বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকছেন? সেপারেশন? তার মানে খুব শিগগিরই ডিভোর্স হচ্ছে? কোনো না কোনো ঝামেলা তো চলছেই! কিন্তু এমন কোনো কারণ ছাড়াই বিয়ের পরদিন থেকেই একা থাকা শুরু করেন জাপানি দম্পতিরা। কেন জানেন?
জাপানিরা মূলত ‘সেপারেশন ম্যারেজ’-এ বেশি আগ্রহী। কি বুঝলেন না তো! ধরুন, আপনার বউ এক বাড়ি আর আপনি কয়েক মাইল দূরে অন্য বাড়ি আছেন! অথবা পাশাপাশি বাড়িতে থাকছেন দুজন। বিয়ের পর আপনার জীবনে বিবাহিত জীবনের কোনো পরিবর্তন নেই! আবার আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার কোনো সমস্যাও চলছেনা! দুজনেই খুব খুশী! দুজন দুজনের খবরও রাখছেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছে। দূরত্বে থাকা এমন নব দম্পতিদের বিয়েই ‘সেপারেশন ম্যারেজ!’
এ বিয়েকে আপনি ‘সাপ্তাহিক বিয়ে’-ও বলতে পারেন! বিয়ে করে আলাদা থাকার রীতি এটি। আইনত আপনি বিবাহিত হলেও আপনার প্রতিটা কাজে খবরদারি করার কেউই নেই।বর্তমানে জাপানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই অদ্ভূত বিবাহ রীতি!
সেপারেশন ম্যারেজ মানে হলো আইনত বিবাহিত হলেও সেচ্ছায় যখন কোনো দম্পতি আলাদা থাকেন। এই বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একসাথে থাকেন! তবে এটাও নব দম্পতিদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
জাপানি সংবিধানের ৭৫২ ধারায় স্পষ্টভাবে কিছু বক্তব্য রয়েছে বিয়ে নিয়ে। যেমন-
‘স্বামী এবং স্ত্রী একসাথে থাকবে এবং একে অপরকে সহযোগিতা করবে এবং সমর্থন করবে।’ যার মাধ্যমে স্বামী এবং স্ত্রীর একসাথে বসবাসের বাধ্যবাধকতার কথাই বলা হয়েছে। এছাড়া এই আইনে বলা হয়েছে যে সাময়িক এবং অনিবার্য বিচ্ছেদ, যেমন চাকরির কারণে একা দূরবর্তী স্থানে চলে যাওয়া বা সন্তান প্রসবের জন্য বাড়ি ফিরে যাওয়া এই বিধান লঙ্ঘন করে না।
তবে সেপারেশন ম্যারেজ কিন্তু আলাদা। এখানে দুপক্ষের সম্মতিতেই আলাদা থাকেন দম্পতিরা। কিন্তু বিয়ে করেও কেন এই আলাদা থাকা! এর আছে কিছু ইতিবাচক কারণ। চলুন জেনে নেই জাপানিদের সেপারেশন ম্যারেজের সেই ইতিবাচক কারণগুলো-
১. নিজেকে সময় দেয়াঃ বিয়ের পর অনেক নারী পুরুষই নিজেকে সময় দিতে ভুলে যান। নিজেকে নিয়ে ভাবার জন্য জাপানিদের কাছে সেপারেশন ম্যারেজ একটি আদর্শ বিবাহ পদ্ধতি। এছাড়া এতে নিজেদের কাজেও মনোযোগী হতে পারেন তারা। কেউ কারও কর্মক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেন না। সেপারেশন ম্যারেজে কেউ কারও উপর খবরদারি করেন না।
২. মূল্যবোধের পার্থক্য কম অনুভব করাঃ একসাথে থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মতের অমিল ধরা পরে আর তিল থেকে হয় তাল। ছোট খাটো বিষয়ে ঝগড়া হওয়া তো স্বাভাবিক বিষয়ে গড়ায়। তাই বর্তমানে বেশিরভাগ জাপানিরা মনে করেন আলাদা থাকলে মূল্যবোধের পার্থক্য থাকলেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হবার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।
৩. স্বাধীনতাঃ নারী-পুরুষের সমতার কথা সারাবিশ্বে ফলাও করে বলা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিতে নারীদের এখনও পুরুষের উপর নির্ভরশীলই ধরে নেয়া হয়। তাই নারী-পুরুষের স্বাধীনতায় যাতে বিয়ে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারে তাই এ প্রজন্মের জাপানিরা নিজেদের জন্য এই অদ্ভূত রীতি চালু করেছেন। এতে দম্পতিরা কেউ কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন না।
সেপারেশন ম্যারেজের ক্ষেত্রে সারা সপ্তাহ নিজের মত কাটালেও পার্টনারের জন্য স্পেশাল একটি দিন বরাদ্দ থাকে। যেদিন তারা একসাথে সময় কাটান। ঘুরতে যান অথবা একসাথে ডিনার ডেটে বের হন। শুধু জাপান নয়, অন্যান্য দেশেও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জাপানিদের এই সেপারেশন ম্যারেজ।