‘এলিট ইজি এক্সেস’ প্যাকেজ অনুযায়ী আপনাকে খরচ করতে হবে ১৫ হাজার ২৫৩ ডলার বা ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে, স্ত্রী কিংবা স্বামীকে নিয়ে থাকতে চাইলে পাঁচ বছরের জন্য এককালীন ২৪ হাজার ৪০৫ ডলার ছাড়াও প্রতিজনে আরও ৯ হাজার ১৫২ ডলার করে পরবর্তী সময়ে পরিশোধ করতে হবে।

লাটভিয়া : এই দেশটিতে পাঁচ বছরের জন্য বসবাস করতে চাইলে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪ ডলার খরচ হবে। এ ছাড়া দেশটিতে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ এবং সুদবিহীন সরকারি বন্ড কিনলে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়। পাঁচ বছর পর দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নাগরিকত্বও চাইতে পারেন আপনি। তবে, এ ক্ষেত্রে আপনাকে ওদের ভাষা এবং ইতিহাসের ওপর একটি পরীক্ষা দিতে হবে। বলা হয়ে থাকে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লাটভিয়ান ভাষা আয়ত্ত করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। জানা গেছে, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশটির নাগরিকত্ব এখন পর্যন্ত কেউ পাননি।

সেন্ট লুসিয়া : ক্যারিবিয়ান এই দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার তিনটি উপায় আছে। প্রথমটা হলো, সেন্ট লুসিয়ার অর্থনৈতিক খাতে অন্তত এক লাখ ডলার দান করতে হবে। মানে একেকটি নাগরিকত্বের জন্য এক লাখ ডলার। কেউ তিন লাখ ডলার দান করলে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও করতে পারবেন নাগরিকত্ব পাওয়ার পাশাপাশি। এর বাদে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার খরচ করা নাগরিকরা কোনো এন্টারপ্রাইজ প্রোজেক্টেরও মালিক বনে যেতে পারেন।

ডোমিনিকা : নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দেশটির ন্যাশনাল ট্রান্সফরমেশন ফান্ডে জমা করতে হবে এক লাখ ডলার। তবে, দুই লাখ ডলার খরচ করে চারজনের পরিবারের নাগরিকত্বও পাওয়া যায়। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য ডোনেট করতে হবে দুই লাখ ডলার।

অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা : নাগরিকত্ব ও রিয়েল এস্টেট বা যেকোনো ব্যবসার জন্য খরচ করতে হবে চার লাখ ডলার। আর শুধু নাগরিকত্বের জন্য ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে এক লাখ ডলার জমা করলেই চলবে।

সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস : একেকটি নাগরিকত্ব পেতে খরচ হবে দেড় লাখ ডলার। তবে, একজনের জায়গায় দুজন হলে এর সঙ্গে মাত্র ২৫ হাজার ডলার যোগ করলেই চলবে। আর তৃতীয়জনের ক্ষেত্রে খরচ আসবে মাত্র ১০ হাজার ডলার।

গ্রানাডা : নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে গ্রানাডার ন্যাশনাল ট্রান্সফরমেশন ফান্ডে দেড় লাখ ডলার জমা করতে হবে। আর রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য দিতে হবে সাড়ে তিন লাখ ডলার।

ভানুয়াতু : এখানে নাগরিকত্ব পেতে লাগবে এক লাখ ৫৫ হাজার ডলার। এর সঙ্গে শর্ত হলো, মোট সম্পদের মূল্যমান কমপক্ষে আড়াই লাখ ডলার হতে হবে।

মলদোভা : দেশটির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে অফেরতযোগ্য এক লাখ ইউরো দিতে হবে। এর সঙ্গে এজেন্ট ফি ৩৫ হাজার ডলার, সরকারি ফি পাঁচ হাজার ইউরো ও অন্যান্য খাতে আরও ছয় হাজার তিন শ ইউরো খরচ হবে।

কম্বোডিয়া : কম্বোডিয়ার উন্নয়নে প্রায় তিন লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এরপর সরকারের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কেউ চাইলে সরাসরি আড়াই লাখ ডলার সরকারকে ডোনেট করেও নাগরিকত্ব কিনে নিতে পারেন।

তুরস্ক : তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে হলে কমপক্ষে এক মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের জমি কিনতে হবে। কিংবা চাইলে তুরস্কের ব্যাংকে তিন মিলিয়ন ডলার দিয়েও নাগরিকত্ব কেনা যায়। আরেকটা উপায় হলো, সরকারের কাছে বন্ড সই করে তিন মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করা যায়। সে ক্ষেত্রে, কমপক্ষে ১০০ জন বেকারকে চাকরি দেওয়া হবে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।

গ্রিস : গ্রিসের নাগরিকত্ব পেতে আপনাকে সে দেশের ভূ-সম্পত্তিতে আড়াই লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

পর্তুগাল : দেশটিতে বিদেশিদের বসবাস করার অনুমতি-সংক্রান্ত ‘গোল্ডেন ভিসা’ সম্প্রতি চালু হয়েছে। দেশটিতে বসবাস করতে চাইলে ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য দেশটির কোনো ব্যাংকে আপনাকে এক মিলিয়ন ইউরো স্থানান্তর করতে হবে। কিংবা দেশটির বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তি সেক্টরের অংশ হিসেবে কোনো গবেষণাকর্মে সাড়ে তিন লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে হবে। কিংবা দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কোনো পণ্য উৎপাদনে আপনাকে সাড়ে তিন লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া ওই দেশটিতে পাঁচ লাখ ডলারের সম্পদ কেনা বা দেশটির ৩০ বছরের বেশি বয়স হওয়া কোনো কোম্পানির সংস্কারে সাড়ে তিন লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। দেশটিতে অন্তত ১০টি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলেও আপনি পেয়ে যাবেন কাক্সিক্ষত ‘গোল্ডেন ভিসা’র নাগাল।

