শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন

এ যেন এক মধুময় মুহূর্ত

  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

আমেরিকা যে মজার দেশ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেন বলছি একথা, জানুন তাহলে। সবাই এখন সাগর পার থেকে শুরু করে অলিতে–গলিতে হেলদি খাবারের ছোট–বড় রেস্তোরাঁ খুলেছে। ভাতের পরিবর্তে গম সেদ্ধ, নানা রকম ডাল এবং বিনস হলো এখন এ যুগের নতুন প্রজন্মের খাদবার। স্বাদ-গন্ধের বালাই নেই, যে খাবারগুলো ছোটবেলায় অপছন্দ করতাম, ঠিক সেই সব খাবার এখন হয়েছে অমৃত। যাই হোক, খাবার দেখে মনে কষ্ট পাচ্ছি, তবুও খেতে হবে তাই খাচ্ছি। দামের কথা নাইবা কই।

রাত ১০টা বাজে, সবাই ঘরে ঢুকেছি, কিছুক্ষণ পর দরজায় নক করার শব্দ শুনতে পেয়েছি। দরজা খুলতেই দেখি ছেলে জনাথান। কী ব্যাপার বাবা, তুমি হঠাৎ? কোনো কিছু না জানিয়ে সরাসরি সাত সাগর আর তের নদী পার করে সরাসরি মিয়ামি? এ এক বিশাল সারপ্রাইজ বাবার আগমন। জনাথানকে আমি বাবা বলে ডাকি। মারিয়া, জেসিকা, জলি ও ভেন্ডেলা সবাই এক এক করে ড্রয়িং রুমে এসে হাজির, শুধু খুশি নয়, মহাখুশির বন্যা বয়ে চলেছে। হাজারও প্রশ্ন হঠাৎ জনাথানের আকস্মিক আগমনের কারণে।

জনাথান আমাদের ছেলে, সে এটিপি টেনিস খেলোয়াড়, হঠাৎ ইনজুরির কারণে খেলাধুলা বন্ধ বিধায় বাড়ি ছেড়ে ছুটিতে সময় কাটাতে হঠাৎ এসে হাজির মা–বাবা, ছোট বোনসহ তার প্রাণপ্রিয় ফুফু জলিকে সারপ্রাইজ দিতে এবং একসঙ্গে সময় কাটাবে বলে। জনাথনের আগমনে আমরা সবাই আপ্লুত।

এ যেন এক মধুময় মুহূর্ত

পুরো পরিবার একত্রে এক মধুময় মুহূর্ত, যা শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করার মতো। ছুটির মধ্যে একদিন জেসিকা এবং ভেন্ডেলা জগদ্বিখ্যাত বাস্কেটবল ক্লাব মিয়ামি হিটসে বাস্কেটবল দেখেছে, আর জনাথান তার এক আমেরিকান বন্ধুর সঙ্গে লিওনেল মেসির ফুলবল খেলা দেখেছে ইন্টার মায়ামির আমেরিকান ক্লাবে।

এছাড়াও ছুটির পুরো একটা দিন বোকা রেতন শহর এবং শহরের সাগর সৈকতে অমীয় দাশ এবং তার পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছি। অমীয় এবং তার সহধর্মিণীর আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে। বিদায় বেলায় মনে হয়েছে, ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো।’

এবারের ভ্রমণ পারিবারিক ভ্রমণ হলেও কিছু কিছু বিষয় ছিল পুরনো এবং নতুন বন্ধুদের নিয়ে। হাভানার আলেক্স সেই নাছোড় বান্দা, আবার ধরেছে তার সেই পুরনো দিনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিতে। অতঃপর পরিকল্পনা করলাম সবাই মিলে একসঙ্গে গাড়িতে করে বেড়াতে যাব কি-ওয়েস্টে। পথে স্মৃতিচারণা করতে করতে এবং পুরানো সেই দিনের কথা শুনতে শুনতে পৌঁছে গেলাম সেই প্যারাডাইস দ্বীপ কি-ওয়েস্টে।

বইতে পড়েছি, আজ ইতিহাসের সামনে দাঁড়ানোর উপলব্ধি সে এক বিশাল ব্যপার। কি-ওয়েস্ট, আমেরিকার সর্বশেষ দক্ষিণের এলাকা। ছোট্ট একটি ভূখণ্ড, ফ্লোরিডার মূল ভূখণ্ড থেকে ১২৯ মাইল দূরে সাগরের মধ্যে। অসম্ভব সুন্দর একটি ড্রাইভওয়ে দিয়ে কানেক্ট করা হয়েছে কি-ওয়েস্টকে।

বামে আটলান্টিক, ডানে গালফ অব মেক্সিকো। একদম সামনের দূরে ক্যারিবিয়ান সি। ক্ষণিকের তরে স্বপ্নের রাজ্যে নীল জলের মধ্য দিয়ে পুলসিরাতের মতো একখান রাস্তা দিয়ে এ যেন হ্যাভেনের দিকে ছুটে চলা!

মজার ব্যাপার হলো কি-ওয়েস্ট পৌঁছানোর পর কিউবার হাভানা ছিল নিকটস্থ ভূখন্ড। তবে খালি চোখে দেখা সম্ভব না। এই লম্বা স্থলভাগ একটি চিকন শলার মতো সাগরের ভেতর চলে গেছে। বিশাল দুই সাগরের মাঝ দিয়ে চলে গেছে ওভারসি হাইওয়ে। এই হাইওয়ে দিয়ে যেতে দুই সাগরের অগাধ নীল জলরাশির যে মোহনীয় রূপ দেখেছি, তা অতুলনীয়। মেঘের ওপরে সোনালি আকাশ, সূর্যের কিরণ পড়েছে সাগরে সেদিনের বিকেলে, সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

এ যেন এক মধুময় মুহূর্ত

কি-ওয়েস্টের আরেকটি পরিচয় রয়েছে, সেটা হলো আর্নেস্ট হামিংওয়ে। এখানে রয়েছে তার সামার হাউস, যা এখন মিউজিয়াম এবং এক অপূর্ব আকর্ষণ বিশ্বজাতির জন্য। হামিংওয়ের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর স্থানটির নাম আরও পরিচিত হয়ে উঠেছে। আলেক্স ও আনালোইয়ের প্রেমের নাম হতে পারত বেদনা কিন্তু অঢেল ত্যাগ, পরস্পরের ওপর বিশ্বাস আর আশ্বাসের সমন্বয়ে বেঁধেছে তারা ভালোবাসার সুখের ঘর। তাই কি-ওয়েস্টের প্রতি এত আকৃষ্ট হয়েছিলাম সেদিন। মায়াভরা মিয়ামি আর সাগর পথে আলেক্সের কি-ওয়েস্টের নৌকাভ্রমণ কেড়ে নিয়েছে মন।

স্মৃতির পাতা থেকে কিছু পুরোনো কথা লিখতে মনে পড়ে গেলো আজ থেকে ২৮ বছর আগের কথা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, জীবনযুদ্ধের সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে, ভালোবাসার টানে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোন, মা-বাবা সবাইকে ছেড়ে কিউবার হাভানা থেকে ছোট্ট নৌকায় করে হাঙ্গরে ভরা সাগর দিয়ে প্রথমে কি-ওয়েস্ট, পরে মিয়ামি, ফ্লোরিডাতে এসেছিল এক প্রেমিক আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে। সেদিনের সেই পুনর্মিলন ভেঙেছিল সীমান্ত, দিগন্ত ও প্রশান্ত।

পরে গড়েছে ভালোবাসার বসতবাড়ি কি-ওয়েস্টের অদূরে আটলান্টিক মহাসাগরের পারে, মিয়ামিতে। বেঁধেছে প্রেমের ঘর ভালোবাসা আর বিশ্বাসের পর, এক সুখি পরিবার। আমাদের ছুটির দিনগুলো চলছে ভালোই যদিও রয়েছে ভ্রমণে আনন্দ ভ্রমণে বিষাদ, মত-দ্বীমত। সেক্ষেত্রে মানিয়ে চলতে এবং ছাড় দেওয়া শেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যা সবাই সুন্দরভাবে ম্যানেজ করে চলছে।

নানা জনের নানা শখ, নানা মত, সে বিষয়গুলো মাথায় রেখে ছুটির প্লান করা খুবই জরুরি যা আমার মেয়ে জেসিকা সুন্দরভাবে ম্যানেজ করে চলছে। গতকাল গিয়েছিলাম ওয়েস্ট পাম বিচে। জনাথানের এক টেনিস বন্ধু থাকে সেখানে। দিনটির পুরো সময় কাটিয়েছি ‘দ্যা ব্রেকারস রিসোর্টে’। রিসোর্টের ভেতর এবং বাইরের সব কিছু দেখে মনে হয়েছিল সে এক অন্য জগৎ। আমাদের ছুটি শেষের পথে, সত্তর ফিরতে হবে ভাইকিং জাতির দেশে। যদিও যেতে মন নাহি চায়, তবুও যেতে হবে কোনো উপায় নাই।

লেখক: রহমান মৃধা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com