নির্ধারিত সময়ের আগেই দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যটক রেল চালু করা হবে। এতে দৈনিক যাতায়াত করতে পারবে প্রায় ১ লাখ পর্যটক। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেশের প্রথম আইকনিক স্টেশনে থাকবে ‘লাগেজ স্টেশন’, অভ্যর্থনা কক্ষ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, শপিংমল, রেস্তোরাঁ। এক দিনেই ঘুরে যাওয়া যাবে পর্যটন শহর কক্সবাজার। পর্যটকরা চট্টগ্রাম থেকে আড়াই ঘণ্টা এবং ঢাকা থেকে সাত/সাড়ে সাত ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে কক্সবাজার। নির্ধারিত সময়ের আগেই পর্যটকবান্ধব দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে রেললাইন নির্মাণ। জানুয়ারি পর্যন্ত শেষ হয়েছে ৮৩ শতাংশ কাজ। দৃশ্যমান প্রায় ৭০ কিলোমিটার রেললাইন। প্রতিদিন কাজ করছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ শ্রমিক। ১০০ কিলোমিটার রেললাইন ব্যবস্থাপনায় ৭৫০ জনবলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পণ্য পরিবহনে থাকবে বিশেষ ‘রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস’। চট্টগ্রামের দোহাজারী এলাকার পুরাতন স্টেশনটির কাছেই তৈরি হচ্ছে নতুন রেল স্টেশন। এখানে একসঙ্গে কাজ করছেন প্রায় ৪০০ শ্রমিক। কেউ রেললাইন বাসাচ্ছে, কেউ লাইনের পাটাতন স্থাপন করছে, কেউ বসানোর পর লাইন শক্ত করার কাজ করছে, কেউ লোহা কাটছে, কেউ বা অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছে।
এভাবে নিয়মিতই চলছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের কর্মযজ্ঞ। কাজের গতি ঠিক থাকলে আগামী জুন-জুলাই মাসে পরীক্ষামূলক এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে চূড়ান্তভাবে রেল চালানোর পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের। ফলে পর্যটন শহর ছুঁবে রেললাইন। এটি নির্মাণ হলে সমুদ্রসৈকতের পর্যটকরা পাবেন স্বস্তিদায়ক যাতায়াত। বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক। উন্মোচিত হবে পর্যটন শহরের নতুন দিগন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটি হবে দেশের জন্য সরকারের উপহার।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান বলেন, রেললাইন নির্মাণটি সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ফলে দ্রুততার সঙ্গে কাজটি এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ। প্রায় ৭০ কিলোমিটার রেললাইন দৃশ্যমান, নয়টি স্টেশনের মধ্যে দুটির কাজ শেষ, পাঁচটির সৌন্দর্যবর্ধন ও দুটির অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। বর্তমানে একযোগে কক্সবাজার শহর, আইকনিক স্টেশন নির্মাণ, রামু, চকরিয়া ও দোহাজারী এলাকায় নির্মাণ কাজ চলছে। দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৪০০ শ্রমিক কাজ করছেন। তিনি বলেন, মোট ১০০ কিলোমিটার রেললাইন ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন পদে ৭৫০ জন জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ২০২১ সালের জুনে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এ কারণে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ হবে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়াও পুরো রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং।আইকনিক স্টেশন : কক্সবাজারের ঝিলংঝা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা ছয়তলা রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। মূল ভবনের সামনে খোলা মাঠে তৈরি হবে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা।
যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন। এই স্টেশনটিতে পর্যটকরা লাগেজ স্টেশনে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকত এবং দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে। এ ছাড়া ভবনটিতে থাকবে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, তারকা কামানের হোটেল রেস্তোরাঁ ও কনফারেন্স হল। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, রেলস্টেশনের ছয়তলা ভবনের কাজসহ ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে।