সোমবার ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি এ তথ্য জানান৷
মেলোনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন গত বছর৷ তার দল ব্রাদার্স অব ইটালির সবচেয়ে বড় নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল সরকার গঠন করার পর ইটালিতে
অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা৷ চরম ডানপন্থি দলের নেত্রী হিসেবে মেলোনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করছিলেন৷ তা সত্ত্বেও ভূমধ্যসাগর হয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইটালিতে প্রবেশ হু হু করে বেড়েছে৷ ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় অবৈধ পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইটালিতে প্রবেশের হার অনেক বেড়েছে৷ গত বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে যেখানে মোট ৮৮ হাজার অভিবাসনপত্যাশী ইটালিতে পা রেখেছিল, চলতি বছর একই সময়ে সেই সংখ্যাটা বেড়ে এক লাখ ৪৫ হাজার হয়েছে৷
মেলোনি সরকার মনে করে, আলবেনিয়ায় দুটি অস্থায়ী আশ্র্রয় শিবির গড়ে সাগরপথে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সেখানে রেখে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব৷ সোমবার রোমে আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা এবং ইটালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি এমন আশ্রয় শিবির নির্মাণের বিষয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষর করেন৷
চুক্তি সম্পাদনের পর মেলোনি জানান, ‘রিসিপশন সেন্টার’, অর্থাৎ অস্থায়ী আশ্রয় শিবির দুটি নির্মাণ করা হবে আলবেনিয়ার শেংজিন এবং জাদার অঞ্চলে৷ নির্মাণের সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে ইটালি সরকার৷ আশ্রয় শিবিরগুলোর নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই শেষ করে প্রাথমিকভাবে সেখানে তিন হাজার অভিবাসনপত্যাশীকে রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ তবে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে ধারণক্ষমতা বাড়াতে বাড়াতে এক সময় বছরে ৩৬ হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সেখানে রাখা যাবে বলে তিনি আশা করেন৷
আলবেনিয়ার রিসিপশন সেন্টারে কে, কেন থাকবেন?
আলবেনিয়ার শেংজিন এবং জাদার অঞ্চলে দুটি রিসিপশন সেন্টারে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং অন্তঃসত্ত্বা নারী ছাড়া বাকি সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রাখা হবে৷ তবে কাউকেই দীর্ঘদিন রাখা হবে না৷ অভিবাসনের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে যাদের আবেদন গৃহীত হবে, তাদের নিয়ে যাওয়া হবে ইটালিতে আর যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে আলবেনিয়া সরকার৷ সোমবার আলবেনিয়ায় নির্মিতব্য অস্থায়ী আশ্রয় শিবির দুটোর সম্পর্কে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো হয়েছে, এক, আশ্রয় শিবির পরিচালিত হবে ইটালির আইনে, দুই, শিবিরের বাহ্যিক নিরাপত্তার যাবতীয় বিষয় দেখভাল করবে আলবেনিয়া৷
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনের আগে ইউরোপের বাইরে এমন অস্থায়ী আশ্রয় শিবির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মেলোনির দল ব্রাদার্স অব ইটালি৷ সরকার গঠনের পর উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছে মেলোনির সরকার৷ কিন্তু সে অঞ্চলের কোনো দেশ এমন আশ্রয় শিবির নির্মাণে রাজি হয়নি৷ আলবেনিয়া রাজি হয়ে চুক্তিও সাক্ষর করায় জর্জা মেলোনি খুব খুশি৷ এতে তিনি ইউরোপের জন্য কল্যাণকর কিছু করার আনন্দ পাচ্ছেন- এমন ইঙ্গিত দিয়ে ইটালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ আমার বিবেচনায় এটা সত্যিকার অর্থেই একটি ইউরোপীয় চুক্তি৷ অভিবাসীদের স্রোত-ব্যবস্থাপনার কাজ যে সবাই মিলে করা সম্ভব- এটি (চুক্তি) তা দেখিয়ে দিলো৷”
ইটালির বিরোধী দলের সংসদ সদস্য আঞ্জেলো বনেলি তা মনে করেন না৷ তার মতে, ইটালি আর আলবেনিয়া সরকারের এ চুক্তি ‘‘ কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লংঘন৷”