শহুরে জীবন শুরু হয় বাস কিংবা গাড়িতে চেপে অফিসযাত্রার মাধ্যমে। অফিস ছুটির পর অনেক সময় বাদুড় ঝোলা হয়ে বাস-ট্রেনে ফিরতে হয় বাড়ি! ঢাকা শহরের কর্মজীবী মানুষের কথাই ভাবুন না; কত জ্যাম ঠেলে চলাফেরা করা যেন তাদের দৈনন্দিন রুটিন! অথচ, এমন এক শহর আছে যারা চলাফেরাই করেন বিমানে!
ভাবুন তো, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বিমান। বিমানগুলো কোনো সংস্থার নয়। ওখানে যারা বাস করেন, তাদেরই নিজস্ব বিমান। প্রাইভেট গাড়িতে করে যেমন অফিসে যাতায়াত করেন অনেকে, তেমনই বিমানে করে অফিস যান ওখানের বাসিন্দা। বিশ্বাস হচ্ছে না? মনে হচ্ছে পুরোটাই বানানো গল্প? আদতে কিন্তু তা নয়। সত্যিই এমন একটি এলাকার অস্তিত্ব রয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গ্রামেই এমন বাসিন্দারা রয়েছেন। তাদের যাতায়াতের জন্য বাড়ির সামনে দাঁড় করানো থাকে একটা করে প্রাইভেট বিমান। সেই বিমানে করেই তারা বাজারে যান, বেড়াতে যান, এমনকি অফিসেও যান।
ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যামেরন এয়ারপার্ক নামের এক এলাকায় গেলে এমন দৃশ্যই দেখা যাবে। এই জায়গাটি পুরোপুরি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। অনুমতি ছাড়া এখানে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ওখানকার কেউ বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ করলে তবেই সেখানে প্রবেশ করা যাবে। তবে এই ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বড় ইতিহাসও।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকার বেশ কয়েক জায়গায় এয়ারফিল্ড তৈরি করা হয়েছিল। সেই এয়ারফিল্ডগুলোই অপরিবর্তিত রাখা হয়। পরে সেই জায়গাগুলোকে রেসিডেন্সিয়াল এয়ার পার্কে পরিণত করা হয়েছে। তার ফলেই তৈরি হয় ক্যামেরন এয়ারপার্ক নামের এই এলাকা। অবসরপ্রাপ্ত মিলিটারি পাইলটদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে ওই এয়ারপার্ক। এরপর ধীরে ধীরে অনেকটাই বেড়েছে পাইলটদের সংখ্যা।
১৯৬৩ সালে এই শহরটি তৈরি হওয়ার পর সব মিলিয়ে ১২৪ জন এখানে থাকেন। ক্যামেরন এয়ারপার্কের সব বাসিন্দাদেরই বিমান ও হ্যাঙ্গার রয়েছে। এমনকি রাস্তাও ১০০ ফিট চওড়া সেখানে। বিমান যাতে কোনো বাধা ছাড়াই উড়তে পারে, তাই এই ব্যবস্থা। এছাড়াও ল্যান্ড করার সময় বাড়ির সামনে এসে যাতে নামা যায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এয়ারপোর্টে অবতরণেরও অনুমতি দেওয়া হয় ওই বিমানগুলোকে। এমনই আরেকটি এয়ারপার্ক হল স্প্রুস ক্রিক। সেখানে ৫ হাজার জন বাসিন্দা, ১৩০০ বাড়ি ও ৭০০ হ্যাঙ্গার। ফলে একেবারেই অন্যরকম জীবন উপভোগের সুযোগ পান তারা।