শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৪ অপরাহ্ন

ব্রিটেনে অভিবাসীদের জন্য কঠিন সময় আসছে

  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ব্রিটে‌নে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা কার্যকর ক‌রে আগামী বছর অভিযান শুরু হ‌তে পা‌রে। এমন আশঙ্কা কর‌ছেন দেশটির রাজ‌নৈ‌তিক ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে এমন পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে যাতে করে বৈধ কাগজপত্র না থাকা অভিবাসীদের কাজ ও বসবাসের সুযোগ কমে এসেছে, নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণকে তুষ্ট করতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ ও বিরোধী দল লেবার পার্টি অভিবাসনবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে ক‌রোনা মহামারির পর বাংলাদেশসহ বি‌ভিন্ন দেশ থে‌কে আসা ক‌য়েক লাখ অভিবাসীর জীবনে বড় ধর‌নের অনিশ্চয়তা নেমে আসতে পা‌রে।

ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও স্থানীয় বাংলাদেশি অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে  জানা গেছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে কাজের অনুমতি না থাকা অভিবাসীদের কেউ নিয়োগ দিলে ১৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার পাউন্ড জরিমানার আইন কার্যকর হবে। এতে করে অবৈধ অভিবাসীদের কাজের সুযোগ কমে যাবে। ব্রিটে‌নে ইন‌ডে‌ফি‌নিট লিভ টু রি‌মেই‌ন বা রেসিডেন্সির বৈধতা বর্তমানে পাঁচ বছ‌রে পাওয়া গেলেও ৫ জুনের এক সরকারি ঘোষণায় তা ৮ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৮ বছ‌রের প্রস্তাব কার্যকর হ‌লে বাড়তি এক্সটেনশন ও সেই এক্সটেনশন পর্যন্ত নিয়োগদাতার লাইসেন্স না থাক‌লে নতুন ক‌রে মেয়াদ বাড়া‌নো নি‌য়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে হ‌বে আবেদনকারীদের। বৈধ কাগজপত্রহীনদের ঘর ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও আরোপ করা হ‌য়ে‌ছে কড়াকড়ি। অভিযান চল‌ছে নির্দিষ্ট সংখ‌্যার চে‌য়ে বে‌শি সংখ‌্যায় বসবাস ক‌রেন এমন ভাড়া বাসা-বাড়িতে। এমনকি ভিসার মেয়াদ থাকার পরও নিজ দে‌শে ছু‌টিতে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থী‌দের বিমানবন্দর থে‌কে ফেরত পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটছে।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক নুরুর রহিম নোমান ব‌লেন, ব্রিটেনের আগামী নির্বাচনকে সাম‌নে রেখে প্রধান দলগু‌লো অভিবাসনবি‌রোধী নী‌তি‌কে সাম‌নে রেখে এগো‌চ্ছে। লেবার পার্টি বরাবরই অভিবাসীদের প্রতি সহানুভু‌তিশীল ছিল। কিন্তু এখন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের সমর্থিত দল কনজারভেটিভ পা‌র্টির সঙ্গে লেবার পা‌র্টির অভিবাসন নি‌য়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও প্রতিশ্রুতি তেমন আলাদা না।

তিনি আরও ব‌লেন, লেবার পার্টিতে বর্তমান শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেড্র ইউনিয়ন নেতাদের নীতিগত দূরত্ব বাড়ছে। দলের বামধারার এমপিদের প্রতি বৈরী মনোভাব, তাদেরকে গুরুত্বহীন করে রাখা প্রবণতা রয়েছে বর্তমান নেতার।

অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে ব্রিটিশ পুলিশ। ছবি: জিবি নিউজ

অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে ব্রিটিশ পুলিশ। ছবি: জিবি নিউজ

আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে লেবার পার্টি ক্রমাগত ডানপন্থি অবস্থান নিচ্ছে। জনমত জরিপে এগিয়ে থাকায় ইতোপূর্বে দেওয়া অনেক প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে কৌশলপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন দলটি নেতা।

অন্যদিকে অভিবাসনবি‌রোধী শ্বেতাঙ্গ ভোটার‌দের টান‌তে ও জনমত জ‌রি‌পে পিছিয়ে থাকায় নির্বাচ‌নে বড় পরাজয় এড়াতে অভিবাস‌নে সবচেয়ে বড় কড়াক‌ড়ি আরোপ কর‌তে চায় ক্ষমতাসীন কনজার‌ভে‌টিভ পা‌র্টি। আর  তা তারা করতে চায় অভিবাসী পরিবার থেকে উঠে ভারতীয় বং‌শোদ্ভুত ‌ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের হাত দি‌য়েই।

উল্লেখ্য, ব্রিটে‌নে বসবাস ও কাজের বৈধতা ছাড়াই পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ অনেক বছর ধরে রয়েছেন। অতীতে কয়েক দফা তাদের বৈধতা দেওয়ার  আশ্বাস  সরকারের পক্ষ থেকে  দেওয়া হলেও বরিসন জনসন থেকে শুরু করে ঋষি সুনাক পর্যন্ত কেউ-ই কার্যকর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

স‌ঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি বৈধ কাগজপত্র বিহীনভা‌বে ব্রিটেনে বসবাস কর‌ছেন। ব্রে‌ক্সিট পরবর্তী প‌রি‌স্থি‌তি‌তে তা‌দের বৈধতা দেওয়া আশ্বাস মিলেছিল। তখন অনেকে ধারণা ক‌রে‌ছি‌লেন, নতুন জনশক্তি না এনে পুর‌নো বৈধতাহীনদের বৈধতা দি‌লে অর্থনীতি লাভবান হ‌বে। তাদেরকে ব্রি‌টিশ অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত ক‌রে কর আদায় কর‌তে পারবে সরকার।

এ ব্যাপারে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সা‌বেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ বাংলা‌ ট্রিবিউনকে ব‌লেন, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা তো দূরের কথা নতুন  নতুন কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। কেয়ার ভিসাসহ বি‌ভিন্ন কা‌জের ভিসায় আসা হাজার হাজার মানুষ রয়েছেন বেকার অবস্থায়। সব মি‌লি‌য়ে গত এক দশকের মধ্যে ব্রিটে‌নে সবচেয়ে বড় দুঃসময় পার কর‌ছেন অভিবাসীসহ সাধারণ মানুষ।

ব্রিটেনের সমকালীন বিষয়াবলি ও রাজ‌নৈ‌তিক ঘটনাপ্রবা‌হের বিশ্লেষক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে ব‌লেন, অভিবাসন নি‌য়ে ব্রিটেনের সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্যে ধারাবা‌হিকতা ও সমন্ব‌য়ের অভাব প্রকট। এক সরকা‌রের সিদ্ধান্ত অন‌্য সরকা‌রের আমলে পাল্টে যাওয়ায় ভুক্ত‌ভোগী হচ্ছেন মানুষ। ব্রিটেনের আগামী নির্বাচনে অভিবাসনই হয়ে উঠবে ট্রাম্পকার্ড,  এতে কোনও সন্দেহ  নেই। রাজনীতিতে জনতুষ্টি মূল ইস্যু হ‌য়ে উঠবে। তাতে ক‌রে নিশানা হ‌তে পারেন ব্রিটে‌নে নতুন আসা অভিবাসীরা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com