কানাডা প্রবাসী সিটিজেন সুন্দরী নারী জন্য পাত্র চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কৌশলে প্রায় ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে শামীমা রহমান খান ওরফে সোনিয়া পারভিন ওরফে সীমা (২৯) নামের এক যুবতীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই প্রতারক হলেন চুয়াডাঙ্গা সদরের খরপিটাল চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন ৯ নম্বর সড়ক এলাকার মৃত হাবিবুর রহমাম খান ওরফে ইব্রাহিম আলীর মেয়ে।
প্রতারণা প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক মিয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, পাত্র চেয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন গ্রেপ্তার হওয়া শামীমা রহমান। বিজ্ঞাপনে তিনি উল্লেখ করেন, কানাডার প্রবাসী ধনাঢ্য নারীর জন্য বয়স্ক পাত্র চাই। পাত্র বিবাহিত ও তার সন্তান থাকলেও কোনো সমস্যা নাই। ওই বিজ্ঞাপন দেখে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ নিচের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন।
পরে প্রতারকেরা একটি ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে সিভি পাঠাতে বলেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সিভি পাঠালে তার সিভিতে দেওয়া ফোন নম্বরে কখনো প্রতারক শামীমা রহমান, কখনো তার সহযোগী নুরুল আলম ফোনে কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে দেখা করে আলোচনা করেন।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিয়ের আলোচনা হয়। ওই দিনই তাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। প্রতারকেরা তখন তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে বলে জানায় এবং ভুক্তভোগীকে পাসপোর্ট করতে বলেন। সেই সঙ্গে তারা জানান, কানাডায় যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং, টিকিট, বিয়ের খরচ ও গয়না খরচ দিতে হবে। কথা অনুযায়ী ভুক্তভোগী সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ও তার আগের বউয়ের দেড় ভরি স্বর্ণালংকার দেন।
এরপর ভিকটিমের বাসায় গত ২০ মে শাড়ি, গয়না পড়ে প্রতারক নারী বউ সেজে ভুক্তভোগীকে বিয়েও করেন। কিন্তু ভুক্তভোগী কৌশলে তার শারীরিক সমস্যার কথা বলে রাত্রি যাপন করেননি। তখন প্রতারক শামীমা রহমান তাকে জানায়, কানাডায় যাওয়ার পর তারা এক সঙ্গে থাকবেন।
এদিকে কানাডায় যাওয়ার জন্য প্রতারক নারী তাকে কাগজপত্র দিয়ে গত ২৯ মে ফ্লাইটের কথা জানান। কিন্তু তার দুই দিন পূর্বে (২৭ মে) থেকে প্রতারক শামীমা তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী আজিজের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেন। বিষয়টি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার খালাতো ভাইকে জানান।
তার খালাতো ভাই ২৮ মে একটি পত্রিকায় একই ধরনের আরেকটি বিজ্ঞাপন দেখেন। তখন সে নিজেই পাত্র সেজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে প্রতারক নুরুল আলম ভিন্ন নামে তার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু খালাতো ভাই বুঝতে পেরেছিলেন, আসলে ওরাই সেই প্রতারক। তখন প্রতারকেরা তাকে জানিয়েছে, পাত্রীর বাবা নাই। মা আর এক ভাই কানাডা থাকেন। চাচা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। তখন কৌশলে ব্যবসায়ীর খালাতো ভাই তাকে ধরার জন্য টাকা খরচ করতে থাকে। সেই সঙ্গে তারা পুলিশের সহযোগিতা চান।
অন্যদিকে ওই নারীর মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার দেওয়া ঠিকানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেই ঠিকানায় গিয়ে জানান যায়, সেখানে সে থাকেন না বলে জানতে পারেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
এসআই ফারুক মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরার রাজলক্ষ্মীর একটি রেস্টুরেন্ট থেকে রোববার (২৭ আগস্ট) প্রতারক শামিমা রহমান আটক করে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন এবং আমাকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।’
পরে আসামিকে মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অপরদিকে পলাতক নুরুল আলম ওরফে তানভীরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।