তিন দশক আগেকার কথা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঝ আকাশে বিমানের ভিতর বিয়ে করেছিলেন বাবা। জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল মাটি থেকে হাজার হাজার ফুট উপরে। দুই মনের মিলন হয়েছিল সেদিন আকাশকে সাক্ষী রেখে। আর সেই ধারাই বজায় রাখলেন মেয়েও বিয়েতেও। বিদেশে মহাধুমধামে মাঝ আকাশে ঠিক বাবার মতো করেই অতিথি সমাহারে চার হাত এক হল।
দুবাইয়ের ঠিকানা হলেও বিধি পপলে ভারতীয় বংশোদ্ভূদত। তার স্বামী হৃতেশ সাইনানিও তাই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী বিধির বাবা দিলীপ। ঠিক ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালে স্বপ্নের মতো বিয়ে হয়েছিল দিলীপের। উড়ন্ত বিমানের মধ্য়ে মধ্যে বিয়ে করেছিলেন বিধির মান সুনীতাকে।
বিয়ের জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে তারা ভাড়া করেছিলেন এ৩১০ বিমান। এদিকে তখন মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদের দিকে উড়ে যাচ্ছে বিমান। তার মধ্যে বিয়ে করেছিলেন দিলীপ-সুনীতা। অভিনব সেই বিয়ের নাম দেয়া হয়েছিল ‘হাওয়াই বন্ধন’। খাবারের দায়িত্বে ছিলেন বিখ্যাত তারকা শেফ সঞ্জীব কাপুর।
এবার বাবার ইচ্ছায় বিধি বিয়ে করলেন চলন্ত বিমানে। দুবাই থেকে বোয়িং ৭৪৭ বিমান বিয়ের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। বিমানের ভিতরেই বসল বিয়ের আসর। সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল বিয়ের মণ্ডপ থুড়ি বিমানের ভিতরটি। নিমন্ত্রিত ছিলেন ৩০০ অতিথি।
বিমানের আসনের ডিজাইন বদলে দেয়া হয়েছিল বিয়ের থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। অতিথিরা যাতে সকলেই ভালো ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে পান তার জন্য বিমানের ভিতর প্রতিটি সেকশনে লাগানো হয়েছিল প্রজেক্টর। নতুন বর হৃদেশ সৈনানি জানিয়েছেন স্কুলজীবনের প্রেমিকাকে মাঝ আকাশে বিয়ে করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। বাবা এবং শ্বশুরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
বিমানের ভিতর এই বিয়ে ছিল তাক লাগানোর মতো। কনের পরনে ছিল লাল লহেঙ্গা। আর পাত্রের পরনে ক্রিম রঙের শেরওয়ানি। লাল রঙের একটি বজরা করে বিমানবন্দরে বিমান ধরতে হাজির হন পাত্র। সঙ্গে তার জমকালো ‘বারাত’। পাত্র-পাত্রী সহ দুই পক্ষের সক্কলকে নিয়ে বিমানটি দুবাই প্রাইভেট টার্মিনাল থেকে উড়ল।
তিন-চার ঘণ্টার যাত্রা পথে অতিথিদের জন্য ছিল হরেক পদের খানাপিনার ব্যবস্থা। বিধির বাবার দিলীপের কথায়, ‘৩০ বছর আগে উড়ন্ত বিমানের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যানিংটি সম্পূর্ণ আমার বাবার (বিধির দাদু) ছিল। বাবার স্বপ্ন ছিল তিনিও একদিন ছেলের বিয়ের দেবেন বিমানের মধ্য়ে। আমরা এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করি। ১৯৯৪ সালে মাঝ আকাশেই বিয়ে হয়েছিল আমার। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল আমার সন্তানেরও বিয়েও মাঝ আকাশে বিমানের মধ্যেই দেব।’