তাহলে বন্ধুরা চলুন প্যারাগুয়ে সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১। ষোড়শ শতাব্দীতে স্পেন উপনিবেশ স্থাপনের আগ পর্যন্ত প্যারাগুয়েতে গুয়ারানি আদিবাসীদের বাস ছিল। দেশটি স্বাধীন হয় ১৮১১ সালে। এর পরও দীর্ঘদিন ধারাবাহিকভাবে স্বৈরশাসন চলতে থাকে।
১৮৬৪-৭০ সাল পর্যন্ত নানামুখী যুদ্ধের কবলে পড়ে দেশটি। এই যুদ্ধে দেশটির বহু মানুষ প্রাণ হারায়। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের কাছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমিও হারায় দেশটি। ১৯৯৩ সালে দেশটিতে প্রথমবারের মতো বহু দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়।
২। ৪ লাখ ৬ হাজার ৭৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭১ লাখ ৫৩ হাজার জন।
৩। দেশটির সিংহভাগ মানুষ রোমান ক্যাথলিক ধর্মের অর্থাৎ খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। দেশটির প্রায় ৮৯ শতাংশ মানুষ এই ধর্মে বিশ্বাসী।
৪। প্যারাগুয়ের সরকারী ভাষা হচ্ছে স্প্যানিশ এবং গুয়ারানি।
৫। প্যারাগুয়ের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর আসুনসিয়ন। শহরটি দেশটির প্রধান নদী প্যারাগুয়াই এর বাম তীরে অবস্থিত। ১১৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরটিতে প্রায় ৬ লাখ মানুষের বসবাস।
৬। দেশটিতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া বিরাজমান। সবচেয়ে গরম মাস হচ্ছে জানুয়ারি। এই সময় দেশটিতে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর আশেপাশে।
৭। বলিভিয়ার পাশাপাশি প্যারাগুয়ে দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র স্থলবেষ্টিত দেশ।
৮। দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম রেলপথ, অ্যাসুনসিওন-এনক্রেনসিওন ১৮৫৮ থেকে ১৮৬১ সালের মধ্যে এই প্যারাগুয়েতেই ব্রিটিশ প্রকৌশলীদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।
৯। সম্পূর্ণভাবে স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়া সত্ত্বেও প্যারাগুয়ের নেভি অর্থাৎ নৌবাহিনীর আকার আপনাকে অবাক করবেই। যদিও তারা তাদের এই বিশাল সংখ্যক জাহাজ কোথায় রাখে সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
১০। প্যারাগুয়ের মোট বিদ্যুৎশক্তির প্রায় ১০০ শতাংশই আসে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে। “ইতাইপু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র” এর প্রায় ৭৫ শতাংশ উৎপাদন করে। এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আবার ব্রাজিলের সাথে সহ-মালিকানাধীন।
১১। পারানা নদীর উপর অবস্থিত, এই ইতাইপু বাঁধটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম।
১২। দেশটি প্যারাগুয়াই নদী দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত এবং এটি দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী।
১৩। আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকরতম যুদ্ধগুলোর মধ্যে ১৮৬৪ থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত চলা প্যারাগুয়ান যুদ্ধকে অন্যতম ভয়ংকর যুদ্ধ মনে করা হয়। এই যুদ্ধে প্যারাগুয়ের প্রায় ৭৫% শতাংশ মানুষ মারা যায়। এবং দেশটিতে প্রতি ৫ জন নারীর জন্য মাত্র একজন করে পুরুষ অবশিষ্ট ছিল।
১৪। বিশ্বের মধ্যে মাথাপিছু চা পানের দিক দিয়ে প্যারাগুয়ের অবস্থান প্রথম।
১৫। বিবাহবিচ্ছেদ আবার কি? ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্যারাগুয়েতে ব্যাপারটি অবৈধ ছিল।
১৬। দেশটিতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ লিখতে এবং পড়তে পারে যা এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বেশি।
১৭। সয়া সস দেশটির প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য। সয়া সস উৎপাদনে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ষষ্ঠ।
১৮। কেনাবিস অর্থাৎ গাঁজা উৎপাদন দেশটির আরেকটি অন্যতম বড় ব্যবসা।
১৯। প্যারাগুয়ের জাতীয় খাবার হচ্ছে “সোপা প্যারাগুয়া”। এটি পেঁয়াজ, চিজ এবং ভুট্টার কেক সহযোগে তৈরি করা হয়।
২০। দেশটিতে কোন বাড়িতে বেড়াতে গেলে নক করার জন্য অবশ্যয় কোন ডোরবেল খুঁজতে যাবেন না। নিয়ম হচ্ছে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে হাততালি দেওয়া অথবা দরজাই টোকা দেওয়া।
২১। আপনি যদি বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোডেন্ট অর্থাৎ ক্যাপিবারা দেখতে চান তাহলে আপনাকে এই প্যারাগুয়েতেই যেতে হবে।
২২। প্যারাগুয়ানদের গড় আয়ু ৭১ বছর।
২৩। দেশটিতে দিনের প্রধান খাবার বিকালে খাওয়া হয়, তাই দেশটিতে কোনো লাঞ্চ টাইম নাই।
২৪। প্যারাগুয়েতে প্রায় ১০০০ টি ভিন্ন প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়, সেইসাথে দেশটিতে রয়েছে জাগুয়ার, কুমীরসহ নানা ধরণের প্রাণী।
২৫। প্যারাগুয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল এবং মাছ ধরা।
২৬। দেশটির সরকারী মুদ্রা গুয়ারানি।
২৭। ২০১৯ সালের এক হিসাবে প্যারাগুয়ের মোট জিডিপি প্রায় $৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৬ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার।
২৮। প্যারাগুয়ের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৫৯৫।
প্যারাগুয়ে দেশটির হৃত্পিণ্ড বলতে পারেন দেশটির প্রধান নদী রিও প্যারাগুয়াই নদীকে। যা পুরো দেশটিকেই পূর্ব ও পশ্চিম, এই দুইটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করে ফেলেছে। দেশটির মূল ভূখণ্ডের বেশিরভাগ অঞ্চলই শ্যামল সমভূমি, তবে দেশটির পূর্ব দিকে কিছু উঁচু পাহাড়ের দেখা মেলে। পর্যটন দেশটিতে খুবই ছোট একটি খাত তবে এটি ক্রমবর্ধমান। তবে প্যারাগুয়ের প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় দেশটিতে পর্যটনের হার দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে কম।