শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন

কানাডা যারা আসবেন এবং আসার পর করণীয়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ক্যানাডা দেশটা প্রাকৃতিকভাবে খুব সুন্দর। বেশ সম্পদশালী ধনী দেশ। বিশ্বে শত কোটি মানুষের স্বপ্নের ভুমি হলেও বর্তমান বিশ্ব মন্দার কারণে দেশটি নতুন ইমিগ্রেন্টসদের স্বপ্ন পুরন করতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আবাসন সংকট, বাড়ি ভাড়া, টিউশন ফী, খাবার, জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, এখানে বসবাসরত কোটি মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

আমি মানুষজনকে এদেশে আসতে উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত; কোনটাই করি না। এটা মানুষের একান্ত ব্যাক্তিগত সিধান্ত। যোগ্যতা থাকলে যে আসতে চায়, সে এমনিতেই আসবে। কোন ব্যক্তি কেন আসতে চায় বা চায় না; সেটা নিয়ে অন্য কারও আগ বাড়িয়ে কমেন্ট করাটা অপ্রাসঙ্গিক, অন্যায়।

কাদের জন্য ক্যানাডা উপযুক্ত?

<> যারা নিজ শিক্ষাগত যোগ্যতা/অভিজ্ঞতার আলোকে সংকল্পবদ্ধ যে তাকে ক্যানাডা যেতেই হবে।
<> যে নিজের কাজ নিজে করে, সব কাজকে সম্মান করতে জানে।
<> যারা “আমি অমুক, আমি তমুক” জাতীয় কথা বলা অপছন্দ করেন।
<> যারা সব পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারে, হ্যা সুলভ মানসিকতার।
<> যারা আত্ত্বীয়/প্রিয়জনদের ছেড়ে দূরে থাকতে পারবেন।

আর যারা বলেন যে দেশে ভালোই আছেন, তাদের এদেশে শুধু কৌতুহলের বসে না আসাটাই ভালো। কারন আপনাকে জীবনযুদ্ধে নামতেই হবে। অনেক আরামপ্রিয় মানুষ যুদ্ধে হেরে আবার দেশে ফিরে যান। তবে যারা বেড়াতে আসতে চান, তারা নির্দ্বিধায় হাসি মুখে বেড়িয়ে যান।

এদেশে স্থায়ী বাসিন্দা হবার পর দেশটা কার কাছে কেমন; এটা নির্ভর করে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সন্তুষ্টির ওপর। যেমন-
<> যে চাকরি পায়নি, তার কাছে ক্যানাডা ভালো না।
<> যে এসে ভালো চাকরি পেয়েছে, তার কাছে ভালো।
<> যে স্টুডেন্ট এদেশে এসেও বাপের হোটেলে খায়, তার কাছে আরামের।
<> যে স্টুডেন্ট কে প্রতিটা পয়সা হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনী খেটে আয় করে পড়াশোনার ফি, জীবিকা চালাতে হয়, তার কাছে বেশ কষ্টের।
<> যারা শুধু দেশের অঢেল টাকা ব্যয় করতে এদেশে পাড়ি জমায়, তারা বাহ্যিকদৃষ্টিতে ভালো থাকলেও হতাশায় ভোগে।
<> যারা এদেশে এসে বছরের পর বছর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে যে আবার দেশে ফিরে যাবে কি যাবে না; তারা ভালো নেই।
<> যারা জানে আর ফিরবার উপায় নেই, কিংবা ফিরবার জন্য আসেনি; তারাই সবচেয়ে ভালো আছে।

[বিঃ দ্রঃ যারা আসলেই ক্যানাডায় মাইগ্রেট করতে চান, তারা নিজে ওয়েবসাইট ভালোমতো ঘেঁটে, সময় নিয়ে, বুঝে, নিজের যোগ্যতা যাচাই করে দেখবেন। অথবা ভালো কনসালটেন্সি ফার্মে যোগাযোগ করবেন। অন্ধের মতো কাউকে অনুরোধ করে বলতে যাবেন না যে- “ভাই আমার জন্য একটু দেখবেন, কোনভাবে ক্যানাডায় আসা যায় কিনা?”। সাহায্য চাইতেই পারেন, তবে আগে আপনাকে নিজে ভালমতো দেখতে হবে। বাস্তবতা হলো পরিবার-প্রিয়জন ছাড়া খুব কম মানুষই পারবে সময় নিয়ে আরেকজনের জন্য ওয়েবসাইট ঘাটতে]

