একসময় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকতো গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল। শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসতেন তারা। তবে ৫ আগস্টের পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে সমাধিস্থলে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার পর্যটন খাতসহ সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সমাধির তত্ত্বাববধানে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমাধির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধুর সমাধি ঘুরে দেখা যায়, সমাধিতে প্রবেশের তিনটি গেটই তালাবদ্ধ। গেটের পাহারায় নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কোনো সাধারণ মানুষকে। সমাধির বিভিন্ন সড়কে পড়ে আছে গাছের মরা পাতা। পথের টাইলসে জমেছে শ্যাওলা। বিশ্রামাগার ও সমাধির কক্ষের আসবাবপত্রে জমেছে ধুলা। সমাধির ফুল গাছগুলোও যেন প্রায় মৃত।
সমাধিতে দায়িত্ব পালন করা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও হাওয়া। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কল্যাণ ট্রাস্টের অধীন আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা দেখভাল করছেন সমাধিটি। তবে সমাধির মসজিদে এখনো রয়েছেন খতিব।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে সারাদিন সমাধিতে মানুষে ভরা থাকতো। এখন কেউই আসে না। সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী তারাও বর্তমানে সমাধির কাছে আসছেন না।’
মিজান শেখ নামের আরেকজন বলেন, ‘১৫ আগস্ট স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফুল দিতে এসেছিলেন। এরপর আর কাউকে সমাধিতে আসতে দেখা যায়নি। অনেকের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভয়ে কেউ এখানে আসছেন না। শেখ বাড়ির সদস্যরাও সমাধির গেট খুলছেন না। হয়তো তারাও হামলার ভয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করছেন না।’
সমাধির তৃতীয় গেটের মুদিদোকানি হাফিজ। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আমাদের ব্যবসা খুব ভালো ছিল। এখন ব্যবসায় একদমই ভাটা। কোনো দর্শনার্থী আসছে না। ব্যবসা করবো কার কাছে?’
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক বলেন, ‘সমাধি গণপূর্তের অধীনে ছিল। তারা রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। হয়তো সরকার পতনের পর তারা সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে বলে জেনেছি, তারাও সমাধির নিরাপত্তার জন্য যে বাহিনী মোতায়েন করেছিলেন, সেটি তুলে নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘সমাধির দায়িত্ব আমাদের (গণপূর্ত গোপালগঞ্জ) অধীনে ছিল। হাসিনা সরকার পতনের পর দায়িত্বে থাকা কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে। কিছু এখনো রয়েছেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তমানে গণপূর্ত পালন করছে না।’