শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

অসুস্থ পাইলটকে জোর পুর্বক ফ্লাইটে পাঠালো বিমান

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

নিজকে অসুস্থ ঘোষনা করেও রেহায় পাননি বিমানের একজন সিনিয়র পাইলট। তাকে অসুস্থ অবস্থায় জোরপুর্বক একটি আর্ন্তজাতিক ফ্লাইটে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। যার খেসারত হিসাবে মাঝ আকাশ থেকে ফ্লাইটটি নিয়ে ফেরত এসেছেন ওই অসুস্থ পাইলট। এই ঘটনায় চরম যাত্রী দুর্ভোগ ও আর্ন্তজাতিকভাবে বিমানের ফ্লাইট সেফটির বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। লোকসান গুনতে হয়েছে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার বেশি অর্থ।

ফেরত আসায় নতুন পাইলট দিয়ে ৫ ঘন্টা পর ফের ওই ফ্লাইটটি গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়নি।

জানাগেছে, অসুস্থ পাইলট মাঝ আকাশ থেকে ফেরত এসে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিভিল এভিয়েশন কতৃপক্ষের কোন অনুমোদন না নিয়ে ফের ফ্লাইট পরিচালণা শুরু করেন। এসব ঘটনায় আর্ন্তজাতিকভাবে বিমানের ফ্লাইট সেফটির বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একজন পাইলট যে কোন সময় নিজকে অফিসিয়ালী সিক বা অসুস্থ ঘোষনা করতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী কোন পাইলট যদি অফিসিয়ালী নিজকে সিক বা অসুস্থ ঘোষনা করেন তাহলে বিমান ওই পাইলট নিজকে সুস্থ ঘোষনা না করা পর্যন্ত ফ্লাইট দিতে পারবে না।

নিয়ম হলো ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ওই পাইলট যদি নিজকে সুস্থ ঘোষনা না করেন তাহলে বিমানের প্রধান ডাক্তারের (সিএমও) মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে ওই পাইলটকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। আর যদি ওই পাইলট হাসপাতালে ভর্তি হন তাহলে তাকে অবশ্যই সিভিল এভিয়েশন কতৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে তারপর ফ্লাইট পরিচালণা করতে হবে।

নিজকে অসুস্থ ঘোষনা করা ওই পাইলটের নাম ক্যাপ্টেন মাকসুদ আহমেদ। তিনি বিমানের সাবেক আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহম্মেদের ভাই। জানাগেছে গত ১৪ মার্চ ক্যাপ্টেন মাকসুদ ব্যাক পেইনের কথা বলে লিখিতভাবে নিজকে অসুস্থ ঘোষনা করে ফ্লাইট পরিচালণা করতে পারবেন না বলে জানান। কিন্তু তারপরও বিমানের সিডিউলিং বিভাগ জোর পুর্বক তার সিক রিপোর্টটি গ্রহন না করে তাকে ফ্লাইট পরিচালণার জন্য বাধ্য করেন। তার বাসায় বিমানের গাড়ি পাঠান। এতে অসুস্থ থাকার পরও মাকসুদ ফ্লাইটে আসেন।

বিজি ৩২৫ এর ওই ফ্লাইটটি সেদিন ঢাকা থেকে দোহা যাওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইটে ৩শর বেশি যাত্রী ছিলেন। জানাগেছে, ক্যাপ্টেন মাকসুদ ফ্লাইট নিয়ে কলকাতা পর্যন্ত যাওয়ার পর তার ব্যাক পেইন চরম আকার ধারন করেন। এক পর্যায়ে তিনি ফাস্ট অফিসারের (কো পাইলট) সঙ্গে কথা বলে ফ্লাইটটি ফেরত নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় এক ঘন্টা তিনি চরম ঝুকিপুর্ণভাবে বিমান চালানোর পর ফ্লাইটটি ঢাকায় নিয়ে আসেন। এরপর সরাসরি ঢাকার একটি নামিদামি হাসপাতালে ভর্তি হন।

প্রশ্ন হল অসুস্থ ঘোষনা করার পরও কেন বিমান পাইলট ক্যাপ্টেন মাকসুদকে দিয়ে ফ্লাইট করালো? বিমানে তো আরো অনেক পাইলট আছেন। তাহলে কেন সাড়ে ৩শর বেশি যাত্রীকে ঝুকির মধ্যে রেখে একজন অসুস্থ পাইলটকে দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হলো! এভাবে বিমানের ফ্লাইট অপারেশনকে যারা বার বার প্রশ্নের মুখে ফেলছেন তাদের কি কোন বিচার হবে না? এই ঘটনায় যদি মাঝ আকাশে ফ্লাইটটি দুর্ঘটনায় পতিত হতো তাহলে এর দায়ভার কে নিতো?

সাড়ে ৩শ‘র বেশি পেসিঞ্জারকে নিয়ে এভাবে ঝুকিপুর্ণ ফ্লাইট পরিচালনার অর্থ কী? আন্তজাতিক আইন অনুযায়ী এটি বড় ধরনের অপরাধ। আর্ন্তজাতিক সিভিল এভিয়েশন কতৃপক্ষ (আইকাও) জানতে পারলে বিমানকে বড় ধরনের অর্থ জরিমানা করতে পারেন। একইভাবে বিমানের লাইসেন্সও বাতিল করতে করতে পারে। অথচ এতবড় ঘটনার পরও এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। কোন তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়নি।

বিমান সুত্রে জানাগেছে কলকাতা পর্যন্ত গিয়ে ফ্লাইটটি ফেরত আসায় এবং নতুন করে ফের ফ্লাইট পরিচালণা করায় জ্বালানী তেলসহ অন্যান্য খাতে বিমানের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার বেশি অর্থ। পাশাপাশি যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com