ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকা নৌকা থেকে উদ্ধারের আগে নাইজার, আলজেরিয়া এবং লিবিয়া অতিক্রম করেন বিন্তো৷ লিবিয়ায় পাচারকারীরা তাকে আটকে রেখেছিলেন এবং তখন টাকার বিনিময়ে যে কেউ তাকে ‘স্ত্রী’ হিসেবে পেতে পারতেন৷
‘‘সেটা অনেকটা জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার মতো ব্যবস্থা ছিল৷ তিনি (বিন্তো) আমাকে বলেন যে, এভাবে একাধিক পুরুষের চেয়ে শুধু এক পুরুষের কাছে ধর্ষণের শিকার হওয়া ভালো ছিল,’’ বলেন এমএসএফ-এর যোগাযোগ কর্মকর্তা ক্যান্ডিডা লোবস৷
নিজের দেশ ক্যামেরুনে ১৫ ভাই-বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন বিন্তো৷ তার পরিবার কিছুটা আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাকে অল্প বয়সেই জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল৷ নিজের সন্তানদের যাতে একই ভাগ্য বরণ করতে না হয় সেজন্য তিনি তার ২০ বছর এবং ১৮ বছর বয়সি দুই কন্যাকে নিয়ে ক্যামেরুনত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন৷
গত ডিসেম্বরে বিন্তো এবং তার দুই কন্যাকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করে এমএসএফ-এর জিও ব্যারেন্টস জাহাজে রাখা হয়৷ লোবসের সঙ্গে সেখানেই দেখা হয় তাদের৷
ইটালির ফেরেরা শহরে সম্প্রতি ‘সাগরে নারীদের গল্প’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীতে বিন্তোর মতো নারীদের জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে৷
লোবস বলেন, ‘‘অধিকাংশ সময় এই নারীরা তাদের সন্তানদেরসহ ভ্রমণ করেন৷ তারা জোরপূর্বক বিয়ে, স্বামীর নির্যাতন এবং চরম দারিদ্রতা এড়াতে এমনটা করেন৷ এটা খাঁচার মতো৷ তারচেয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নেয়া বেশি ভালো৷’’
‘‘অধিকাংশ সময় এই নারীরা তাদের সন্তানদেরসহ ভ্রমণ করেন৷ তারা জোরপূর্বক বিয়ে, স্বামীর নির্যাতন এবং চরম দারিদ্রতা এড়াতে এমনটা করেন৷ এটা খাঁচার মতো৷ তারচেয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নেয়া বেশি ভালো৷’’
‘‘এই নারীদের গল্পগুলো দুঃখের, তবে এগুলো ক্ষমতায়ন এবং স্বাধীনতারও গল্প,’’ বলেন তিনি৷
৩২ বছর বয়সি ডেক্রিচেলকেও গত ডিসেম্বরে উদ্ধার করা হয়েছিল৷ তাকে তার স্বামী পিটিয়ে এতবার হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন যে, সংখ্যাটা আর মনে করতে পারছেন না এই নারী৷ এভাবে স্বামীর হাতে মার খেয়ে মরে যাওয়ার আগেই ডেক্রিচেলকে দেশ ছাড়তে বলেছিলেন তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু৷
ডেক্রিচেল আইভোরি কোস্টত্যাগ করে এক মরুভূমি পাড়ি দেয়ার সময় তার ছয় মাস বয়সি সন্তান মারা যায়৷ লোবস বলেন, ‘‘শিশুটিকে মরুভূমিতেই কবর দেন তিনি৷ এরপর তাকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন তিনি বলেন যে তার আর কিছু অবশিষ্ট নেই৷’’
অন্য নারী ফাতেমা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় লিবিয়া থেকে পালান৷ জিও ব্যারেন্টসের ডেকে সন্তান জন্ম দেন তিনি৷ জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল চার কেজি৷
‘‘লিবিয়ায় কিছু নারী সম্মতির ভিত্তিতে নয় এমন সম্পর্কের কারণেও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন৷ তবে কোনো নারী এই বিষয়ে আমাদেরকে না জানানো অবধি আমরা কিছু জানতে চাই না৷ কারণ আমরা তাদের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই না,’’ লোবস বলেন৷
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এর হিসেবে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট অবধি অনিয়মিত পথে সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালি প্রবেশ করা মানুষের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার৷ এদের মধ্যে দশ শতাংশের মতো নারী৷ তাদের অধিকাংশই টিউনিশিয়া হয়ে আইভোরি কোস্ট এবং গিনি থেকে এসেছেন৷