বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

ওমানের শ্রমবাজারে হঠাৎ স্থগিতাদেশ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়ার ওপর দেশটির সরকার ‘হঠাৎ স্থগিতাদেশ’ দেয়ার চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। স্থগিত দেয়ার সময় ওমানের পক্ষ থেকে এটি ‘সাময়িক’ বলা হলেও গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশীদের নামে কোনো ভিসা ইস্যু হয়নি। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অর্ধশতাধিক নারী ব্যুরো থেকে স্মার্ট নিয়ে ওমানে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজারটি কেন এবং কী কারণে এখনো বন্ধ হয়ে আছে সে ব্যাপারে অদ্যাবধি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইং থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। জনশক্তি প্রেরনের সাথে সম্পৃত্তরা বলছেন, ওমানের শ্রমবাজারটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই মার্কেটটি খোলার ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের তৎপরতা তারা দেখছেন না।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশীদের জন্য সব ধরনের ভিসা বন্ধের ঘোষণা দেয় ওমান সরকার। রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি) এর পক্ষ থেকে বলা হয়, সব শ্রেণীর বাংলাদেশী নাগরিকদের নতুন ভিসা ইস্যু স্থগিত কার্যকর হবে। ওমানে টুরিস্ট ও ভিজিট ভিসায় আসা প্রবাসীদের ভিসা পরিবর্তন করার সুযোগও একই সাথে স্থগিত থাকবে।

রয়্যাল পুলিশের এক বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, নীতি পর্যালোচনার আওতায় ওমানে আসা সব দেশের নাগরিকদের জন্য (আরওপি) সব ধরনের টুরিস্ট ও ভিজিট ভিসার পরিবর্তন স্থগিত করছে। এই সিদ্ধান্তের আগে, প্রবাসীরা ভিজিট ভিসায় ওমানে প্রবেশ করে পরে তা কর্মসংস্থান ভিসায় রূপান্তর করতে পারতেন। নতুন আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার ওমান দূতাবাস থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, ওমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের মূল্যায়ন করার পাশাপাশি বাংলাদেশী প্রবাসীদের অবদানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। এমন ঘোষণা আসার পর বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ‘সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করেই এসেছে। এটা খুবই সাময়িক। আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে খুব শিগগির এর সমাধান হবে’। এই ঘোষণার পর চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। একইভাবে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসও এই সিদ্ধান্তকে ওই সময় ‘অস্থায়ী’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৭টার দিকে (বাংলাদেশ সময়) ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর মো: রফিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি রাষ্ট্রদূতের অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মিশন ও কল্যাণ) মো: সাজ্জাদ হোসেন ভূঞার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে এই বিষয়টি আমার দফতর থেকে নয়, কর্মসংস্থান শাখা থেকে দেখেন।

শ্রমবাজার বন্ধের বিষয়ে ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে শুধু বলছেন, আসলে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ ওমান সরকারের নিজস্ব পলিসি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে শ্রমবাজারটি খোলার জন্য। শ্রমবাজার বন্ধ থাকার মধ্যেও ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে ৫৬ জন নারীশ্রমিক ওমানে গিয়েছেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, মূলত ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের ভিসা ইস্যু হয়েছে। সেই হিসাবে যেসব নারী কর্মী এসেছেন সেগুলো তিন মাসের মধ্যে আসতে পারেন। কারণ তাদের ওই সময় থেকে পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত ভিসার (জানুয়ারি) মেয়াদ ছিল।

বলা বাহুল্য, শ্রমবাজার বন্ধের আগে ২০২৩ সালেই ওমানে এক লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩ জন শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম এই শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার প্রচুর রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় অনেক বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছুুু থেকেই পিছিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশটিতে বিদেশী শ্রমিকদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশীরা। যার মোট সংখ্যা সাত লাখ তিন হাজার ৮৪০ জন। এর পরের অবস্থানে আছে ভারত পাঁচ লাখ ৩০ হাজার ২০০ বিয়াল্লিশ জন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com