দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ হয়ে গেল। নিউইয়র্কের স্কুলে সামার ভেকেশন শুরু হয়েছে ২৮ জুন থেকে। বিভিন্ন উপলক্ষে বছরে ৪ বার সপ্তাহখানেকের জন্য রিসিস থাকলেও সামার ভেকেশন অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য অনেক প্রত্যাশিত। এই প্রায় ৯ সপ্তাহ তারা কি কি করবে, কোথায় কোথায় যাবে, এসব যেমন ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই পরিকল্পনা করে, তেমনই তাদের অভিভাবকরাও। সামার ভেকেশন শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের হলেও অনেক কর্মজীবী বাবা-মায়ের জন্য তেমনটি নয়। কারণ বাড়িতে থাকলে তাদের দেখাশোনার জন্য বয়স্ক কাউকে থাকতে হয়। সে জন্য অনেক বাবা-মা এই সময় সামার স্কুলে পাঠায়। যদিও সামার স্কুল অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত স্কুলের মত পূর্ণকালীন নয়। যেহেতু সামার ভেকেশন হবেই, তাই এই বিষয়টি অভিভাবকরা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করেন। অনেকে, বিশেষ করে নতুন ইমিগ্রান্টরা হয়ত সেভাবে পরিকল্পনা করেন না।
- সামার ভেকেশন ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি সুবিধাও বটে। যারা যে সাবজেক্টে দুর্বল তারা এই সময়ে সেই বিষয়ে বিশেষ কোচিং গ্রহণ করতে পারে। যাদের একাডেমিক সাবজেক্টের বাইরে (এক্সট্রাকারিকুলাম) আগ্রহ আছে, তারা সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে। যারা ইংরেজিতে দুর্বল (নতুন ইমিগ্রান্ট) তারা ইংরেজি শেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যারা ক্রিয়েটিভ রাইটিংএ আগ্রহী, তারা এই ভেকেশনে লেখালেখি করতে পারে।
- নিউইয়র্ক সিটির স্পেশালাইজড হাইস্কুলে ভর্তির পরীক্ষা বেশ প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক। এর জন্য প্রস্তুতি দরকার। প্রস্তুতি প্রয়োজন এসএটি, এসিটি বা রিজেন্টস টেস্টের জন্যও। এই ভেকেশনে মা-বাবারা তাদের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন টিউটোরিয়ালে পাঠিয়ে এই বিষয়গুলোর প্রস্তুতি গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারেন।
- সামারে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন বড় সিটিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা আয়োজন হয়। নাটক, কনসার্ট, ফেয়ার ইত্যাদি। মা-বাবা ছেলেমেয়েদের সেসব আয়োজনে নিয়ে যেতে পারেন। এইসব আয়োজনে যেতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো টিকিট লাগে না। তবে কোনো কোনো আয়োজনে সীমিত আসনের জন্য প্রি-রেজিস্ট্রেশন করা প্রয়োজন।
- মা-বাবারা সামারে ছেলেমেয়েদের নিয়ে যেতে পারেন বিভিন্ন মিউজিয়মে, চিড়িয়াখানায়, এ্যাকুরিয়ামে, বুকশপে, পাবলিক লাইব্রেরিতে। তাদের জন্য বই কিনে দিতে পারেন যাতে বইএর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল নন, তারা পাবলিক লাইব্রেরিতে নিয়ে গিয়ে বই আনার ব্যবস্থা করতে পারেন। বাবা-মায়েরা চাইলে ছেলেমেয়েদেক নির্দিষ্ট কিছু বই দিয়ে সামার ভেকেশনে পড়া বাধ্যতামূলক করতে পারেন।
- মা-বাবারা সামার ভেকেশনে ছেলেমেয়েদের বাংলা স্কুলে, মিউজিক ক্লাসে, ড্যান্স ক্লাসে ভর্তি করাতে পারেন, যাতে এই সময়টুকুতে তাদের মা-বাবার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি টান তৈরি হয়।
রঅনেক বাবা-মা পরিকল্পনা করেন এই সামারে ছেলেমেয়েদের নিয়ে দর্শনীয় স্থানে যাবেন কয়েকদিনের জন্য। আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তারা মিশরের পিরামিড দেখতে যাবে নাকি এরিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দেখতে যাবে, ওয়াশিংটন ডিসি যাবে নাকি লিবার্টি বেল দেখতে যাবে।
- বাবা-মায়েরা ইচ্ছা করলে নিকটস্থ খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস দেখাতেও নিয়ে যেতে পারেন। যেমন হার্ভার্ড বা এমআইটি, ইয়েল বা প্রিন্সটন, ইউপেন বা কলাম্বিয়া।
- অনেক বাবা-মা পরিকল্পনামাফিক ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশেও গেছেন সামার ভেকেশনের শুরুতেই। দেশের প্রতি ভালোবাসা তৈরির জন্য সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- ছেলেমেয়েদের মনে এমন এক অনুসন্ধিৎসা তৈরি করতে হবে যাতে তারা নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানায়, জীবনের অর্থ অনুধাবন করে।
- এই সামারে ছেলেমেয়েরা যাতে সারারাত জেগে খুব দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার মত বদভ্যাস তৈরি না করে সে দিকেও মা-বাবাকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদেরকে ফিজিক্যালি এ্যাকটিভ থাকতে হবে।
● ছেলেমেয়েদের জার্নাল লেখার জন্য পরামর্শ দিতে পারেন বাবা-মা।
Like this:
Like Loading...