দেশে প্রথমবারের মত ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর জন্য আবেদন নিতে ওয়েব পোর্টাল খোলার পর এ পর্যন্ত কোনো আবেদন জমা পড়েনি।
তবে মোবাইলে আর্থিক সেবার কোম্পানি ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আগ্রহী। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে কোম্পানি দুটি।
নগদ টাকায় লেনদেন নিরুৎসাহিত করে ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের উদ্দেশ্য সামনে রেখে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর সিদ্ধান্ত জানিয়ে এ মাসেই নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়, যা ৪২ দিন উন্মুক্ত রাখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ, কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে চাইলে ১ অগাস্টের মধ্যে তা জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, ওই পোর্টাল চালু করার পর এ পর্যন্ত কোনো আবেদন জমা পড়েনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনলাইনে হওয়ায় দিন-রাত যে কোনো সময় উদ্যোক্তারা আবেদন করতে পারবেন। তারপর যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’’
বিকাশ জানিয়েছে, নীতিমালার শর্ত পূরণ এবং নীতিগত অবস্থান ঠিক করে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই তারা আবেদন করবে। সেই লক্ষ্যে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রস্তাবিত কোম্পানির নামে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে ছাড়পত্রও সংগ্রহ করেছে তারা।
বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখনো আবেদন করিনি। ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য অবশ্যই বিকাশ আবেদন করবে। আমরা নীতিমালা পর্যালোচনা করছি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ শেষেই আবেদন করা হবে।’’
অন্যদিকে ‘নগদ’ এর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম সজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখনো নীতিমালার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করছি। যেহেতু বিষয়টি বাংলাদেশে প্রথম, তাই একটু সময় নিয়ে নীতিমালার আলোকে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করবে নগদ।”
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে এমন শর্ত দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, কোনো খেলাপি এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।
স্বল্প অর্থের লেনদেন সহজ ও দ্রুত করতে ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সেবা দিয়ে আসছে বিকাশ, নগদ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়ের মত এমএফএস কোম্পানিগুলো।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজস্ব অ্যাপে এবং ইন্টারনেট ছাড়াই শুধু মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবহার করে এ সেবাটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
এ সেবা মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ২০১০ সালে এমএফএস কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরের বছরের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে এমএফএস সেবা শুরু হয়।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সেবাটি এখন ‘রকেট’ নামে পরিচিত। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। দেশের এমএফএস সেবার বড় অংশই এ কোম্পানির দখলে।
পরে বাজারে আসে ‘নগদ’। এমএফএস কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত লাইসেন্সের অপেক্ষায় রয়েছে ‘নগদ’।
ব্যাংকভিত্তিক মডেলে যাত্রা শুরু করা এ খাতে বর্তমানে ১৩টি এমএফএস কোম্পানি সেবা দিচ্ছে। গত এপ্রিল শেষে দেশে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সারা দেশে ১১ লাখের বেশি এজেন্ট এমএফএস সেবার নেটওর্য়াক পরিচালনা করছে, যেখানে দৈনিক গড়ে এক কোটি বারের বেশি লেনদেন হয় হচ্ছে, টাকার অংকে যার পরিমাণ ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
এর চেয়েও বড় পরিসরে অর্থের লেনদেন করা এবং নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশে চালু হতে যাচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংক।
এ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, শিক্ষার্থীর বেতন, সার্ভিস চার্জ ও ট্রেজারি চালানসহ সরকারি বিভিন্ন ফি আগের চেয়ে কম সময় ও কম খরচে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ঠরা।
বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর