বছরের পর বছর গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরীক্ষার পর চীনের তৈরি প্রথম বৃহৎ যাত্রীবাহী বিমান আজ রোববার উদ্বোধনী বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। এ স্বপ্নযাত্রায় ইতিহাসের অংশ হতে চীনের নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে লটারি করে টিকিট দিতে হয়েছে।
সি৯১৯ বিমানটির বাণিজ্যিক যাত্রা চীনের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিমানটি বিশ্বের এয়ারলাইন্স শিল্পে দীর্ঘকালের এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের দ্বৈত রাজত্ব ভেঙে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটিকে বিমান শিল্পে চীনের বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়। চীনের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমানটির বাণিজ্যিক যাত্রা উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পে চীনের শক্তিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
বিমানটি প্রথম আকাশে ওড়াচ্ছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স। তাদের তথ্যানুসারে, ফ্লাইট এমএইউ৯১৯১ সাংহাই হংকিয়াও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আজ স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১১টায় ছেড়ে যাবে এবং বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে।
চীনের কোম্যাক (কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না) নির্মিত বিমানটি গত ডিসেম্বরে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সকে সরবরাহ করা হয়। এর পর গত কয়েক মাসে একাধিক পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের মাধ্যমে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে মার্চ মাসে পাঁচটি সি৯১৯ যাত্রীবাহী বিমান কেনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিমান সংস্থাটি।
দুই ইঞ্জিন যুক্ত বিমানটিতে ইকোনমি ও বিজনেস ক্লাসের ১৬৪টি আসন রয়েছে। এর রেঞ্জ ৫ হাজার ৫৫৫ কিলোমিটার (৩ হাজার ৪৫২ মাইল) পর্যন্ত। এটি এয়ারবাসের এ৩২০ এবং বোয়িংয়ের বি৭৩৭ ন্যারো বডি বিমানের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হবে। এ ধরনের বিমান সাধারণত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সাংহাই সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রগ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, ৩২টি প্রতিষ্ঠান সি৯১৯ মডেলে ১ হাজার ২০০টি বিমানের অর্ডার দিয়েছে।
এ বিমানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন নোজ, ফুসেলেজ (বিমানের কাঠামো), বাইরের ডানা, ভার্টিক্যাল স্টেবিলাইজার এবং হরিজন্টাল স্টেবিলাইজার চীনের কোম্যাকই তৈরি করেছে। তবে ইঞ্জিনসহ কিছু উপাদানের জন্য কোম্পানিটি পশ্চিমা কোম্পানির সহায়তা নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক এবং ফরাসি হাই-টেক শিল্প গ্রুপ সাফরানের যৌথ উদ্যোগ এর ইঞ্জিন তৈরি করা হয়েছে।
এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিমানের মতো উচ্চ প্রযুক্তিতে প্রতিযোগিতায় নামার জন্য চীনের অদম্য সংকল্প রয়েছে। চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।
কোম্যাক গত জানুয়ারিতে বলেছে, তারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বছরে ১৫০টি সি৯১৯ বিমান উৎপাদন সক্ষমতায় পৌঁছানোর আশা করছে। গত এপ্রিলে চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এয়ারবাসের সিইও গুইলাম ফাউরি বলেছিলেন, কোম্যাক বাজারে নতুন প্রতিযোগিতা নিয়ে এসেছে।
সূত্র: সিএনএন ও রয়টার্স