মন্টেনিগ্রো :

এখানে অঞ্চলভেদে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য খরচের পরিমাণ ভিন্ন। দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিকত্ব পেতে গেলে কোনো সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে সাড়ে চার লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে হবে। যদিও উত্তরাঞ্চলের জন্য এর পরিমাণটা মাত্র আড়াই লাখ ডলার।

ইউএসএ : আমেরিকান গ্রিনকার্ড পেতে ‘ইবি ৫’ নামে একটি প্রক্রিয়ায় আপনাকে অংশ গ্রহণ করতে হবে। সব শর্ত পূরণ করলে দুই বছর পর সপরিবারে বসবাস করার জন্য আপনাকে সুযোগ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে দেশটির গ্রামীণ অঞ্চলগুলোয় আপনাকে পাঁচ লাখ ডলার বিনিয়োগ এবং অন্তত ১০টি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। অথবা দেশটির কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে আপনাকে এক লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই বিনিয়োগ চালু রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার বছর সময় ব্যয় হতে পারে। এ ছাড়া দেশটির আঞ্চলিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেন, তাহলেও গ্রিনকার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং বিশাল দেশটির যেকোনো রাজ্যে স্বাধীনভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন। তবে, অবশ্যই আপনার মোট সম্পদের পরিমাণ হতে হবে ১০ লাখ ডলার।স্পেন : ইউরোপের দেশ স্পেনেও বিদেশিদের জন্য ‘গোল্ডেন ভিসা’ নীতিমালা আছে। এই ভিসার নাগাল পেতে দেশটির আবাসন প্রকল্পে আপনাকে অন্তত পাঁচ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে হবে। কিংবা স্প্যানিশ কোম্পানিগুলোর অন্তত ১০ লাখ ইউরোর শেয়ার কিনতে হবে। কিংবা এই পরিমাণ অর্থ কোনো স্প্যানিশ ব্যাংকে ডিপোজিট করতে হবে। পাঁচ বছর বসবাসের পর দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করতে পারবেন। আর দশ বছর বসবাস করলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

বুলগেরিয়া : বুলগেরিয়ার নাগরিকত্ব পেতে পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। একই সঙ্গে সরকারের কাছে পাঁচ বছরের বন্ড সই দিতে হয়। এক বছর বাদে একই পরিমাণ অর্থ আবার বিনিয়োগ করতে হয়। পাঁচ বছর পর সরকার সেই বিনিয়োগ ফিরিয়ে দেয়। যদিও, নাগরিকত্ব বিনিয়োগের দ্বিতীয় বছর শেষেই দিয়ে দেওয়া হয়।

কানাডা : কানাডায় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কেবল আট লাখ ডলার বিনিয়োগ করলেই চলে না, আরও অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগের মেয়াদ কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। আবার বিনিয়োগের আগে ওই ব্যক্তি আদৌ বিনিয়োগের ব্যাপারে যোগ্য কি না সেটা যাচাইয়ের জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতা দেখা হবে। মানে এখানে বিনিয়োগ করতে হলে আগে বিনিয়োগের সফল অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এখানেই শেষ নয়, ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ১.৬ মিলিয়ন ডলার হতে হবে।মাল্টা : মাল্টায় নাগরিকত্ব পেতে এক মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। এই অর্থ দিতে হয় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ফান্ডে।

অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতে চাইলে আপনার মোট সম্পদের পরিমাণ হতে হবে অন্তত ১৩ লাখ পাউন্ড। অস্ট্রেলিয়ান কোনো প্রকল্পে আপনাকে পৌনে নয় লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করতে হবে।

সাইপ্রাস : রিয়েল এস্টেটে কমপক্ষে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। রিয়েল এস্টেট ছাড়াও শুধু সাইপ্রাসেই করা যাবে এমন ব্যবসায় একই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়।নিউজিল্যান্ড : ‘ইনভেস্টর ওয়ান’ এবং ‘টু’ প্রোগ্রামের আওতায় আপনি নিউজিল্যান্ডের মতো অনন্য সুন্দর দেশটিতে বসবাস, কাজ এবং পড়াশোনা করতে পারবেন। ওয়ান অনুযায়ী, আপনাকে দেশটিতে অন্তত তিন বছরের জন্য ৫৬ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করতে হবে। এই ভিসার অধীনে আপনার কোনো বয়সের সীমাবদ্ধতা নেই। এমনকি আপনি ওই দেশের ভাষা না জানলেও চলবে। ইনভেস্টও টু ভিসা পেতে আপনাকে অন্তত চার বছরের জন্য ১৭ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার বয়স হতে হবে ৬৫ বছরের বেশি, ভালো ইংরেজি জানতে হবে এবং ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মুদ্রায় দেশটিতে আপনার ১৭ লাখ ডলারের সম্পদ থাকতে হবে।

ব্রিটেন : এখানকার নাগরিকত্ব পেতে দেশটির অর্থনীতিতে ২০ লাখ পাউন্ডের বিনিয়োগ থাকতে হবে। আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর এবং তাকে অবশ্য ইউরোপিয়ান ইকোনমিক এরিয়ার বাইরের কেউ হতে হবে। এই ভিসায় আপনি ব্রিটেনে তিন বছর চার মাস বসবাসের অনুমতি পাবেন। পরে তা আরও দুই বছর বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। দেশটিতে ছয় বছর বসবাস করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য হিসেবে আবেদন করতে পারবেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com