বুধবার জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখন প্রয়োজন দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের অনুমোদন৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণেই জার্মানি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে প্রাণ বাঁচাতে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় নাগরিক। তাদের সবার জন্য আবাসন এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হয়েছে ইউরোপের এই শক্তিশালী অর্থনীতির দেশটিকেও৷
কারণ, জার্মানিতে আশ্রয়ের খোঁজে চলে আসা ইউক্রেনীয়দের আশ্রয়ের জন্য কোনো আবেদন করতে হয় না৷ বরং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার চেষ্টা করে জার্মানি৷
ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শরণার্থীদের বাইরেও, চলতি বছর বিভিন্ন দেশের এক লাখ ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছে জার্মানিতে৷ এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আশ্রয় চেয়ে ছয় হাজার ৬২১টি আবেদন জমা করেছেন জর্জিয়ার নাগরিকেরা৷ আর একই সময়ে মলডোভার নাগরিকদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা এক হাজার ৯০১টি৷
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জর্জিয়ান এবং মলডোভানদের আশ্রয়ের আবেদন অনুমোদনের হার বর্তমানে মাত্র শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ৷
নতুন এই সিদ্ধান্তটি পার্লামেন্টে অনুমোদন হলেও, জর্জিয়ান এবং মলডোভার নাগরিকেরা আশ্রয় চেয়ে আবেদন করতে পারবেন৷ তবে তাদের আবেদন মঞ্জুর করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ হতে পারে৷ এছাড়া দেশ দুটিকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে আইনি অধিকারও সীমিত হয়ে আসবে৷ বিশেষ করে আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর করা না হলে, আপিলের ক্ষেত্রেও তাদের অধিকার কিছুটা কমে আসবে৷ কারণ, মামলা চলাকালীন সময়েও তাদের ডিপোর্ট করা যাবে৷
মন্ত্রিসভায় নেয়া এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফায়েজার৷ তিনি বলেন, জার্মানি না চাইলেও অনেকে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় এখানে আসছেন৷ তাদের নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷
তিনি আরো বলেন, বাতিল হওয়া আশ্রয় আবেদনের দশ ভাগের এক ভাগ জমা হয়েছে জর্জিয়া ও মলডোভা থেকে৷
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে ‘‘এখান আমরা কার্যকরভাবে খুব দ্রুত অনিয়মিত অভিবাসন কমাতে পারব৷’’
মন্ত্রী বলেন, অভিবাসন ইস্যুতে জর্জিয়া এবং মলডোভার সঙ্গে অভিবাসন চুক্তি শেষ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জার্মানি৷ শ্রমবাজারে নার্স, ট্রাক চালকসহ নানা পেশায় দক্ষ কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করতে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে জার্মানি আলাদা আলাদা অভিবাসন চুক্তি করতে চায় বলেও জানান তিনি৷
‘‘যেসব দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সাধারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা যায়, সেখানে সাধারণভাবে কোনও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের আশঙ্কা নেই এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র সুরক্ষা দেয়’’—সেসব দেশগুলোকেই নিরাপদ দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে জার্মানি৷
তবে সরকারের মন্ত্রিসভার নতুন এই সিদ্ধান্তকে ‘সমুদ্রের এক ফোঁটা জল’ বলে সমালোচনা করেছেন বিরোধী খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটরা৷
খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটদের সংসদীয় দলটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ করতে পারেনি।
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর পাশাপাশি, আলজেরিয়া, মরক্কো এবং টিউনিশিয়ার মতো মাগরেব অঞ্চলের দেশগুলোকে নিরাপদ দেশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি৷’’