উঠতি বয়সী তরুণদের নৌকায় মনোরঞ্জনের জন্য থাকে নারী ও হিজড়া। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে নৌপথে ভ্রমণ ও চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো অভিযান বা তৎপরতা দেখা যায়নি।
স্থানীয় ও অভিভাবকরা উঠতি বয়সের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। যুব সমাজকে রক্ষায় নদীতে চলাচলকারী নৌকায় গান-বাজনা, নাচানাচি ও বিনোদনের অন্তরালে অশ্লীল কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন ব্যক্তিরা।
বর্ষার মাঝামাঝি সময় থেকে চলছে নৌভ্রমণ। তবে শুক্র ও শনিবারসহ যেকোনো ছুটির দিনে সবচেয়ে বেশি উচ্ছৃঙ্খল যুবক ও স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্রদের দল দেখা যায়। এতে স্থানীয় ও নদীতে ঘুরতে আসা অন্যান্য দর্শনার্থীরা ক্ষুব্ধ। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। ইতিপূর্বে ঘিওরে নৌভ্রমণের সময় নাচানাচির সময় নৌকা থেকে পড়ে তরা এলাকায় বর্ষণ ইসলামনামের এক কলেজ শিক্ষার্থীর মত্যু হয়। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ঘটেছে নৌভ্রমনকারীদের সঙ্গে স্থানীয়দের হাতাহাতির ঘটনাও। নেশা ও জুয়া খেলা নিয়ে নৌকার ভেতরও ঘটছে মারামারির ঘটনা। হচ্ছে নৌকাডুবি। কিন্তু নৌপথের এসব অপরাধ বিষয় নিয়ে থানায় অভিযোগ দেন না ভুক্তভোগীরা।
বেউথা, তরা, জাবরা, ঘিওরসহ কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় ভ্রমণ নৌকাগুলো বিভিন্ন ভঙ্গিতে সাজানো। প্রতিটি নৌকায় ৩০ থেকে ৭০ জন ভ্রমণপিপাসু। হিন্দি ও ডিজে গানের তালেতালে চলছে নারী, পুরুষ ও হিজড়াদের অশ্লীল নৃত্য। পরনে তাদের দৃষ্টিকটু পোশাক। অনেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করে মাতাল অবস্থায় নৃত্য করছে।
মানিকগঞ্জ সদরের বেউথা ঘাট, তরা হয়ে ঘিওরের মধ্য দিয়ে দৌলতপু উপজেলার যমুনা নদী পর্যন্ত এই নৗরুট। ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে ট্রলারে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। অবশ্য পারিবারিক, সংগঠন ও বন্ধু ব্যাচের কয়েকটি ভ্রমণ নৌকায় শালীনতা পরিলক্ষিত হয়।
ভাড়ায় ট্রলার নৌকার মালিক আরশেদ আলী বলেন, নৌকা ভাড়া করার পর বেশিরভাগ লোক কৌশলে কিছু অংশ পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখেন নৌকার মালিকেরা। শুধু নৌকার মালিকই নয় এসব অপকর্মের হোতাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোকজন। এতে করে ভ্রমণে আসা পর্যটক বা পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে ঘুরতে আসা লোকজনকে নানাভাবে বিড়াম্বনার শিকার হতে হয়।
ধলেশ্বরী পাড়ের বাসিন্দা মামুন মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, নৌকা ভ্রমণের নামে চলে নানান অসামাজিক কার্যকলাপ। মাত্রাতিরিক্ত শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে চলে নৌকা। দেখা যায় কথিত নর্তকী, যৌনকর্মী ও হিজড়াদের অশ্লীল নৃত্য ও মাদক সেবন। মূলত মোটা অঙ্কের টাকায় তারা এ নৃত্য করে। চলে অনেক রাত পর্যন্ত।
নদীর পাড়ে সপরিবারে ঘুরতে আসা মোবারক হোসেন বলেন, ছুটির দিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘিওর পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে লজ্জায় পড়ে গেছি। নৌকায় থাকা উচ্ছৃঙ্খল যুবকেরা নদী পাড়ে মেয়ে মানুষ দেখলেই চিৎকার-চেঁচামেচি, অশালীন বাক্য ও অঙ্গভঙ্গি করে। আমার মতো আরও অনেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।
প্রাণের বন্ধুমহল ব্যানার সম্বলিত নৌকা ভ্রমণে আসা আওলাদ হোসেন বলেন, বন্ধুরা মিলে নৌকা ভ্রমণে এসেছি সকালে। চলবে রাত পর্যন্ত। আমরা খুব উপভোগ করছি। নৌকা ভ্রমণে এসে একটু আনন্দ ফুর্তি করতেই পারি।
বানিয়াজরী ইউপি সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দিনে নৃত্যের মাধ্যমে ‘আনন্দ’ করলেও রাতে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় অনেকেই। এতে যেকোনো সময় ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, নৌকাডুবি, হানাহানিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।
তরা এলাকার নদী পাড়ের রমজান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পঙ্কজ পাল বলেন, নৌকা ভ্রমণ আনন্দদায়ক। কিন্তু কিছু উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা ভ্রমণটাকে নষ্ট করছে। ভ্রমণের নামে তারা অশ্লীল নৃত্য ও অসামাজিক কার্যকলাপ চালায়। এছাড়া তারা ক্লাস চলাকালে মাত্রাতিরিক্ত শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করছে।
ঘিওর ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ভ্রমণের নামে তারা অশ্লীল নৃত্য ও অসামাজিক কার্যকলাপের অনেক ঘটনা চোখে পরে। এতে অভিভাবক ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
ঘিওর থানার ওসি মো. আমিনুর রহমান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নৌভ্রমণের নামে মাদক সেবন ও অশ্লীলতা বন্ধে পুলিশের নজরদারী বৃদ্ধি করা হবে। নৌপথে অভিযানের জন্য নৌপুলিশ রয়েছে।
নৌ পুলিশের ওসি (শিবালয় জোন) মিজানুর রহমান বলেন, মানিকগঞ্জে বিশাল এলাকা নৌপথ। বেউথা থেকে ঘিওর হয়ে দৌলতপুর পর্যন্ত পুলিশের নজরদারী বৃদ্ধি করা হবে।