সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

এখন চাইলেই ধরা যাবে অর্থপাচারকারীদের

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কার্যকর সহযোগিতা প্রদানে কাজ করে জাতিসংঘের গ্লোবাল অপারেশনাল নেটওয়ার্ক অব ল এনফোর্সমেন্ট অথরিটির (গ্লোবি নেটওয়ার্ক)। গত ১ মার্চ বাংলাদেশ গ্লোবি নেটওয়ার্কের সদস্যপদ লাভ করে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্লোবির সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার, বাড়ি ও গাড়ির মালিকানা অর্জনকারীদের তথ্য পাওয়া সহজ হবে। এতে করে অর্থপাচারকারীদের সহজেই ধরা যাবে। তবে দুদক এখন পর্যন্ত গ্লোবির মাধ্যমে কোনো তথ্য চায়নি। এ বিষয় নিয়ে কমিশন একেবারে চুপ আছে।

এ বিষয়ে মতামত জানতে গতকাল মঙ্গলবার দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। দুদকের একজন পরিচালক বলেছেন, গ্লোবির সদস্যপদ লাভের পর এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত চায়নি দুদক। বিষয়টি নিয়ে কীভাবে কাজ করবে এখন পর্যন্ত তা নিয়ে কোনো কার্যক্রম শুরু করেনি। এখনো কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়নি।

দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, মানিলন্ডারিং মামলা খুবই জটিল প্রকৃতির। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য তা চিহ্নিত করে ফ্রিজ ও ক্রোকের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্ট রিকুয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়। বিদেশে পাচারকৃত সম্পদের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না পেলে এমএলএআর পাঠিয়ে তা ফ্রিজ ও ক্রোক করা যায় না।

মামলা প্রমাণে বর্তমানে তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপর নির্ভর করে দুদক। বিএফআইইউর মাধ্যমে সীমিত আকারে কেবলমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া অস্থাবর সম্পদসহ অনেক তথ্যই পাওয়া যায় না। ফলে বিএফআইইউর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এমএলএআর পাঠিয়ে বিদেশ থেকে মামলা প্রমাণের সহায়ক আলামত খুবই কম পাওয়া যায়।

জানা গেছে, ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশন (আনকাক) আন্তঃদেশীয় দুর্নীতি বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও ইনফরমাল কো-অপারেশনকে উৎসাহিত করছে। বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দুর্নীতির ঝুঁকি কমাতে ২০২১ সালে গ্লোবি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা প্রদানে গ্লোবি নেটওয়ার্ক সারা বিশ্বে ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আন্তঃদেশীয় দুর্নীতি চিহ্নিত, তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম একটি প্ল্যাটফর্মে আনতে ইতোমধ্যে ১১৩টি দেশ ও ১৯৯টি সংস্থা গ্লোবি নেটওয়ার্কের সদস্য হয়েছে। চলতি বছরের ১ মার্চ সদস্য পদ লাভ করেছে বাংলাদেশ।

দুদকের একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ গ্লোবির সদস্যপদ লাভ করায় বিদেশে অর্থপাচার ও সম্পদের মালিকানা অর্জনের তথ্য খুব সহজেই পাওয়া যাবে। এটি জাতিসংঘের একটি সংস্থা হওয়ায় গ্লোবির কাছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্য-উপাত্ত থাকবে। গ্লোবির অ্যাপে অনেক তথ্য—উপাত্ত পাওয়া যাবে। এর বাইরে যেসব তথ্য লাগবে সেগুলোর চাহিদাপত্র পাঠালেই সংস্থা তা সংগ্রহ করে সরবরাহ করবে। এর ফলে একজন বাংলাদেশি যে কোনো প্রক্রিয়ায় বিদেশের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ জমা রাখলে, বাড়ি, গাড়ি, দোকানপাটসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হলে তা দ্রুত পাওয়া যাবে।

দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখার একজন উপপরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, আমরা এখন অনেক তথ্য বিএফআইইউর মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকি। এখন থেকে এসব তথ্য গ্লোবির মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবো। এটি দ্রুত সময়ে পাওয়া যাবে। পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তা ফ্রিজ ও ক্রোকের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু গ্লোবির তথ্য—উপাত্ত মামলা প্রমাণে আলামত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। মামলার আলামত সংগ্রহের জন্য এমএলএআর পাঠাতে হবে। এখন পর্যন্ত যেসব এমএলএআর পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে কয়েকটির আলামত পাওয়া গেছে। একটি এমএলএআর পাঠানোর পর আলামত পেতে ২ থেকে ১০ বছর লেগে যায়। আবার অনেক সময় আলামত পাওয়াও যায় না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com