চাকরি কি সব?
চাকরি সব নয়। আপনি যদি আনন্দ খুঁজে নিতে পারেন তবে ক্যানাডা আপনার জন্য। এদেশের ফ্রি চিকিৎসা (অধিকাংশ), বাচ্চাদের ফ্রি পাবলিক স্কুলে ভর্তি করানো নিয়ে ঝামেলা নেই। প্রতিটা এলাকায় স্কুল, হাটবাজার আছে। ঘুরে বেড়ানো, ক্যাম্পিং, ফিশিং ইত্যাদি অনেক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন। অর্থাৎ জীবনযাপন সহজ। আর ঠান্ডা? সেটা তো মেনে নিতেই হবে। যখন গ্রীষ্মকাল আসে, সে আনন্দের কোন তুলনা নেই।

আর এক বস্তা আবেগ নিয়ে শিকড় গেড়ে এক জায়গায় বসে থাকলে হবে না, প্রয়োজনে মুভ/বদলি হতে হবে অন্য শহরে। উন্নতির জন্য।

কীভাবে টিকে থাকবেন প্রথম ক’টা বছর?
প্রথমে এসে অন্যদের চাকচিক্যময় জীবন দেখলে চলবে না, সাধ্যির মধ্যে বাসা খুঁজে নিতে হবে, হিসেব করে চলতে হবে। সুদিন সবারই আসবে। যারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স কার্ড [ বা গ্রিন কার্ড] নিয়ে আসছেন, তাদের জন্য এক থেকে ছয় মাসের ছোট কোর্স অথবা এক থেকে চার বছরের লম্বা কোর্স করে চাকরি পাওয়া যায়। যারা কোর্স শেষ করতে পারে, তারা একসময় মোটামুটি ভালো চাকরি পেয়ে যায়। কোর্স এ ঢুকলে সরকার থেকে শিক্ষা লোন পাওয়া যায়, সেটার সাথে সরকার থেকে পরিবার চালানোর জন্য অর্থ মিলিয়ে, মিতব্যয়ীভাবে সংসার চালানো যায়।

তবে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস’দের পড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে জীবন চালানো এখন প্রায় অসম্ভব। কয়েকবছর আগেও যেটা সম্ভব ছিল। তাই সরকারও আগেভাগে বলে দিচ্ছে স্টুডেন্টসরা পড়তে আসলে হাতে যেন পর্যাপ্ত পরিমান টাকা নিয়ে আসে।

আমি মানুষকে কখনো হতাশ হতে বলি না। যারা স্বপ্ন নিয়ে ক্যানাডায় পা ফেলবেন; তারা খুব সাবধানে এগোবেন। হতাশাগ্রস্ত মানুষের কথা না শুনে সরকারি এমপ্লয়মেন্ট সেন্টারে [এরা বিনামূল্যে রেজ্যুমে বানিয়ে দিতে, কাজ/চাকরি খুঁজে দিতে সহায়তা করে, নতুন কোর্স করতে পরামর্শ দেয়] গিয়ে পরামর্শ নিবেন। আমি এমন মানুষও দেখেছি শুধু কোর্স করে গেছে, কিন্তু নিজের একটা সুন্দর রেজ্যুমে/সিভি এখনো বানাতে পারেনি, এখন পর্যন্ত কোনো জব ইন্টারভিউ ফেইস করেনি। চেষ্টা না করেই সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপায় যে চাকরি পাচ্ছে না। যারা ধৈর্য্য ধরে সঠিক পথে এগিয়ে যায়, তারাই শেষ পর্যন্ত জিতে যায়। ক্যানাডার জন্য নতুন স্টাইলে রেজ্যুমে বানানো অপরিহার্য।

মনে রাখবেন, এদেশে এসে পুরোপুরি নিঃসঙ্গতায় ভুগবেন না। কারণ এখানে বড় শহরে বাঙালি কম্যুনিটিও বেশ বড় আর শক্তিশালী। বাংলা বাজার, রেস্টুরেন্ট, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুজা, মন্দির, মসজিদ, ঈদের জামাত সবকিছুই আছে।

ক্যানাডা সরকার একজন মানুষকে সফল হবার জন্য সব বন্দোবস্ত করে রেখেছে। আপনি কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন, সেটা আসল বিষয়।

মাতৃভূমি আপনাকে চিরকালই আহ্বান করবে। নাড়ির টান যে কি জিনিস, সেটা দূরে না আসলে কখনোই উপলব্ধি করতে পাবেন না। হয়তো একসময় আপনার সব চাহিদাই পুরন হবে।

শুধু পাবেন না মায়ের আঁচলের সেই মন ভালো করা সুবাস!

শুভকামনা!

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com