‘কায়াক’ শব্দটি বাংলাদেশে এখনও খুব প্রচলিত নয়। কায়াক দেখতে ছোট্ট ডিঙি নৌকার মতো।
ফাইবার, কাঠ ও পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি লম্বা সরু এই নৌকাকে কায়াক বলা হয়। কায়াক চালাতে হয় বৈঠা দিয়ে। কায়াক নামের নৌকায় ভেসে বেড়ানোর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার নাম ‘কায়াকিং’। বিদেশে সমুদ্র, নদীতে কায়াকিং প্রতিযোগিতাও হয়, যা আমাদের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচের মতোই।
রাজধানীর পাশেই পর্যটকদের একটু আনন্দ ও প্রশান্তি দিতেই সাভারের মীর আল-আমিন ও ইলিয়াস হোসেন নামের দুই বন্ধু কায়াকিং-এর ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে কায়াকিং করতে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের ইউসুফ নগর আবাসন সিটিতে চলে আসেন শত শত পর্যটক। রাজধানীর খুব কাছে হওয়ায় বিকেল হলেই পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
কথা হয় কায়াকিং রাইড ব্যবস্থাপনার উদ্যোক্তা মীর আল-আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি ও তার বন্ধু ইলিয়াস হোসাইন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্যুর প্যাকেজ করে থাকেন তারা। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে চট্টগ্রামের মহামায়া লেকের অধীনে কায়াকিং ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাভারে মাত্র ৪টি কায়াক বোর্ড দিয়ে কায়াকিং শুরু করে এখন ৮টি কায়াক বোর্ড রয়েছে তাদের।
আল-আমিন জানান, সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বিনামূল্যে বৃদ্ধদের কায়াকিংয়ের সুযোগ দিচ্ছেন তারা। এছাড়া এক একটি কায়াক বোর্ডে কায়াকিংয়ের জন্য জনপ্রতি ১৫ মিনিটের জন্য ৫০ টাকা, ৩০ মিনিটের জন্য ৮০ টাকা, ৬০ মিনিটের জন্য ১৫০ টাকা নিচ্ছেন। বিলের পানিতে স্রোত না থাকায় কায়াক উল্টে যাওয়ার ভয় নেই। তবে কায়াকিং করতে চাইলে দেওয়া হয় লাইফ জ্যাকেট। যারা সাঁতার জানেন না তাদের জন্য লাইফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক।
তিনি বলেন, গত এক বছরে ৪টি কায়াক থেকে আমাদের ৮টি কায়াক হয়েছে। সামনে আমাদের আরও ৪টি কায়াক বৃদ্ধি করার ইচ্ছা আছে। এছাড়া বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে একটি কায়াকিং পয়েন্ট করার কথা চলছে। রাজধানীবাসী আমাদের এখানে বেশি আসে। আমাদের কায়াকিং পয়েন্টে আসতে গিয়ে পর্যটকদের যোগাযোগের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। মানুষ তবুও আমাদের এখানে আসছে। সকাল-বিকেল ভিড় করছে। আমরাই মাঝে মধ্যে জায়গা দিতে পারি না।
আল-আমিন আর বলেন, আমাদের এখানে সেনাবাহিনীর একটি প্রজেক্ট রয়েছে ইউসুফ সিটি। এই প্রজেক্টের ভেতরে হরিণ আছে, আছে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট ও বসার মতো সুন্দর পরিবেশ। যারা দূর-দূরান্ত থেকে আসেন তারা আরাম করে বিশ্রাম নিতে পারছেন। জন্মদিন, গেট-টু-গেদার ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করার মতো ব্যবস্থাও আছে। সামনের শীতে ক্যাম্পিং করে থাকার মতো ব্যবস্থা করা হবে যদি উপজেলা প্রশাসন অনুমতি দেয়।
কেউ যদি কায়াকিং ব্যবসা করতে আগ্রহী হন তাদের উদ্দেশে আল-আমিন বলেন, আমরা মূলত চট্টগ্রামের মহামায়া লেকের অধীনে কায়াকিং ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কায়াক নিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের অর্ধেক অর্ধেক শেয়ার ছিল এক বছর। এখন সম্পূর্ণ ব্যবসা আমাদের দুই বন্ধুর মালিকানাধীন। কেউ যদি কায়াকিং ব্যবসা করতে চান তারা কায়াকিং ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে এরশাদুল ইসলাম নামে এক সরকারি কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন কায়াকিং পয়েন্টে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে তো সব সময় দূরে কোথাও যাওয়া যায় না। ঢাকার কাছে সাভারে হওয়ায় আসতে পেরেছি, একদিনে গিয়ে একদিনে ফেরত এসেছি। কায়াকিং করে পরিবারের সদস্যরা খুব খুশি। শুধু রাস্তাটা একটু খারাপ, এছাড়া সেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থাকা খাওয়াসহ ঘুরে বেড়ানো একদম সমস্যা হয় না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে সাভারের এই কায়াকিং পয়েন্ট। রিভিউসহ এই পয়েন্টটি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্লগ ভিডিও।
সাভারের কায়াকিং পয়েন্টে যেভাবে যাবেন
রাজধানীর গাবতলী থেকে সাভারমুখী যেকোনো বাসে উঠে নামতে হবে বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ডে। বলিয়ারপুর থেকে ইউসুফ নগরে যেতে রিকশায় ভাড়া নেবে ৪০-৬০ টাকা, আর ইজিবাইকে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ২০ টাকা। অথবা মিরপুর থেকে বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রাম হয়ে খুব দ্রুত সময়ের ভেতরে চলে আসা যাবে কায়াকিং পয়েন্টে। অন্যদিকে সাভার বা নবীনগর থেকে গাবতলীমুখী যেকোনো বাসে এসেও বলিয়ারপুর নামা যাবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যাওয়া যাবে কায়াকিং পয়েন্টে।