বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

চীনকে টেক্কা দিতে উন্নয়ন সহযোগিতায় আরও উদার হতে চায় জাপান

  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে টেক্কা দিতে নতুন নীতি ঘোষণা করেছে জাপান। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো খাতে আরও বেশি বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে দেশটি। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য কোনো উন্নয়নশীল দেশের অনুরোধের অপেক্ষা না করেই সেসব দেশে অর্থায়ন করার নীতি গ্রহণ করেছে জাপান।

সাধারণত, কোনো উন্নয়নশীল দেশ অবকাঠামো খাতে সহায়তা চাইলে জাপান তাতে সাড়া দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে। কিন্তু নতুন নীতি অনুযায়ী অফার ভিত্তিক এবং প্রচলিত অনুরোধ ভিত্তিক অর্থায়ন—দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যাবে জাপান। দেশটির সংশোধিত উন্নয়ন সহযোগিতা (অডিএ) সনদে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

এই উন্নয়ন সহযোগিতা সনদ জাপানের সরকারি উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচির একটি রূপরেখা। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে পাল্লা দিতে জাপানের মন্ত্রিসভা শুক্রবার (৯ জুন) এই সনদের সংশোধন অনুমোদন করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে এই সনদ সংশোধন করেছিল জাপান।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার লক্ষ্য হলো, তার দেশকে প্রধান দাতা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। জাপান ক্লিন এনার্জি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নিজের সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা মেটাতে আরও উদার হতে চায়। গত মার্চে ভারত সফর করেছিলেন ফুমিও কিশিদা। তখন তিনি গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোতে মানসম্পন্ন অবকাঠামোর জন্য বিনিয়োগের কথা বলেছিলেন।

চলতি অর্থবর্ষে সরকারি উন্নয়ন সহযোগিতা (অডিএ) খাতে ৫৭০. ৯ বিলিয়ন ইয়েন বা ৪.০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে জাপান, যা ১৯৯৭ সালে এই খাতে বরাদ্দের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। ওই বছর এ খাতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১.১৬ ট্রিলিয়ন ইয়েন বরাদ্দ করেছিল জাপান।

অন্যদিকে, আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের অনুমাননির্ভর তথ্য অনুসারে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে চীনের বিনিয়োগ ২০১৯ সালে ছিল ১০০ বিলিয়নের বেশি। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে চীনের বিনিয়োগ কমে আসে।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের মতে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে চীনের বার্ষিক তহবিল এখনও ৬০ থেকে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই বছর তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড শীর্ষ সম্মেলন করার পরিকল্পনা করেছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন অর্থনৈতিক সাহায্যের আকার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

সমালোচকদের অভিযোগ, চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমনভাবে ঋণ দেয় যেন তারা তা শোধ করতে না পারে। ঋণের ফাঁদে ফেলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো ব্যবহারের অধিকার লাভ করে বেইজিং। তবে এ ব্যাপারে জাপানের অবস্থান স্পষ্ট। নতুন অডিএ সনদ অনুসারে, টোকিও কোনো প্রকার অর্থনৈতিক জবরদস্তি ছাড়া এবং উন্নয়নশীল দেশের স্থায়িত্ব ও স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ না করেই সহযোগিতা করবে।

জাপানের অডিএ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো খরচ করতে পারবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে এমন বাস্তবসম্মত কোনো ইঙ্গিত নেই। অডিএ-তে জাপানের জাতীয় আয়ের ০.৪ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। অথচ উন্নত দেশের জন্য এমন খাতে ০.৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড।

জাপান বরাদ্দের আকার না বাড়ালেও জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর দেশগুলোতে ডিকার্বনাইজেশন প্রকল্প এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে পেশাদারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো জ্ঞানের অফার করে পরিমাণের চেয়ে গুণমানগত দিক থেকে বেশি অবদান রাখতে চাইবে। এছাড়া বেসরকারি খাতের তহবিলের সঙ্গে অডিএ বিনিয়োগকে শক্তিশালী করতে অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর দিকেও নজর দেবে টোকিও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্যের জন্য ১৯৫০-এর দশকে অডিএ চালু করে জাপান। ১৯৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বড় দাতার স্থান দখল করে নেয় দেশটি। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার অধীন উন্নয়ন সহায়তা কমিটির সদস্যদের মধ্যে শীর্ষ দাতা ছিল জাপান। ২০০০ সালের পর উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আবার জাপানকে পেছনে ফেলে দেয়।

একসময় জাপানের বিদেশি সহায়তার সবচেয়ে বড় গ্রাহক ছিল চীন। সেদেশের অর্থনীতি সংস্কার এবং উন্মুক্ত করতে ১৯৭৯ সাল থেকে বিনিয়োগ শুরু করে জাপান। কিন্তু চীনে বিনিয়োগ জাপানের পক্ষে যায়নি। তাই গত বছর থেকে চীনে অডিএ প্রকল্প বন্ধ করে দেয় টোকিও।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com