আমেরিকানদের ভ্রমণ প্রবণতা প্যান্ডেমিকের আগের অবস্থায় ফিরে এলেও পাসপোর্ট ইস্যু বা নবায়নের গতি শ্লথ হয়ে গেছে। ফলে এই সামারে, বিশেষ করে ফোর্থ অব জুলাইএর উইকএন্ডে বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিমানের টিকিট বুকড থাকা সত্তে¡ও যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। অনেকে দুই তিন দফা পিছিয়েও পাসপোর্ট পাচ্ছে না। অনেক পরিবারে যেসব সদস্যর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের রেখেই চলে যেতে হয়েছে ভেকেশনে।
আমেরিকায় বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এসোসিয়েটেড প্রেস। সেই সাথে তারা এয়ারপোর্টে গিয়ে অনেক যাত্রীর সাথে কথা বলে এই তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে। এসোসিয়েটেড প্রেস বলছে, তারা স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে জানতে পেরেছে গত বছর ২২ মিলিয়ন বা ২ কোটি ২০ লক্ষ পাসপোর্ট ইস্যু করেছে। তবে এখন সপ্তাহে ৫০০,০০০ পাসপোর্টের জন্য আবেদন পড়ছে। কিন্তু কর্মীর অভাব এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে পিছিয়ে পড়া পাসপোর্ট ইস্যুর আবেদনের পাহাড় জমেছে। এসোসিয়েটেড প্রেস বলছে, এই তথ্য অস্বীকার করেনি স্টেট ডিপার্টমেন্ট কিংবা পাসপোর্ট এজেন্সি।
অনেক ভুক্তভোগী জানায় তারা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে আগ্রহী তবুও যাতে পাসপোর্ট পায়। অনেক ইমিগ্রান্টের প্রয়োজনীয়তা কেবল আমেরিকার বাইরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য নয়, তা জীবন-মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ নিজ দেশে মৃত্যুশয্যায় জীবনের সাথে যুদ্ধরত স্বজনদের শেষবারের মত দেখতে যাওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখন সেই দেখাটাও পাচ্ছে না অনেকে।
এপি বলছে, পাসপোর্ট সময়মত না পাওয়ায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় অনেক গ্রæপ জেগে উঠেছে। সেখানে এক একজনের গল্প এক এক রকম বিষাদের। বেশির ভাগ গল্পই অর্থ ক্ষতির, স্বজনদের দেখতে না পাওয়া, বিয়েতে উপস্থিত হতে না পারা, বিজনেস মিটিং মিস করার মত জরুরী এবং হৃদয় বিদারক। বিষয়টি নিয়ে সেক্রেটারি অব স্টেট এ্যানটনি বিøংকেনকে হাউজ কমিটির শুনানিতে ডাকা হয়। তিনি অজুহাত দিয়েছিলেন প্যান্ডেমিকের। বলেছিলেন সহসাই গতি ফিরে আসবে। কিন্তু সামারে যে প্রচন্ড চাপ তা সমস্যা সমাধান না করে বরং বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৫২ সালে প্রথমবারের মত আমেরিকায় আইন করা হয় যে প্রত্যেক মার্কিন নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট আবশ্যিক। বর্তমানে আমেরিকার পাসপোর্ট ছাপা হয় ওয়াশিংটন ডিসি ও মিজৌরিতে নিরাপদ জায়গায় (জায়গার নাম উল্লেখ করা হয়নি নিরাপত্তার কারণে)। গত তিন দশকের মধ্যে আমেরিকায় পাসপোর্টধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১০% দ্রæত গতিতে। বস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জে জাগোরস্কি এসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, ১৯৮৯ সালে আমেরিকায় পাসপোর্টধারীর সংখ্যা ছিল ১০০ জনে মাত্র ৩ জন। আর ২০২২ সালে তা দাঁড়ায় ১০০ জনে ৪৬ জন। তিনি বলেন, মানুষের আয় বাড়ার কারণে অনেকে অন্যদেশ ভ্রমণে যেতে চান। সে কারণে পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা বেড়েছে। তার সাথে যোগ হয়েছে ইমিগ্রান্ট বাড়ার সংখ্যা।
এর পাশাপাশি এসোসিয়েটেড প্রেস বলছে, আমেরিকাতে আসার জন্য ভিসা পাওয়াটাও দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। যেমন নতুন দিল্লির আমেরিকান কনসুলেটে এদেশে আসার জন্য ভিসা ইন্টারভিউর অপেক্ষার সময় ৪৫১ দিন, সাওপাওলো কনসুলেটে এই অপেক্ষার সময় ৬০০ দিনেরও বেশি, পাশের দেশ মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটির কনসুলেটে অপেক্ষার সময় ৭৫০ দিন, আর কলোম্বিয়া বোগোটা কনসুলেটে ৮০১ দিন।
পাসপোর্ট ইস্যু বা নবায়নের দীর্ঘসূত্রতা কবে কাটবে কেউ বলতে পারছে না।